Tag Archives: kalipuja

South 24 Parganas News: এক পক্ষকালে দেবীর ১৫ রূপ! দেখা মেলে জয়নগরের ধন্বন্তরি কালীমন্দিরে পুজো ও মেলা ঘিরে ভক্ত সমাগম

সুমন সাহা, জয়নগর: ১৫ দিন ধরে নানা রূপে ভক্তদের সামনে ভক্তদের মনবাঞ্ছাপূর্ণ করতে ধরা দেন দেবী। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই ঘটনার সাক্ষী হন প্রতিবছর দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর এলাকার মানুষজন। মায়ের এই রূপ পরিবর্তন উৎসবকে মহাবেশের মেলা বলে থাকে স্থানীয়রা। মায়ের এই রূপ পরিবর্তন দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ভিড় জমান জয়নগরের ধন্বন্তরি কালী মায়ের কাছে।

প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এই কালী বিগ্রহকে কেন্দ্র করে একপক্ষ সময় ব্যাপী বিশাল মেলা বসে৷ শুক্লা প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত, প্রতিদিন দেবীকে ভিন্ন  রূপে উপস্থাপনা করা হয়৷ এই দিনগুলিতে প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ হাজার মানুষ দেবীর রূপ ও মেলা দর্শন করেন৷ ‘রূপ’ অর্থে মায়ের ‘বেশ’ পরিবর্তন করা হয় বলে একে বেশ-এর মেলা বলা হয়৷

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে আদি গঙ্গার মজিলপুর গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হত। কথিত, সেই সময় ভৈরবানন্দ নামে এক তান্ত্রিক সাধক গঙ্গার এক চরার ওপর বসে সাধনা করতেন। বর্তমানে সেখানেই তৈরি হয়েছে মজিলপুরের ধন্বন্তরি কালীমন্দির। একদিন ওই তান্ত্রিক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশ মেনে পুকুরে সন্ধান করে, ওই তান্ত্রিক কালো পাথরের কালী মূর্তি পান এবং একটি খড়ের চালার কুটিরে দেবীসম ওই মূর্তি পুজো করতে থাকেন।

আরও পড়ুন : ইউরিক অ্যাসিডের অসহ্য যন্ত্রণায় পা ফেলতে কুঁকড়ে যাচ্ছেন? এই খাবারগুলি খাবেন না! কমবে ইউরিক অ্যাসিড

নিত্যপুজো ছাড়াও প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় এখানে বিশেষ পুজো হয়। শত শত ভক্ত মায়ের পুকুরে স্নান করে রোগমুক্তির জন্য ওষুধ খায় ও পুজো দেন। প্রায় দেড় শতাব্দী আগে পাকা মন্দির গড়ে ওঠে। প্রায় শতাধিক বছর ধরে, ওই আদি পাথরের মূর্তির অনুকরণে একটি কাঠের মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করা হচ্ছে। প্রতি বৈশাখ মাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ওই কাঠের মূর্তিতে বিভিন্ন মাতৃদেবীর মূর্তির রূপদান করা হয়।

দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এই বেশ ও মেলা দেখতে ভিড় জমায়। মেলার পর ভাঙা মেলাও বেশ কিছুদিন চলে।বর্তমান মন্দিরের সেবায়েত কালিদাস চক্রবর্তী জানান, মন্দিরটি সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বছরের প্রাচীন। মজিলপুর নামের উদ্ভব নিয়ে নদীর মজে যাওয়া তত্ত্বে দ্বিমত নেই তাঁর। রেললাইনের ওপারে মা জয়চন্ডী অধিষ্ঠান করছেন বলে জানান তিনি, এই জয়চন্ডী ধন্বন্তরি মায়ের থেকেও ৪০০-৫০০ বছরের প্রাচীন। তিনি আরও জানান নদী-সংলগ্ন স্থানেই একটি বিরাট শ্মশান ছিল। সেখানে বসবাস করতেন এক সন্ন্যাসী। তিনিই সেবা করতেন মা ধন্বন্তরিকে। নদী মজে যাওয়ার আগে নদীপথেই বাণিজ্য করতেন দেশ-বিদেশের বহু জমিদার।

একদিন রাত হয়ে যাওয়াতে কোনও এক জমিদার ডাকাতের ভয়ে এগোতে পারেননি নদীবক্ষে। নোঙর রেখে আশ্রয় নেন সন্ন্যাসীর কুটিরে। মাকে দেখে ভক্তি জন্মায় ও মাকে প্রতিষ্ঠা করেন। এখনও প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত এক পক্ষকাল ধরে এই রূপ পরিবর্তন ও বিশাল মেলা চলে আসছে। যা এলাকায় বেশের মেলা বলে পরিচিত। এই মেলা দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসে জয়নগরের মজিলপুরে।