বাঁকুড়া: যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে, সংসারের হাল ধরতে এবার টোটো নিয়ে রাস্তায় গৃহবধূ। দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের আদিবাসী মহিলা টোটো চালক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রানিবাঁধের অলকা মুর্মুর।
শুরুটা মোটেই সুখের ছিল না অলকার, বাড়ির বৌ টোটো চালাবে, একথা শুনেই নাক সিটকেছিল অনেকেই। আবার কেউ কেউ আড়ালে-আবডালে অনেক অনেক অ-কথা, কু-কথাও শুনিয়েছে। কিন্তু কোনও কিছুকেই পাত্তা দেননি জঙ্গল মহলের এই আদিবাসী বধূ।
আরও পড়ুন- ভালবাসতেন পোস্তর সঙ্গে বাহারি মাছ, শঙ্করপুরের এই কটেজ ছিল বুদ্ধদেবের খুব প্রিয়
বাড়িতে অসুস্থ শাশুড়ি, স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলের পড়াশুনার খরচ বাড়ছে , পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দৈনন্দিন সংসার খরচ। নিজেদের সামান্য জমিতে চাষাবাদ করেন অলকার স্বামী, ফলে ওই সামান্য রোজগারে দিনের পর দিন সংসার চালানো জটিল হয়ে পড়ছিল।
এই অবস্থায় বছর দেড়েক আগে সংসারের হাল ধরতে স্বামীর পাশে দাঁড়াতে সব বাধা কাটিয়ে ‘গৃহলক্ষী’ অলকাকে উঠে বসতে হয় টোটো চালকের আসনে।
ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশুনা করার সুযোগ পাওয়া মধ্য তিরিশের অলকা এখন এক হাতে ধরেছেন সংসারের হাল, অন্যহাতে টোটোর হ্যাণ্ডেল। সবকিছুই সমান দক্ষতায় সামলে জীবন যুদ্ধে অনেক খানি সফল তিনি, বলছেন পরিবারের সদস্য থেকে পাড়া প্রতিবেশী প্রত্যেকেই।
এখন প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির যাবতীয় কাজ, রান্না-খাওয়া সেরে অলকা মুর্ম্মু টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পুনশ্যা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরত্বের রানীবাঁধ বাজারের উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন- এখানে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু! রয়েছে তাঁর মূর্তি, জানলে অবাক হবেন!
টোটো চালিয়ে সব মিলিয়ে প্রতিদিন মোটামুটি ৫০০ টাকা রোজগার হয় জানিয়ে তিনি বলেন, একেবারে শুরুর দিকে একটু সমস্যা হলেও এখন সব ঠিকঠাকই চলছে। তবে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা, মানুষের হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই, ফলে সঠিক ভাড়া সকলে দিতে পারেন না।
তবে রানীবাঁধ বাজারে সহকর্মী অন্যান্য টোটো চালকেরা যথেষ্ট সহযোগিতা করেন বলেই তিনি জানিয়েছেন। স্থানীয় শিক্ষক বাবুরাম কিস্কু জানিয়েছেন, অলকা আমাদের দৃষ্টান্ত। পরিবার সামলাতে তাঁর এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই।
নীলাঞ্জন ব্যানার্জী