শ্যামলেশ্বর শিব মন্দির 

Old Temple History: হাজার বছরের পুরানো মন্দির, এলে ভক্তি বাড়বে, স্বাদ মিলবে ইতিহাসের, বাংলার কোথায়

পশ্চিম মেদিনীপুর: বাংলার প্রাচীন মন্দির এক একটি ইতিহাস ক্ষেত্র। এ বাংলার আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে নানান লুকায়ত সংস্কৃতি। মানুষের ভক্তি এবং বিশ্বাসে বহু প্রাচীনকাল থেকে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একাধিক মন্দির। বাংলা ওড়িশা সীমান্ত এলাকায় মন্দিরের শৈলী এবং পুরাকীর্তি গ্রামীণ ইতিহাসের এক একটি জীবন্ত দলিল। বাংলা ওড়িশা সীমান্ত এলাকা দাঁতন। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে আছে বহু পুরাকীর্তি। ইতিহাসের নানা নিদর্শন আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ওড়িশা সীমান্ত এলাকায় দাঁতনে আছে হাজার বছরের প্রাচীন শিব মন্দির। পাথরের তৈরি এই মন্দিরে রয়েছে ইতিহাসের নানা নিদর্শন। অতীতের সাক্ষ বয়ে চলেছে দাঁতনের মন্দিরবাজার এলাকায় অবস্থিত শ্যামলেশ্বর মন্দির। এই মন্দির ঘিরে নানান ইতিহাস থাকলেও মানুষের ভক্তি এবং বিশ্বাসে প্রতিদিন বহু মানুষের ভিড় জমে এখানে।

উঁচু ভিত্তিবেদির উপর মন্দিরটি অবস্থিত। আনুমানিক হাজার বছরের আগে নির্মিত হয়েছিল বলেই গবেষকদের দাবি। মন্দিরের স্থাপত্যটি বেশ আকর্ষণীয়। প্যাগোডার আদলের মন্দিরটির প্রাচীনত্বের নানা ছাপ। প্রবেশপথের সামনে কষ্টিপাথরে নির্মিত বৃষভ মূর্তিটি ভাস্কর্যের দিক থেকে মূল্যবান। মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অগাধ কিংবদন্তি। প্রাচীন মন্দিরের গঠনশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে। বিশাল আকার জায়গা জুড়ে থাকা সহস্ত্র বছর পুরানো এই মন্দিরে এলে আলাদাই প্রশান্তি মিলবে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠালিপি না থাকায়, মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা কে করেছিলেন, তা সঠিক জানা যায় না। জানা যায় না প্রতিষ্ঠার সময়কালও। গবেষকদের দাবি সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।

আরও পড়ুনSweets: সবজি নাকি মিষ্টি? রসে টসটসে, মুখে দিলেই তৃপ্তি! অমৃত সমান এই মিষ্টি কী বলুন তো, কীভাবে এল বাংলার মাটিতে? জানুন লম্বা ইতিহাস

অন্যদের অভিমত, ওড়িশার সূর্যবংশীয় নৃপতি গজপতি মুকুন্দদেব (শাসনকাল ১৫৫৯ – ১৫৬৮) ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরের চারপাশ মাকড়া পাথরের প্রায় দশ ফুটের উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ভেতরের অঙ্গনটির আয়তন ১৩,৮৮৩ বর্গফুট। তার ভিতর ফুট চারেক উঁচু ভিত্তির উপর মন্দিরটি স্থাপিত। ওড়িশী পীঢ়-রীতির আদলে তৈরি মন্দির। মন্দিরের অলঙ্করণ হিসাবে দেখা যায় মূল প্রবেশপথের সামনে একটি নন্দীমূর্তি। ইতিহাসবিদদের মতে, কালাপাহাড়ের আঘাতে ভগ্ন এই নন্দী মূর্তি। মন্দিরের উত্তরদিকে পাথরে খোদিত একটি মকরমূর্তি আছে। সামনের দ্বারপথের মাথায় ভগবান বিষ্ণুর অনন্তশয্যা ফলক আছে। এই মন্দিরে প্রতিদিন বহু ভক্ত ভিড় জমান। তবে বছরে বেশ কিছু পালনীয় দিনে বেশি ভিড় হয়।

প্রতিদিন চলে পুজো পাঠ। শ্রাবণের সোমবারেও বেশ ভিড় হয় শ্যামলেশ্বর মন্দিরে।তবে মন্দির ঘিরে রয়েছে নানান অজানা ইতিহাস। বাংলা ওড়িশা সীমানায় পাঠানদের আক্রমণে কালাপাহাড় একাধিক দেব দেবীর মন্দিরে আক্রমণ চালায়। কালাপাহাড়ের আক্রমণে ভেঙে যায় মন্দিরের সামনে থাকা বৃষভ মূর্তির একাংশ। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে এ পর্যন্ত কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও মন্দিরের প্রাচীনত্ব ভক্তদের বেশি করে আকৃষ্ট করে। শুধু তাই নয় ভক্তি এবং বিশ্বাসে ধীরে ধীরে ব্যাপ্তি ঘটেছে এই মন্দিরের।

রঞ্জন চন্দ