এমনই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস৷

Birbhum News: কাঞ্চনজঙ্ঘার এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে বীরভূমের সাঁইথিয়া ট্রেন দুর্ঘটনাকে

বীরভূম: বীরভূমের সাঁইথিয়া ট্রেন দুর্ঘটনা। সেই অভিশপ্ত দিনটি ছিল ২০১০-এর ১৯ জুলাই। গভীর রাতের এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে মানবিক মুখ ফুটে উঠেছিল সাঁইথিয়াবাসীর। দুর্ঘটনায় জখম যাত্রীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে রক্ত দিয়েছিলেন সাঁইথিয়ার বাসিন্দারা। ওই দিনের স্মৃতি মনে পড়লে আজও অনেকে আঁতকে ওঠেন। আজও মোমবাতি জ্বালিয়ে অভিশপ্ত ওই দিনটিকে স্মরণ করেন সাঁইথিয়া শহরবাসী। ওই একই স্মরণমঞ্চে কালকা মেল দুর্ঘটনা, করমন্ডল এক্সপ্রেস ও মুম্বই বিস্ফোরণে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

কী হয়েছিল ২০১০সালে ১৯ জুলাই রাতে? রাত তখন ২টো হবে। সাঁইথিয়ার চার নম্বর প্লাটফর্ম থেকে সবে ছেড়েছিল রাঁচিগামী ৩৪০৪ ডাউন বনাঞ্চল এক্সপ্রেস। ঠিক সেই সময় দ্রুত গতিতে আসা শিয়ালদহগামী ৩১৪৮ ডাউন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস সজোরে ধাক্কা মারে। এর ফলে মাটি থেকে প্রায় ২০ ফুট উঁচু রেলিং ছুঁয়ে ঝুলেছিল বনাঞ্চল এক্সপ্রেসের একটি কামরা। রাতেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৪৪। পরে সিউড়ি সদর হাসপাতাল, বর্ধমান ও কলকাতার হাসপাতালগুলিতে আরও ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বহু যাত্রী জখম হয়েছিলেন। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে রেল পুলিশ, এলাকার থানার পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত মিলিয়েছিলেন সঁইথিয়ার সব শ্রেণির মানুষ। সঙ্গে ছিলেন সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও। প্রয়োজনে অনেকে রক্তও দিয়েছিলেন সকাল হতে না হতেই সাঁইথিয়া স্টেশনে আনাগোনা শুরু হয়েছিল রেল কর্তাদের। ছুটে এসেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

তবে এটি দুর্ঘটনা না নাশকতা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই রেল পুলিশের হাওড়া এসআরপি রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় দুর্ঘটনার চার দিনের মাথায় তদন্তের ভার তুলে দিয়েছিলেন সিআইডির হাতে। তবে রেলের পক্ষ থেকে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল। তবে এটি নাশকতা নয়, দুর্ঘটনাতা এক বছরের মাথায় জানিয়েছে রেলওয়ে চিফ কমিশনার অফ সেফটি। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বর্ধমানের খানা ও তালিতের মধ্যে একটি খুঁটি উপড়ে লাইনে তার পড়ে যাওয়ায় বধর্মান সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে থমকে যায় সমস্ত ট্রেন। হাওড়াগামী বিশ্বভারতী ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার সাঁইথিয়ায়, শিয়ালদহগামী দার্জিলিং মেল বাতাসপুরে, চেন্নাইগামী গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ও কলকাতাগামী পদাতিক এক্সপ্রেস আমোদপুরে, ডাউন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস গদাধরপুরে আটকে পড়ে। এ ছাড়া, আরও বহু ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে ছিল। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হলেও রাত্রি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।ট্রেন এর মধ্যে থাকা সমস্ত যাত্রীদের স্টেশনে থাকা খাবার দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ South 24 Parganas News: বারুইপুরে কোল্ড স্টোরেজ ও ফুড প্রসেসিং ইউনিট! কথা রাখতে তৎপর সায়নী

বীরভূমের সাঁইথিয়ার এক বাসিন্দা প্রীতম দাস আমাদের জানান সোমবার ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানির কাছে জালাস গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট নির্মল গ্রামে যে ঘটনা ঘটে সেই ঘটনা যেনো আবার মনে করে দিল অভিশপ্ত ২০১০ সালের সাঁইথিয়ার রেল দুর্ঘটনার কথা। চোখের সামনে একাধিক মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণা অনুভব করেছিলেন সেদিন তিনি। মৃত্যুর পাশাপাশি একাধিক ট্রেন যাত্রী আহত হয়েছিলেন সেই দিন। সাঁইথিয়া তিন দুর্ঘটনার সেই কথা আজও শুনলে আটকে ওঠেন সাঁইথিয়ার বাসিন্দারা।

সৌভিক রায়