সুরজিৎ দে, জলপাইগুড়ি: শনিবার মনসাপুজো! জানেন আর পাঁচটি জায়গার তুলনায় খানিক অন্যরকম হয় এখানকার পুজো। নিরামিষ নয় বরং পাঁচ রকম মাছের পদ দিয়ে ভোগ নিবেদন দেওয়া হয় মা মনসাকে! ভাবছেন কোথায়? এ হল জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যবাহী বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ীর মনসাপুজো। এর ইতিহাস প্রচুর, রয়েছে নানাবিধ বিশেষত্ব!
সালটা ১৫০৯! জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়িতে শুরু হয়েছিল এই পুজো। আজও সুষ্ঠুভাবে সমস্ত নিয়মনীতি মেনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে চলছে জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির মনসাপুজো। এ বার এই পুজো ৫১৫ বছরে পদার্পণ করল। এই পুজোর সঙ্গে যে শুধু ইতিহাস জড়িয়ে আছে, তা নয়, রয়েছে বিশেষত্বও।
আর পাঁচ জায়গার সঙ্গে বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির মনসাপুজোর পার্থক্য আছে বলে জানান রাজ পরিবারের সদস্যরা। এবার প্রশ্ন, আর পাঁচটি পুজো থেকে কেন আলাদা এই পুজো ? রাজবাড়ির সদস্যদের কথায়, রাজবাড়িতে মা অষ্টমূর্তিতে পুজিত হন। রয়েছে অষ্টনাগের মূর্তি। বেহুলা, লখিন্দর, গোদা-গোদানির মূর্তিও আছে। আর সেই ঐতিহ্যবাহী পুজোর সাক্ষী থাকতে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, অসম, বিহার থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন এখানে।
আরও পড়ুন : শনিবার শ্রাবণ সংক্রান্তিতে মনসাপুজো! সর্পদেবীকে দিন এই লাল ফুল, ৭ পাতা, এই ২ জিনিস দিলেই ছারখার সংসার
সেইসঙ্গে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে উত্তরবঙ্গের প্রাচীন বিষহরির গান এবং মেলাও। অনেকের দাবি, বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পুজোয় মূর্তির যে চালচিত্র ব্যবহার করা হয়, তাতে মনসামঙ্গলের রীতিনীতির স্পষ্ট ছাপ আছে। বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে যে মূর্তিতে পুজো করা হয়, সেরকম উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই বলে দাবি করেছেন অনেকে। পুজোর রীতিনীতিও অন্য জায়গার থেকে আলাদা।
পুজোর তিনদিন ভিন্ন রকমের ভোগ তৈরি করা হয়। পুজো শুরুর দিনে ভোগ হিসেবে থাকে সাদা ভাত। দ্বিতীয় দিনে খিচুড়ি তৈরি করা হয়। শেষদিনে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় মিষ্টি। সেইসঙ্গে ভোগে পাঁচ ধরনের মাছও (ইলিশ, বোয়াল, চিতল, শোল এবং পুঁটি) থাকে। ঐতিহ্যবাহী সেই পুজোর পাশাপাশি বৈকুণ্ঠপুরের রাজবাড়িতে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল প্রাচীন বিষহরির গান। পুজোর তিনদিন সেই গান চলে। ভক্তদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।