বীরভূম: করমন্ডল এক্সপ্রেস এর সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা আবার যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে সকলকে।হঠাৎ প্রথমে এক বিকট শব্দ। তার পরে ট্রেন লাইনে নজর পড়তেই চমকে উঠেছিলেন ওঁরা।সোমবার ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানির কাছে, জালাস গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট নির্মল জোতের বাসিন্দাদের অনেকেরই দিন শুরু হয় আঁতকে ওঠা দিয়ে।সময় তখন সকাল পৌনে ৯টা, কানফাটানো আওয়াজের পরে, তাঁরা দেখেন, মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপরে উঠে গিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের একটি কামরা! ধাক্কায় প্রায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে আর একটি।
যাত্রীদের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল গ্রাম জুড়ে। প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধার কাজ শুরু করেন। গ্রামবাসীরা বাড়ি থেকে জল, চাদর নিয়ে আসেন। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া একটি কামরার ভিতর থেকে যাত্রীদের বার করে আনা হয়। রেলে খবর যাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় এনডিআরএফ কর্মীদের। ট্রেন দুর্ঘটনার খবর চাউর হতেই আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও আসতে শুরু করেন।ধীরে ধীরে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। শিয়ালদা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাত্রি ১১টা২৪ মিনিট এ এসে দাঁড়ায়। নির্ধারিত সময়ের থেকে প্রায় ৯ ঘণ্টা দেরিতে এসে পৌঁছায় ট্রেন। সেই ট্রেনের যাত্রীরা জানায় তাদের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা।
রামপুরহাট পৌঁছে ট্রেন এ আগত এক যাত্রী প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান “চোখের পলকে ঘটনাগুলো ঘটে গেল।ভয় পেয়েছিলাম প্রচণ্ড।কোনও ভাবে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, ভয়াবহ চিত্র।আমাদের কয়েকটি কামরার পরেই ছিল অসংরক্ষিত কামরা, গার্ডের কামরা। সে সব দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। ভিতর থেকে ভয়ঙ্কর আর্তনাদ ভেসে আসছিল।অনেকে সেখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছেন।এলাকার মানুষও দৌড়ে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। কত জন যে জখম, কত জন মারা গেলেন, বুঝতে পারছিলাম না! শুধু মনে হচ্ছিল, অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে”। সব মিলিয়ে কার্যত নতুন জীবন নিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি।
যদিও কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার জেরে রামপুরহাট ও সাঁইথিয়া স্টেশনে রেলের পক্ষ থেকে ‘হেল্প ডেস্ক’ খোলা হয়েছিল।ওই হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যে সমস্ত যাত্রী রামপুরহাট ও সাঁইথিয়া স্টেশনে নামবেন, তাঁদের সাহায্য করার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।যাত্রীদের তালিকা রেলকর্মীদের দেওয়া ছিল। স্টেশনে আসা যাত্রীদের আত্মীয় পরিজনদের রেলকর্মীরা হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে সাহায্য করেছেন।রামপুরহাট স্টেশনে টিকিট কালেক্টরদের ঘরের সামনে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়।হেল্প ডেস্কে রেলপুলিশের কর্মীরা যাত্রীদের সাহায্যর জন্য তৎপর ছিলেন।রেলপুলিশের সাঁইথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস থেকে কত জন যাত্রী নামবেন, তাঁদের তালিকা রেলকর্মীদের কাছে দেওয়া হয়েছিল।ওই তালিকা দেখে যাত্রীদের সমস্ত রকম সাহায্য করা হয়।
সৌভিক রায়