হাওড়া: বিনা খরচেই সিল্কি এবং সতেজ চুল! চুল ঠিক রাখতে ভুরি ভুরি টাকা বাঁচাতে পারে এই বাংলার কয়েকটা সাধারণ গাছ। কথায় রয়েছে কেশই নারীর বেশ। সেদিক থেকে মাথায় চুল রাখতে এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে নিরলস পরিশ্রম তো রয়েছে। বর্তমান সময়ে চুল চর্চায় নারীদের পুরুষও পিছিয়ে নেই। চুলের নানা সমস্যা চুল ওঠা, রক্ষ চুল, টাকপড়া বা চুল ভেঙে যাওয়ার মত নানা সমস্যা দেখা দেয় দারুন ভাবে। এই সমস্যা পুরুষ কিংবা মহিলার মাথা ব্যাথার কারণ।
বর্তমানে গ্রাম বা শহরের মানুষ চুল ঠিক রাখতে চিন্তিত। সেদিক থেকে আবার অনেকই চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে দারুন যত্নবান। চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে নামীদামি কোম্পানির তেল শ্যাম্পু কন্ডিশনার ব্যবহার করছেন নিয়ম মেনে। এতে উপকৃত হলেও ভূরি ভূরি টাকা খরচ। তাতেই যেন এক শ্রেণির মানুষ হাঁপিয়ে পড়ছে। সেই দিক থেকে গ্রাম বাংলার বহু গাছ পাতা রয়েছে। যাদের মধ্যে দারুন ভেষজ গুণ। সেই সব গাছ পাতার ব্যবহার জানলে গাটির টাকা খরচ না করেই উপকার পাওয়া যেতে পারে। আবার এমন কিছু গাছ পাতা রয়েছে যেগুলি হাতের কাছে অথচ উপকারী গুণ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের অজানা।
আরও পড়ুনঃ মশলা চা নিশ্চই খান? কোন কোন মশলা দিলে মিলবে সুফল? জানুন কখন কীভাবে খাবেন…
চুলের জন্য উপকারী জবা গাছ, কারি পাতার মত বহু গাছ। তবে ভৃঙ্গরাজ ও কেশুতি পাতার মধ্যে রয়েছে অসম্ভব গুণ। গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট পতিত জমি এবং চাষাবাদী জমির পার্শ্ববর্তীতে অনাদরে এই গাছ বেড়ে ওঠে। এই গাছ খুব সহজ উপায়ে ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ডাক্তার সৌরেন্দু শেখার বিশ্বাস জানান, ভৃঙ্গরাজের রস চুলের গোড়ায় মাখলে চুল কালো হয় এবং গোরা শক্ত হয়। সহজ উপায় ভৃঙ্গরাজ ও কেশুতি গাছের পাতা ছায়ায় শুকিয়ে নারকেল তেলে মিশিয়ে কয়েকদিন রাখার পর ছেকে চুলে মাখলে দারুন উপকার। এক কথায় চুলের উপকারে কেশুতি ও ভৃঙ্গরাজের জুড়ি মেলা ভার। এই পাতা চুল ওঠা বন্ধ করতে সাহায্য করে। কম বয়সে চুল সাদা হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়।
রাকেশ মাইতি
কলকাতা: চুলের জন্য জবা ফুল খুবই উপকারী। চুল পড়া বা অকালপক্কতা, খুশকি, শুষ্কতা, ডগাচেরা বা ভেঙে পড়ার মতো সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান রয়েছে জবা ফুলে।
দীর্ঘদিন ধরে আয়ুর্বেদে জবা ফুলের পাপড়ি এবং পাতা ব্যবহার করা হয়। এতে চুল গোড়ার স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পায়। এমনকী যাঁদের টাক পড়ে গিয়েছে, তাঁদেরও উপকার হতে পারে।
জবা ফুলের উপকারিতা:
১. জবা ফুলে অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। কেরাটিন এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কেরাটিন চুল ভেঙে পড়ার সমস্যা কমায়। অনেকেই বহু অর্থ ব্যয় করে কেরাটিন প্রয়োগ করেন। কিন্তু সামান্য খরচে জবা ফুল লাগালেও প্রায় একই উপকার পাওয়া যায়। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
আরও পড়ুন: উঠে দাঁড়ালেই মাথা ঘোরে? শরীরে রক্তের ঘাটতি আপনাকে শেষ করে দিতে পারে! জানুন
২. এটি চুল পড়া কমাতেও সাহায্য করে। অ্যালোপেসিয়া (চরম চুল পড়া যা টাক হয়ে যায়)-র চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে চুল পড়ে সব থেকে বেশি। শরীর অতিরিক্ত গরম হতে শুরু করলে এই সমস্যা বাড়ে। জবা শরীরকে শান্ত করে এবং পিত্ত দোষের ভারসাম্য বজায় রাখে, ফলে চুল পড়া কমে।
৩. অপরিণত ক্যানিটিস, অর্থাৎ অকালেই চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে এই সমস্যা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি থেকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হতে পারে। শুধু তাই নয়, মানসিক চাপ বা প্রদাহজনিত সমস্যা থেকেও অকালপক্কতা আসতে পারে। জবা ফুলের ভিটামিন সি, শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, ফ্রি র্যাডিক্যাল সঙ্গে লড়ে।
আরও পড়ুন: ডিম সেদ্ধ করার সময় ফেটে যায়? খোসা ছাড়াতে হিমশিম! সমাধানের সহজ টিপস
৪. জবা ফুলের তেল খুশকি কমায়। এর আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এবং ভিটামিন এ, সি মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগায়। জবার অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট উপাদান মাথার ত্বকের তেল উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. জবার মিউকিলেজ ফাইবার প্রতিটি চুলে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করে। ডগা চেরা বা চুল ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
কীভাবে ব্যবহার করা যায়—
১. জবা আমলা হেয়ার প্যাক:
জবা ফুলের পাপড়ি বেটে আমলকির গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
২. জবা এবং অ্যালোভেরা হেয়ার মাস্ক:
শুষ্ক এবং জট পাকানো চুলের জন্য জবা পাতা ও ফুলের পাপড়ি বেটে এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগাতে হবে। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
যতই স্পা বা প্যাক ব্যবহার করুন না কেন, চুলের জন্য নারকেল তেল বিকল্পহীন৷ ত্বকের যত্নেও নারকেলের তেলের যত্ন আদি ও অকৃত্রিম৷ শীতের আগে চুল ও ত্বকের পরিচর্যায় ফিরে চলুন নারকেল তেলের স্নেহ স্পর্শে৷ নারকেল তেল চুলের গোড়া মজবুত করে৷ চুল থেকে প্রোটিনের ক্ষয় রোধ করে৷ ডিপ কন্ডিশনিং ও রেশমকোমল চুলের জন্য ব্যবহার করুন নারকেল তেল৷
এই তেল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল৷ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এই তেল৷ মুখে, ঘাড়ে ও নাকে হাল্কা হাতে বৃত্তাকার ভাবে এই তেল মালিশ করুন৷ তার পর ফেসওয়াশে মুখ ধুয়ে নিন৷ মেক আপ রিমুভার হিসেবেও ব্যবহার করুন নারকেল তেল৷ বাজারচলতি যে কোনও রাসায়নিকের থেকে অনেক গুণ বেশি উপকারী৷ নখের যত্নেও অদ্বিতীয় নারকেল তেল৷
নখের চারপাশে মালিশ করুন এই তেল৷ ভাল থাকবে কিউটিকলস৷ নখের ভঙ্গুরতা কমে যাবে৷ চটজলদি হেয়ারমাস্ক বানাতেও নিয়ে নিন নারকেল তেল৷ নারকেলের তেলের সঙ্গে মেশান কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, ১ চামচ মধু ও অ্যালোভেরা জেল৷ দেখুন রাতারাতি চুলের জেল্লা বেড়ে যাবে বহু গুণ ৷
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। (সব ছবি-নেটমাধ্যম))