স্কুলে গিয়ে অভিভাবকদের বিক্ষোভ

Nadia News: শ্যালিকার কথাতেই চলে স্কুল, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ অভিভাবকদের

নদিয়া: হেড মাস্টারমশাইয়ের স্কুল শ্বশুরবাড়ির পাড়ায়, মাঝেমধ্যেই শ্যালিকার আগমনে সরকারি বিদ্যালয়ও হয়ে উঠেছে শ্বশুর বাড়ি! বিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ম না মেনে যখন খুশি আসা, চেয়ারে পা তুলে ফ্যান চালিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল দেখা, শ্বশুরবাড়ি থেকে দিয়ে যাওয়া ভালো-মন্দ খাদ্য খাবার খাওয়া এগুলি প্রতিদিনের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের নৃসিংহপুর উত্তর কলোনীতে অবস্থিত নৃসিংহপুর গভমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাসের, এমনটাই অভিযোগ বিদ্যালয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগ অভিভাবকদের।

তাদের দাবি শুধু ওই প্রধান শিক্ষক নন তার শ্যালিকা সন্ধ্যা মন্ডল জামাইবাবুর সঙ্গে বিদ্যালয়টি নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে তাই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ বিষয়েও তার সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়। কোনও অভিভাবক অভিভাবিকা যদি পড়াশোনা সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন তোলেন কিংবা দেরিতে আসার জন্য প্রধান শিক্ষককে জানতে চান তাহলে ওই শালিকার হুমকির মুখে পড়তে হয়। বিদ্যালয়ের অভিভাবক অভিভাবিকাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে। এই নিয়ে আজ প্রায় প্রত্যেক অভিভাবক অভিভাবিকা স্কুলে প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে, তাদের দাবি অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক তার আচরণ বদলাক না হলে এসআই অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে বদল করা হবে ওই প্রধান শিক্ষককে।

আরও পড়ুনঃ সবুজের ছোঁয়া এবার বাড়ির অন্দরমহলেও, বনমহোৎসবকে ঘিরে নয়া উদ্যোগ বনদফতরের

বিক্ষোভের মাঝে উঠে আসল আরও নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য, কেউ জানালেন বিদ্যালয়ে মাঝেমধ্যেই মিড ডে মিলের পরিবর্তে শিশুদের দেওয়া হয় বিস্কুট, কেউ বা জানালেন স্কুলে স্মার্ট টিভিতে চলে সিরিয়াল কিংবা কার্টুন। তবে বিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষক রিপন মন্ডল বিভিন্ন মেধা ভিত্তিক পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজিতে পারদর্শী করে তুলতে বিদ্যালয় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বিদ্যালয়ের ঘরে পড়াশুনা করান। আর এতেও নাকি আপত্তি হেড মাস্টার মশায়ের।

প্রধান শিক্ষক অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেন বিদ্যালয়ের সরকারি গাইডলাইনের বাইরে কিছু করতে গেলে অনুমতি নিতে হয় এসআইয়ের , ভালো করতে গিয়ে খারাপ কিছু একটা ঘটে গেলে সে দায় পড়বে প্রধান শিক্ষকের উপর তাই বারণ করা। ছাত্রদের মাথায় আংটির আঘাত করা প্রসঙ্গে তিনি অবশ্য ভুল স্বীকার করে নিয়ে বলেন এটা নিজেকে পরিবর্তিত করতে হবে। বিস্কুট প্রসঙ্গে তিনি বলেন সামান্য ব্যয় বরাদ্দে বিস্কুট ছাড়া কোনও উপায় থাকে না তাই কখনও কখনও সপ্তাহের শেষ শনিবার দেখে এমন করা হয়।

শ্যালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, \”যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে প্রসঙ্গে হুমকি দিয়ে আসে তাহলে সেটা অবশ্যই অন্যায় সে বিষয়ে অবশ্যই আমি সতর্ক থাকবো পরবর্তীতে। অনিয়মিত স্কুলে আসার বিষয়ে তিনি বলেন শুধুমাত্র পড়ানো নয় প্রধান শিক্ষকের বাইরে বিভিন্ন কাজ পড়ে যা করতে মাঝেমধ্যেই যেতে হয়, অ্যাটেনডেন্ট খাতা আমি অভিভাবকদের দেখাতে পারি না তবে এসআই যদি দেখতে চান নিশ্চয়ই দেখাবো।\” স্কুলে টিভি সিরিয়াল দেখার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে মনে করেন তিনি তবে এত মানুষের বিক্ষোভ কি কারনে তা তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না।

সরকারি সময়সীমা অতিক্রান্ত করার পরেও বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষক রিপন মন্ডল বলেন, “একজন শিক্ষক হিসেবে শুধুমাত্র আমি চাকরি করতে এসেছি তাই নয়, এই পেশায় আসার সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সমাজের কাজে লাগবো, তাই অসুস্থতা নিয়েও বিদ্যালয়ে এসে ছেলেমেয়েদের বাড়তি পড়াশোনা করাই, সকলের সুখ্যাতিতেই হয়তো প্রধান শিক্ষকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে শুভ কাজেই প্রতিকূলতা আসে তবে এরপরে ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনও মন্দির কিংবা বারোয়ারি ঘরে গিয়ে পড়াব।”

যদিও প্রধান শিক্ষিকার শ্যালিকা তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তিনিও একজন ছাত্রের অভিভাবিকা, তাই স্কুলের ভালো মন্দ দেখা তারও কর্তব্য। আত্মীয় বলে নয় অহেতুক একজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উড়ছে তারই প্রতিবাদ করেছে মাত্র।

 

তবে অভিভাবকরা অবশ্য সকলে সমগ্র অভিযোগের বিষয়গুলি লিখে তাতে গণস্বাক্ষর করে এসআই অফিসে জমা দেবেন বলেই জানা গেছে। তারা বলেন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যই সরকার মাইনে দিচ্ছে শিক্ষকদের সেখানে পঠন-পাঠন মিড ডে মিল এবং শিক্ষার পরিবেশ সবকিছু বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদের, সেখানে আলোচনা না করে দিনের পর দিন বিষয়টি এড়িয়ে গেলে হবে না মানসিকতার বদল করে সমাধান সূত্র বের করতে হবে তাকেই।

Mainak Debnath