মুর্শিদাবাদ: বাংলা, বিহার ও ওড়িশায় শেষ স্বাধীন নবাব মীর্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলার সমাধি আজও রয়েছে মুর্শিদাবাদে। ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত খোশবাগে সিরাজউদ্দৌলার শহীদ বেদী থাকলেও পর্যটকদের সংখ্যা নেহাতই কম সেখানে। মোট ৩৪জনের কবর আছে সেখানে যারা সকলেই সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের।
সিরাজউদ্দৌলা তাঁর দাদু নবাব আলীবর্দী খাঁ এর কাছ থেকে মাত্র ২৩ বছর বয়সে বাংলার নবাবের ক্ষমতা অর্জন করেন ১৭৫৬ সালে। তার সেনাপতি মীরজাফর, রায়দুর্লভ, বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন।
রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। পলাশির যুদ্ধে চরম পরাজয় ও গ্রেফতারির পর ১৭৫৭ সালে মীরজাফরের পুত্র মীর সাদিক আলি খাঁ মীরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ কারাগারেই সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর নবাবের রক্তাক্ত দেহ হাতির পিঠে করে মুর্শিদাবাদ শহর প্রদক্ষিণ করানো হয়। ১৭৩৩ সালে বিহারে জন্ম নেওয়া সিরাজউদ্দৌলার খুনি মুহাম্মদী বেগকে লালনপালন করেন আলীবর্দী খাঁর স্ত্রী শরফুন্নেসা। তিনিই নবাবকে খুন করেন।
মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় ২৩ জুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধে পরাজিত হন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। পশ্চিমবঙ্গের পলাশী প্রান্তরে আম্রকাননে নবাবের সেনাপতি মীরজাফর আলি খান, রাজবল্লভ, শওকত জঙদের মুনাফিকির কারণে নবাবের বাহিনীর পরাজয় ঘটে। এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। বাংলা-সহ ভারত উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামে বর্বর লুটেরা ইংরেজ শক্তির অভ্যূদয় ঘটে।
যাঁর নামে চলে নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদ হাজারদুয়ারী-সহ মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যটন কেন্দ্র, সেই সিরাজউদ্দৌলাকে ভুলে না গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষ মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন ঠিকই। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকার কারণে গঙ্গার ওপারে খোশবাগে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হয় না তেমন ভাবে। স্থানীয় টোটো চালক বা টাঙ্গা চালক অনেকেই নিয়ে যেতে অনিহা প্রকাশ করেন। কিন্তু বর্তমানে কিছু সংখ্যক পর্যটকদের দেখা মেলে এখানেও। তবে রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হলে আগামী দিনে আরও পর্যটক ওই এলাকায় আসবে বলে দাবি গাইডদের।
কৌশিক অধিকারী