সারান ফুটবলের 'অসুখ'...! ৩২ বছর ধরে এই নিয়েই মহিলার 'জীবন'! দেখুন আশ্চর্য কাহিনি!

Football: সারান ফুটবলের ‘অসুখ’…! ৩২ বছর ধরে এই নিয়েই মহিলার ‘জীবন’! দেখুন আশ্চর্য কাহিনি!

পূর্ব বর্ধমান: জনপ্রিয় গান “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল”। ফুটবলের সঙ্গে আগাগোড়ায় বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। আর এই ফুটবলের সঙ্গে জড়িত, বর্ধমানের এই বাঙালি মহিলার গল্প জানলে অবাক হবেন। ছোট থেকে এখনও পর্যন্ত, প্রায় ৩২ বছর ধরে তিনি ফুটবলের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। না, বর্ধমানের এই মহিলা ফুটবল খেলেন না। তিনি ফুটপাতে বসে ফুটবল সারিয়ে তোলেন।

আরও পড়ুন- আসছে ‘ডানা’! ঝড় মোকাবিলায় কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক রাজ্যের, কত বড় বিপর্যয়?

বর্তমানে বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানার অন্তর্গত কলিগ্রামের বাসিন্দা ময়না অধিকারী। সকলের কাছে তিনি ময়না দি নামেই পরিচিত। বর্ধমান শহরের টাউনহলের সামনে, ফুটপাতে বসে ফুটবল সারিয়ে তোলায় তাঁর পেশা। সকাল ১১ টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ফুটপাত তাঁর রোজগারের সঙ্গী। খেলার মাঠে ফেটে যাওয়া, সেলাই কেটে যাওয়া ফুটবল ঠিক করেন ময়না দেবী।

আরও পড়ুন- হাইজ্যাক, বোমার হুমকি কলকাতাতেও! এয়ারপোর্টে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা, হল জরুরি বৈঠক!

তিনি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “ক্লাস থ্রি, ফোরে পড়ার সময় থেকেই আমি এক কাজ করি। বাবা মিস্ত্রি ছিলেন , বাবার কাছেই শিখেছিলাম। তবে শুধু ফুটবল নয় ব্যাট, র‍্যাকেট ও আমি ঠিক করি। প্রায় ৩২ বছর ধরে এই কাজ করছি।” ছোটবেলায় বাবার কাছে শিখেছিলেন এই কাজ। সেই থেকেই এখনও পর্যন্ত একটানা প্রায় ৩২ বছর ধরে তিনি এই পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন। ময়না দেবীর স্বামী শাড়ির ব্যবসা করতেন। স্বামী স্ত্রীর রোজগারে ভালই চলত সংসার। তবে আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে হয় ছন্দ পতন। শারিরিক অসুস্থতার কারণে গত হন ময়না দেবীর স্বামী। তিন মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে সেই থেকে লড়াই শুরু হয় তাঁর। তবে ফুটপাতে ফুটবল সারানোর পয়সা থেকেই সবটা সামলেছেন তিনি।

বর্ধমানের রাজ কলেজ থেকে পড়াশোনা করিয়েছেন দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে। তিন মেয়ের ভাল ঘরে বিয়েও দিয়েছেন তিনি। আর তাঁর ছেলে সুব্রত অধিকারী বেসরকারি কোম্পানির চাকরিছেড়ে, বর্তমানে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা থেকে বিয়ের খরচ, সবটাই একা হাতে সামলেছেন ময়না দেবী। তিনি আরও জানিয়েছেন, “আমার তিন মেয়ে, এক ছেলে। ১৪ বছর স্বামী গত হয়েছেন। ছেলে মেয়েদের বুকে করে আগলে রেখে আমি মানুষ করেছি। দুই মেয়ে এবং ছেলেকে রাজ কলেজ থেকে পড়াশোনা করিয়েছি। সব করেছি এই ফুটবল সারানোর পয়সা থেকেই।”

বর্ধমানের সহ আশপাশের বহু গ্রাম থেকে ময়না দির কাছে অনেকেই আসেন ফুটবল সারানোর জন্য। মহিলা হয়ে এই ফুটবল সারানোর কাজ করার ছবি সত্যিই বিরল। তবে ময়না দির কোনও আক্ষেপ নেই, মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে তিনি এই কাজ করেন। ছেলে মেয়েদের মানুষ করার পাশাপাশি সংসারের অনেক উন্নতিও করেছেন তিনি। ময়না দির রোজগারের সঙ্গী ফুটবল, আজও জড়িয়ে রয়েছেন ফুটবলের সঙ্গে।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী