দেবাশিস হালদার

RG Kar Protest: অভাবী ঘর থেকে ‘মেধাবী’ আন্দোলনের মুখ, একরোখা দেবাশিস এখন হালদার পরিবারের ‘সুপারস্টার’

হুগলি: আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় এক মাসের উপর আন্দোলনের পথে জুনিয়র চিকিৎসকরা। আন্দোলনে সামিল হয়ে কখন যেন সেই আন্দোলনে প্রথম সারিতে এনে দিয়েছে, কিছু জুনিয়র ডাক্তারদের।

যাঁদের প্রতিদিন ন্যায় বিচার চেয়ে গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছে খবরের শিরোনামে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন হুগলির বলাগরের খামারগাছির বাসিন্দা দেবাশিস হালদার। ছেলের আন্দোলনকে গ্রামের বাড়িতে বসেই সমর্থন করছেন তাঁর গোটা পরিবারও। ন্যায় বিচারের পথে দেবাশিসের মা-বাবা পিসি সকলে।

ছোট থেকেই দেবাশিস ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। ২০০৯ মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে অষ্টম হয়েছিলেন দেবাশিস। ২০১১-তে উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ স্থল অর্জন করেন। এরপর কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে সেখানেই মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অ্যনাস্হসিয়া বিভাগে কর্মরত রয়েছেন।

আরও পড়ুন: চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে কী হবে জানেন? শরীরের এই পরিবর্তনগুলো শুনলে চমকাবেন! জানুন ডাক্তারের কথা

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকা আবৃতি এইসবের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ। মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাটক মঞ্চস্থ করাতে তিনি ছিলেন পারদর্শী। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রিয়েলিটি শো দাদাগিরির মঞ্চে গিয়েও সেখান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন দেবাশিস। সেই ছেলেই এখন গোটা দেশের কাছে চিকিৎসকদের আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী মুখ। আর ছেলের এই আন্দোলনে গর্বিত তাঁর বাবা-মা।

আরও পড়ুন: ফের নিম্নচাপের চোখরাঙানিতে বৃষ্টির আশঙ্কা বাংলাজুড়ে, পুজোতেও ঝড়-জল! আবহাওয়ার বড় খবর

কখনও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করা আবার বৈঠক শেষে বেরিয়েই তীব্র আক্রমণ করা। ধরনা মঞ্চে মাইক হাতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে স্লোগান দেওয়া– সব কিছুতেই তিনি থাকতেন আন্দোলনের প্রথম সারিতে। আর তাঁর এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে তাঁর পরিবারও। গত ছয় মাস আগে বিয়ে হয় দেবাশিসের। তাঁর স্ত্রী তিনিও জুনিয়র চিকিৎসক। স্বামীর সঙ্গে হাতে হাত রেখে এই আন্দোলনের সঙ্গে সামিল হয়েছেন তিনিও।

বর্তমানে দেবাশিসের গ্রামের বাড়িতে থাকেন মা অনিমা, বাবা ক্ষিতীশ ও পিসি মীরা হালদার। ছোটবেলায় দেবাশিসকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া থেকে পড়াশোনার সব দায়িত্ব সামলাতে তাঁর পিসি। বাবা সামান্য একটি গুমটি দোকান চালিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছেন। পরে গ্রুপ ডি পদে পি ডব্লিউ ডি-তে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। কামারপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তাঁর স্কুল শুরু হয়।
ছেলের কথা বলতে গিয়ে আবেগে চোখের জল চলে আসে তাঁর মায়ের।

আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে দেবাশিসের মা অনিমা বলেন , ছেলে ন্যায়ের জন্য আন্দোলন করছে এটা আমাদের খুব ভাল লাগছে। ছোট থেকে প্রতিবাদী না হলেও কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিত না। সব সময় সত্যি কথা বলত। বেশিরভাগ সময়টা পড়াশোনার মধ্যে দিয়েই কাটত তাঁর। ছেলের সঙ্গে খুব একটা বেশি কথা হয় না। তবে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় লাগে, আবার এটা ভেবে সাহস জাগে সিনিয়ার ডাক্তাররা তাঁদের পাশে রয়েছে। তরুণী চিকিৎসককে যেভাবে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে একজন মা হিসাবে তার ন্যায্য বিচার চাই।

পিসি মীরা হালদার বলেন, খুব মেধাবী ছাত্র, একবার বলতেই খুব সহজেই বুঝে নিত যে কোন পড়া। ছোট থেকে আমার কাছে পড়াশোনা শিখেছে। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় নিজে রুটিন করে পড়াশোনা করত। এখন তাঁর এই আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি।

বাবা ক্ষিতীশ হালদার বলেন, ‘আন্দোলন এত প্রসার হবে তা ভাবতে পারিনি। আজ গোটা বিশ্বে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে এই আন্দোলনটা করছে তাতে আমি গর্বিত। ধরনা মঞ্চে আমরাও গিয়েছিলাম, সাধারণ মানুষ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটা দেখে আমার আরও বেশি ভাল লেগেছে। তাঁদের এই আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক রঙ নেই। তাঁরা মেরুদণ্ড সোজা রেখে আন্দোলন করছে। আর তাঁদের এই আন্দোলনকে আমি কুর্নিশ জানাই। আগামী দিনে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে ছেলের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় চারপাশের পরিবেশ দেখেই সে হয়তো এতটা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। এর আগেও একবার এক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেখানেও সাফল্য পেয়েছিল। এই আন্দোলনেও তাঁরা সফল হবে এটাই কামনা করি।’

রাহী হালদার