এবার পুজোয় সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ে 'City of Joy' কলকাতা

Durga Puja 2024: এবার পুজোয় বিরাট চমক! সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে ‘City of Joy’ কলকাতা

কলকাতা: আমেরিকায় দুর্গাপুজোর ইতিহাস বহু দশক পুরনো, ইন্টারনেট এর তথ্য মানলে শতাব্দী প্রাচীন। বিগত কয়েক দশকে খুব সঙ্গত কারণেই  নিউ ইয়র্ক – নিউ জার্সি হয়ে উঠেছে আমেরিকান দুর্গাপুজোর প্রাণকেন্দ্র।  বহু বাঙালি তথা ভারতীয়ের বাস পূর্ব-তটের এইসব রাজ্যে। কয়েক দশক আগেও  বিদেশের দুর্গাপুজো নিয়ে বাঙালিদের যেমন বিস্ময় আর উৎসাহ ছিল এখন আর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে দুর্গাপুজোকে তারা তেমন বিশেষ গুরুত্ব দেয়  না। কেনই বা দেবে? আগে হাতে গোনা কিছু পুজো, তাদের বঙ্গ -আমেরিকান  আচার, সংস্কৃতি, রীতি দেশের বাঙালিদের মনে কিছুটা  কৌতূহল জাগাত। এখন আমেরিকায় বাঙালি জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পুজোর সংখ্যাও।

বিদেশে দুর্গাপুজো এখন আর তেমন বিরল নয়। কেবলমাত্র নিউ জার্সিতেই  এবছর কুড়িটিরও বেশি  দূর্গাপুজো হচ্ছে। আর এই সব পুজোর সামগ্রিক ছাঁচ বা ধরণটাও  বেশ চেনা পরিচিত হয়ে গেছে দেশের মানুষের কাছে। স্কুল বা কোনও কমিউনিটি হলে উইকেন্ড-এ পুজো – এক বা দু’দিনের , একটু বাঙালি খাওয়া, এই আর কি।  বাচ্চারা একটু বাংলায় কবিতা বলে কি গান গায় , দু দিন একটু ‘ethnic wear’ পরে থাকে,সব  মিলিয়ে দু’দিন একটু পুজো পুজো আমেজ আসে।

তবু এই সব জানা ছক আর সংখ্যার ভিড়ে নিজেদের অনন্যতায় নজর কেড়ে নেয় কিছু পুজো। মাত্র দু’বছর আগে শুরু হওয়া ত্রিনয়নী’র পুজো ইতিমধ্যেই নিজের এক স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছে অনেক পুজোর ভিড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে কোন দিক দিয়ে এই পুজো অন্য সব পুজোর থেকে আলাদা? ২০২২ এ নিউ জার্সি এবং পেনসিলভানিয়া’র কিছু বাঙালি পরিবার মিলে এই পুজোর সূচনা করেন। প্রথম বছর সদস্যরা নিজেরা থার্মোকল দিয়ে প্রতিমা বানিয়েছিল। যামিনী রায়-এর শৈল্পিক ঘরানার আদলে। সব অতিথি অভ্যাগতদের  মুগ্ধ করেছিল সেই প্রতিমা এবং তার সাজ।  পরের বছর থেকে ত্রিনয়নী শুরু করে থিম পুজো । সে বছর থিম ছিল ‘পথের  পাঁচালী’।

আরও পড়ুন-  ভয়ঙ্কর তোলপাড় পরিবর্তন! সূর্য-মঙ্গল-বুধ-শুক্রের বিরাট চালে ভাগ্যের খেলা শুরু…! কারা ভাগ্যবান, কাদের লোকসান? আপনার কপালে কী?

পুজোর আগে কয়েক মাস নিরলস পরিশ্রম করে নিজেদের হাতে করা কুঁড়েঘর, তুলসী মঞ্চ, কাশবন আর অপু-দূর্গা দিয়ে সাজিয়েছিলেন পূজা প্রাঙ্গন। শান্তিনিকেতনী  আলপনা  আর সত্যজিৎ রায়ের পথের  পাঁচালি’র অনন্য পোস্টার এ সেজে উঠেছিল স্কুল এর করিডর।  সেই “মন্ডপসজ্জা” নজর কেড়েছিল  সবার।  এ বছরের থিম ‘City  of Joy’ কলকাতা। ইতিমধ্যেই কাজ চলছে পুরোদমে।  অতিথিরা এই বছর ও কিছু অনবদ্য শিল্প নমুনা অবশ্যই আশা করতে পারেন। দেশের নামী  শিল্পীদের  অনুষ্ঠান প্রায় সব পুজোরই অঙ্গ, ত্রিনয়নী ও ব্যতিক্রম নয়।

আরও পড়ুন-   মাত্র ৭ দিনেই জব্দ! ধমনী থেকে নিংড়ে বার করবে কোলেস্টেরল, শিরায় জমে থাকা ময়লা হবে সাফ, রোজ পাতে রাখুন এই খাবার

গত বছর ভূমি এবং শৌনক চট্ট্যোপাধ্যায় এর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ত্রিনয়নীর নিজস্ব শ্রুতিনাটক ও গানের প্রযোজনা মন কেড়েছিল সবার। এবছর ত্রিনয়নীতে  আসছেন রাঘব চট্ট্যোপাধ্যায় এবং সোমলতা। ত্রিনয়নীর জনপ্রিয়তার অন্যতম স্তম্ভ তাদের অসাধারণ খাওয়াদাওয়া এবং আতিথেয়তা। দু’দিন ধরে ভোগ এবং আমিষ ও নিরামিষ খাওয়ার অঢেল আয়োজন থাকে এই পুজোয়। সদস্যরা নিজেরা পরিবেশন করে গরম খাবার খাওয়ান অতিথিদের। সঙ্গে থাকে বিশেষ বাঙালি মিষ্টি। বাঙালি তো বটেই, অবাঙালি অতিথিরাও খাবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।

তবে প্রেসিডেন্ট শ্রী সুমিত দে’র মতে, এই সব কিছুকে ছাপিয়ে যা মানুষকে ত্রিনয়নীর পুজোর সঙ্গে একাত্ম করে তা হল সদস্যদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা। সেই অনন্য আন্তরিকতার কারণেই এই পুজো সবার কাছে নিজের বাড়ির বা পাড়ার পুজোর অনুভূতি বয়ে এনেছে বিগত বছরে। এ বছর ত্রিনয়নীর পুজো হচ্ছে ১২ই ও ১৩ই অক্টোবর। শহর কলকাতার অলি-গলি, ইমারত আর জিভে জল আনা খাবার নিয়ে তৈরি থাকবে টিম  ত্রিনয়নী। তারা এই বছর ও তাদের বৃহত্তর পরিবারকে আমন্ত্রণ জানায় আনন্দ উৎসবে।