বাগদায় চন্দন মন্ডলের বাড়ি

North 24 Parganas News: ৩৫ শিক্ষক চাকরিহারা…! ‘সৎ রঞ্জনের’ এলাকায় কারও ফোন সুইচড অফ, কারও দরজায় তালা! শ্মশানের নিস্তব্ধতা গ্রাম জুড়ে

উত্তর ২৪ পরগনা: তবে কি মুছে গেল চন্দনের ফোঁটা! চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম রয়েছে বাগদার একাধিক শিক্ষক শিক্ষিকার। এই বাগদা ব্লকের মামাভাগ্নে গ্রামের চন্দন মণ্ডলের হাত ধরেই শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন অনেকে। ‘সৎ রঞ্জনের’ কৃপায় চাকরি মিলেছিল বহু অকৃতকার্য চাকরিপ্রার্থীদেরও। বদলে দিতে হয়েছিল মোটা অঙ্কের টাকা।

এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে আদালতের রায়ের পর গোটা গ্রামে যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা আজ। বিশেষ করে বাগদা ব্লকের মামাভাগ্নে, চড়ুইগাছি, রামনগর, কুরুলিয়া এলাকা জুরেই পড়েছে এর প্রভাব। স্থানীয় বয়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা গোপাল মণ্ডলের দাবি, এই চারটি গ্রামেই চাকরি গিয়েছে প্রায় ৩৫ জনের। গোটা এলাকা যেন এখনও থমথমে। চাকরি হারিয়ে এই এলাকার শিক্ষক শিক্ষিকারা একপ্রকার নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন বলেই যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাকরি মেলার পরই, কেউ ঋণ নিয়ে বাড়ি করছিলেন। কেউ লোন করে গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে রীতিমত আকাশ ভেঙে পড়েছে টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জীবনে।

গ্রামে ঘুরে জানা গেল, চাকরি হারিয়ে কারও ফোন সুইচ অফ। কারও বাড়িতে ঝুলছে তালা। গ্রামের মানুষজনও সেভাবে মুখ খুলছেন না কেউই। স্থানীয় এক মহিলা জানালেন, এলাকার অনেকেরই চাকরি চলে গিয়েছে। তারা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন। ঘরে চুপচাপ বসে আছেন। কেউ বিয়ে করেছে, কারও ছোট বাচ্চা। কী ভাবে সংসার চলবে কেউ জানেন না।

চন্দন মণ্ডলের হাত ধরেই মিলেছিল চাকরি। তারপর থেকেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসায় এমনিতেই ভয় ছিল তাঁরা। সিবিআই এর হাতে চন্দন মণ্ডল গ্রেফতার হলেও, পাওয়া চাকরি যে এভাবে হারাতে হবে তা হয়তো ভাবতেই পারেনি এই শিক্ষকরা।

চাকরি চলে গিয়েছে সন্তোষ কুমার মণ্ডলের ভাইপো প্রণয় কুমার মণ্ডলের। তিনি পাঁচপোতা এলাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সন্তোষ বাবু জানান, “অনেকেই চন্দনকে টাকা দিয়ে চাকরি পেলেও, সবার চাকরি অবৈধ নয়। অনেকেই যোগ্যতার ভিত্তিতে পেয়েছে। আমার ভাইপো পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিল।” চাকরি পাওয়ার তালিকায় যোগ্যরা যেমন আছেন, তেমন এই কয়েক গ্রামের অযোগ্যরাও রয়েছেন। চন্দন মণ্ডলের বাড়ির কাছেই বাড়ি হারান বিশ্বাসের। তিনি বলেন, “এখানে যাদের চাকরি গিয়েছে তাঁরা চন্দন মণ্ডলকে টাকা দিয়ে অবৈধভাবে চাকরিতে ঢুকেছিল। অনেকে সাদাখাতা জমা দিয়েও চাকরি পেয়েছিল। বয়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা গোপাল মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূলের বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মেয়ে, প্রাক্তন সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে-সহ অনেকেরই চাকরি গিয়েছে। চন্দন গ্রেফতার হলেও তার ডান হাত অভিজিৎ পোদ্দার এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কী করে! এখন রাজ্যের নানা প্রান্তের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি এই গ্রামের চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারাও তাকিয়ে আদালতের দিকে। শেষ অব্দি কী হয় এখন সেদিকেই নজর সকলের।

Rudra Narayan Roy