কোচবিহার: সম্রাট ঔরঙ্গজেব তখন দিল্লির মসনদে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। দিল্লির বাদশাহ’র জন্য বাংলার নবাব অনেক ভাবনাচিন্তা করে উপহার হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন রূপোলি বেতের শীতলপাটি। জানা যায়, মুর্শিদকুলি খাঁ’র এই উপহার মনে ধরেছিল ঔরঙ্গজেবের। তারপর থেকে তিনি নাকি আমৃত্যু ওই শীতলপাটি পেতেই নমাজ আদায় করতেন। তবে শুধুই মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব নয়, ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়াও শীতলপাটির প্রেমে পড়েছিলেন।
সাধারণ শীতলপাটি নিয়ে রাজা-বাদশাহোদের এই আগ্রহের আসল কারণ হল, গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে শীতলপাটি পেতে শুয়ে পড়লে দু’দণ্ড আরামের ঘুম খুব সহজেই হয়। তবে কালের নিয়মে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা কমেছে শীতলপাটির। কিন্তু এর কার্যকারিতা হারিয়ে যায়নি। কোচবিহারে শীতলপাটির তৈরি করার বেশ কিছু শিল্পী রয়েছেন। ধলুয়াবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন এই কারিগররা। এক শীতলপাটি ব্যবসায়ী মনীন্দ্র চন্দ্র দে জানান, এই পাটি তৈরিতে শুধু দক্ষতাই নয়, প্রয়োজন প্রচুর ধৈর্যের। এক একটি শীতলপাটি তৈরি করতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে।
আরও পড়ুন: বখতিয়ার খলজির লুণ্ঠনের চিহ্ন থেকে হোসেন সাহেবের কাছারি, সব থেকেও পর্যটনে নেই এই জেলা
আরেক কারিগর হরিপদ দাস জানান, শীতলপাটি তৈরির জন্য প্রথমে প্রয়োজন কাঁচা বেত গাছের ডাল। সেই ডাল থেকে কাঁচা অবস্থাতেই ছাল ছাড়িয়ে নিতে হয়। তারপর সেই ছাল শুকিয়ে পাটি বোনা হয়। অনেকক্ষেত্রে সেই ডাল সেদ্ধ করে শুকোতে হয় সাদা হওয়া পর্যন্ত। তাহলে পাটির গুণগত মান অনেকটাই ভাল হয়।
শীতলপাটি তৈরির জন্য কারিগরদের বিপুল পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সেই অনুপাতে আয় হয় না। সেই কারণেই নতুন প্রজন্ম আর এই শিল্পের দিকে ঝুঁকছে না। এক একটি পাটি তৈরি করতে খরচ হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তা বাজারে পাইকারি বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দামে। এক-একটি পাটি থেকে কারিগরদের লাভ থাকে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে শীতলপাটি তৈরি করার উপযুক্ত বেত সবসময় পাওয়া যায় না। এদিকে অন্য সমস্ত কিছুর দাম বাড়লেও চলতি বছর শীতলপাটির দাম বাড়েনি। ফলে গরম বাড়তেই শীতলপাটি যথেষ্ট বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কারিগরদের আয় হচ্ছে না তেমন একটা।
সার্থক পণ্ডিত