Tag Archives: May Day

মে দিবস

মে মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ মে ‘মে দিবস’। যা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও পরিচিত। প্রতি বছর ১ মে ৮০টিরও বেশি দেশে মে দিবস পালিত হয়। শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিতেই এই দিন উৎসর্গ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশে তাই ১ মে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়।

মে দিবসের ইতিহাস :

প্রায় দেড়শো বছর আগের কথা। সে সময় নামমাত্র মজুরিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটতে হত শ্রমিকদের। সঙ্গে মুখ বুজে সহ্য করতে হত মালিকপক্ষের অত্যাচার। এর প্রতিবাদে ১৮৮৬ সালের ১ মে গর্জে ওঠেন শ্রমিকরা। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। সঙ্গে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমন করতে সেদিন এলোপাথারি গুলি চালায় পুলিশ। মৃত্যু হয় মোট ১১ জন শ্রমিকের। আহত হন আরও কয়েকজন। কিন্তু এরপরেও আন্দোলন থামেনি। শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। শ্রমিকদের দাবি মেনে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস ঘোষণা করা হয়। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলন। সেই সম্মেলনে শ্রমিকদের এই লড়াইকে স্বীকৃতি দিতে প্রতি বছর ১ মে ‘মে দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ব জুড়ে: দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনের পর থেকেই মে দিবস হয়ে ওঠে সমাজতান্ত্রিক এবং কমিউনিস্টদের অধিকার বুঝে নেওয়ার দিন। চিন, ভিয়েতনাম, কিউবা, লাওস, উত্তর কোরিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো কমিউনিস্ট দেশগুলিতে মে দিবস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিন। সে দিনে এই দেশগুলিতে শ্রমিকদের লড়াইকে উদযাপন করতে পথে নামে সামরিক বাহিনী। চলে কুচকাওয়াজ। র‍্যালি বের করেন শ্রমিক এবং কর্মীরা। ১৯৫৫ সালে ক্যাথলিক চার্চের তরফে ১ মে-কে ‘সেন্ট জোসেফ দ্য ওয়ার্কার’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেন্ট জোসেফ ছিলেন শ্রমিক এবং কারিগরদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত।

ভারতে মে দিবস: ভারতে মে দিবস মানে ছুটির দিন। কমিউনিস্ট এবং সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলি এদিন পথে নামে। মিছিল করে। চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ভারতে শ্রমিক দিবস প্রথম পালিত হয় মাদ্রাজে। তামিল ভাষায় যা ‘উঝাইপালার দিনম’ নামে পরিচিত। হিন্দিতে এটা ‘কামগার দিন’, কন্নড় ভাষায় ‘কারমিকারা দিনাচরানে’, তেলুগুতে ‘কারমিকা দিনোৎসবম’, মরাঠিতে ‘কামগার দিবস’, মলয়ালমে ‘থোজিলালি দিনম’ এবং বাংলায় ‘শ্রমিক দিবস’। তবে মে দিবস কিন্তু ভারতে জাতীয় ছুটির দিন নয়, রাজ্য সরকারের বিবেচনার ভিত্তিতে সরকারি ছুটি হিসেবে পালন করা হয়।

১৯২৩ সালের ১ মে মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) প্রথম মে দিবস পালন করে লেবার কিষাণ পার্টি অফ হিন্দুস্তান। ভারতের মাটিতে সেবারই প্রথম ওড়ে লাল পতাকা। দলের নেতা সিঙ্গারাভেলু চেত্তিয়ার ১৯২৩ সালে দুটি জায়গায় মে দিবস উদযাপনের ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রথমটি মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিপরীতে সমুদ্র সৈকতে। মে দিবস উপলক্ষ্যে সেখানে একটি সভা হয়। আরেকটি সভা হয় ট্রিপলিকেন সৈকতে। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমরেড সিঙ্গারাভেলার। মে দিবসকে ছুটি ঘোষণা করুক সরকার, এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস হয়। দলের অহিংস নীতির ব্যখ্যা দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য শ্রমিকদের একজোট হওয়ার ডাক দেওয়া হয় সভা থেকে।

International Labour Day 2024: কাজ না করলে ভাত জুটবে না! মে দিবসের তাৎপর্য ‘ব্যর্থ’ কৃষকদের কাছে

উত্তর ২৪ পরগনা: গ্রীষ্মের এই প্রখর দাবদাহের মধ্যেও কাজ করে যেতে হচ্ছে। শরীর ক্লান্ত লাগলেও বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই। আন্তর্জাতিক শ্রমদিবসের দিন এটাই বড় আক্ষেপ হতভাগ্য কৃষকদের। মে দিবসে যখন সর্বত্র শ্রমিকের, কর্মীর অধিকার নিয়ে চর্চা হচ্ছে তখন এই বাংলার কৃষকরা যেন সবকিছু থেকেই বঞ্চিত।

প্রতিবছরের মতে এবারেও ১ মে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়েছে। কিন্তু এই দিনটি সম্পর্কে সত্যিই কি অবগত শ্রমজীবী মানুষ? পয়লা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে শ্রমিকরা কাজের বিরতি নিয়ে এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করলেও ছুটি নেই বসিরহাটের মিনাখাঁর ক্ষেত মজুর ও কৃষকদের।

আর‌ও পড়ুন: অঙ্গন‌ওয়াড়ি কেন্দ্র না শাসকদলের অফিস? খোলা আকাশের নিচেই হচ্ছে শিশুদের রান্না

কথা বলে দেখা গেল বেশিরভাগ কৃষকই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের গুরুত্ব, তাৎপর্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নন। এই অসহায় মানুষগুলো একটা সহজ জিনিস ধরে নিয়েছেন, কাজ করলে তবেই পেটে দুটো ভাত জুটবে। কিন্তু একটা মানুষের যেমন কাজ করা প্রয়োজন তেমনই তাঁর জীবনে বিশ্রাম, বিনোদনের দরকার আছে সেগুলো পরিস্থিতির চাপে বেমালন ভুলে গিয়েছেন এই কৃষকরা। আর তাই টানা তাপপ্রবাহের মধ্যেই রোদ্দুরে পুড়ে জমিতে কাজ করছেন। ওঁরা এইভাবে উদায়স্ত খাটছেন বলেই পেটে ভাত জুটছে আমাদের।

জুলফিকার মোল্যা