Tag Archives: anya-puja-2024

Durga Puja 2024: পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজোয় দেবীর মূর্তি নির্মাণে বিশেষ প্রথা! প্রয়োজন বিশেষ এলাকার মাটি

সার্থক পণ্ডিত, কোচবিহার: রাজ আমলের কোচবিহারে সূচনা হয়েছিল কোচবিহারের বড় দেবীর পুজোর। সেই পুজো আজকে প্রায় দীর্ঘ ৫০০ বছরের পুরন। এখনও সেই প্রাচীন রীতি ও প্রথা মেনে পুজো করা হচ্ছে বড় দেবীর। কোচবিহারের দেবী বাড়ির মন্দিরে রাজ আমলের প্রথা মেনে মূর্তি নির্মাণ করা হয় বড় দেবীর। আর তারপর সেখানেই পুজো করা হয় দুর্গা পুজোর সময়। দীর্ঘ সময়ের প্রাচীন এই পুজোকে কেন্দ্র করে দূর-দূরান্তের বহু ভক্তবৃন্দ সমাগম ঘটে। তবে এই দেবীর মূর্তি নির্মাণে বিশেষ কিছু প্রথা রয়েছে।

দীর্ঘ সময়ের বংশ-পরম্পরায় বড় দেবীর মূর্তি তৈরি করার কারিগর প্রভাত চিত্রকর জানান, “ময়নাকাঠের শক্তি দণ্ডের উপর ভিত্তি করে দেবীর মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। খড়, বাঁশ, সুতো এবং মাটি দিয়েই হয় এই প্রতিমা নির্মাণ। তবে এসবের মধ্যেও রয়েছে রীতি ও নিয়ম। যেমন দেবীর প্রতিমা নির্মাণ বংশ পরম্পরায় তাঁরাই করে আসছেন। দেবীর রূপ পরির্বতন হয় না। ময়নাকাঠের শক্তি দণ্ড ছাড়া দেবীর মূর্তি নির্মাণ হবে না। চামট এলাকার মাটি ছাড়া দেবীর প্রতিমা অসম্পূর্ণ থাকবে। মোট তিন ধরনের মাটি দেওয়া হয় দেবীর প্রতিমায়।”

কোচবিহার মদনমোহনবাড়ির দেওড়ি অমর কুমার ঘোষ জানান, “দীর্ঘ সময় ধরে কোচবিহারের বলরামপুরের চামটা এলাকার মাটি ছাড়া দেবীর মূর্তিতে মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয় না। এই মাটি আনতে আগে সেখানে বিশেষ পুজো করে তারপর আনতে হয়। সেই প্রথা দীর্ঘ রাজ আমল থেকেই চলে আসছে। এছাড়া দেবীর পুজোর মধ্যেও রয়েছে বিশেষ কিছু বিষয়। যেই বিষয়গুলি এই দেবীর পুজোকে আর পাঁচটা দুর্গা পুজোর চাইতে আলাদা করে তোলে। তাই তো বহু মানুষের ভিড় জমে এই বড় দেবীর পুজোয় প্রতি বছর।”

আরও পড়ুন : চলছে আশ্বিন মাস! এই খাবারগুলি খেলেই রোগে দেউলিয়া হয়ে যাবেন! জানুন পঞ্জিকার মত

জেলা কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী বড় দেবীর পুজো উপলক্ষে প্রায় সারা বছর ধরেই অপেক্ষা করতে থাকে কোচবিহারের মানুষেরা। দীর্ঘ রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই পুজো দূরদূরান্তের বহু মানুষের নজর আকর্ষণ করে। তাইতো কোচবিহারের এই পুজোয় শুধুমাত্র কোচবিহারবাসী নয়, বাইরেরও বহু মানুষেরা ঘুরতে আসেন।

Durga Puja 2024: দেবী দুর্গা এখানে ‌রাজবংশী কন্যা রূপেই পূজিতা! জাঁকজমকের পরিবর্তে আন্তরিকতা ও আভিজাত্যই মুখ্য

সুরজিৎ দে, জলপাইগুড়ি: গা ভরা অলংকার, চমকপ্রদ সাজসজ্জায় নয় এখানকার দেবী প্রতিমা যেন ঘরের মেয়ে। সজ্জায় ঠিক যেন গ্রামের মাঠে ঘাটে গোয়ালে কাজ করা এক গৃহবধূ। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির আমগুড়িতে এমনই অভিনব রূপে দেবী দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন বহু বছর ধরে। এ বছরও অন্যথা হবে না। উত্তরবঙ্গের অন্যতম জনজাতি রাজবংশী। আর সেই রূপই ফুটে ওঠে জলপাইগুড়ির বসুনিয়া পরিবারের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর দেবী প্রতিমায়।

রাজবংশী জনজাতির আদলেই তৈরি হয়, এখানকার উমা। এলাকার আর পাঁচটা রাজবংশী বাড়ির মতোই তৈরি হয় উমার মণ্ডপ। অসাধারণ নয়, একেবারে সাধারণ রূপেই পূজিতা হন দেবী দুর্গা। প্রাচীন ঐতিহ্য পালিত হয় বসুনিয়া বাড়ির দুর্গাপূজা উৎসবে। বর্তমানে বসুনিয়া বাড়ি বংশধর সুনীল কুমার বসুনিয়া এই দুর্গাপুজো করে থাকেন। জানা যায়, এই দুর্গাপূজা, ১৮১০ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বসুনিয়া বাড়িতে।

তৎকালীন সময়ে রাজরোষে কোচবিহার রাজসভা থেকে বিতাড়িত হয়ে ফালাকাটা হয়ে জলপাইগুড়ি আমগুড়ির অন্তর্গত চাপগড় বসবাস শুরু করতে থাকে ধনবর বসুনিয়া। আমগুড়ি তখন ছিল গভীর জঙ্গল বাঘ ভাল্লুকের। সেই সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ভালকরার জন্য বসুনিয়া পরিবার দুর্গাপূজা শুরু করে। এ পুজোও যেন টক্কর দেয় কোচবিহার রাজবাড়ির দুর্গা পুজোকেও।

আরও পড়ুন : ২ ইঞ্চি আদা! ২ কাপ জল! তাড়িয়ে দেয় মেদের স্তর, গাটের ব্যথা, ঋতুস্রাবের ব্যথাকে! এভাবে খেতে হবে দিনের এই সময়ে

এ বছর এই পুজো ২১৪ বছরে পদার্পণ করবে। জন্মাষ্টমীর পর নন্দ উ‍তসবে কাদাখেলার মধ্য দিয়েই সূচনা হয়ে গিয়েছে এ বছরের পুজোর প্রস্তুতি। এবারের পুজো প্রসঙ্গে বসুনিয়া পরিবারের সদস্য সুশীলকুমার বসুনিয়া বলেন, যে সময় এই পুজোর যাত্রা শুরু সেই সময় এই অঞ্চলে কোনও মৃৎশিল্পী ছিল না, গ্রামের মানুষ নিজে হাতেই গড়ে নিতেন মা দুর্গার মূর্তি। আজ আর সেই জাঁকজমক নেই, তবে আজও মায়ের মুখ তৈরি হয় রাজবংশী গৃহবধূর আদলেই। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষের ভিড় জমে ঘরের মেয়ে উমাকে দেখতে।

Durga Puja 2024: সিদ্ধেশ্বরী রূপে পূজিতা দেবী দুর্গা, ২০০ বছরের প্রাচীন মন্দিরে ভক্ত সমাগম দুর্গাপুজোয়

সার্থক পণ্ডিত, কোচবিহার: জেলায় রাজ আমল এবং তার থেকেও পুরনো বহু প্রাচীন মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। আর এই মন্দির গুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে বহু পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এমনই এক প্রাচীন মন্দিরের নাম সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। আর এই মন্দিরের নাম থেকেই গ্রামের নাম হয়েছে সিদ্ধেশ্বরী। জেলা কোচবিহারের বাণেশ্বর এলাকার বাণেশ্বর শিব মন্দিরের পাশ দিয়েই রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে আসার রাস্তা। এই মন্দিরে দেবী দুর্গাকে সিদ্ধেশ্বরী রূপে পুজো করা হয়ে থাকে। তাই দুর্গা পুজোর সময় এখানেও দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হয়।

সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত ধীরেশ্বর দেবশর্মা জানান, ‘‘মন্দিরের সূচনা লগ্ন থেকেই দেবী দুর্গাকে সিদ্ধেশ্বরী রূপে পুজো করা হচ্ছে এখানে। তবে এই মন্দিরের একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে। মন্দিরের সূচনা লগ্ন থেকে এই মন্দিরে কোনওদিন প্রতিমা পুজো হয়নি। শুরুর সময় থেকেই ঘটের মধ্যে দুর্গার পুজো করা হয়ে থাকে এখানে। তবে ঘটের মধ্যে করা হলেও, পুজোয় জাঁকজমক থাকে অনেকটাই। গোটা গ্রামের মানুষেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পুজোয় যোগদান করে থাকেন। যদিও বর্তমান সময়ে এই পুজোর সমস্ত দায়িত্ব পালন করে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড।’’

আরও পড়ুন : ছাতা তুলে ধরলেন ‘একদিনের রাজা’! ভাদ্র সংক্রান্তিতে পুরুলিয়ায় পালিত মানভূমের প্রাচীন রীতি

এলাকার দুই স্থানীয় বাসিন্দ কার্তিক বর্মন ও চারুবালা রায় জানান, ‘‘ রাজ আমল থেকেও পুরনো এই মন্দির। এই মন্দিরের স্থাপনের বিষয় নিয়ে এখনোও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু জানতে পারা যায় এই মন্দির বাংলার ১২৮৪ সালে প্রথমবার মেরামতি করা হয়েছিল। তাই মনে করা হয় এই মন্দির সেই সময়ের আগেও এখানে ছিল। বর্তমান সময়ে এই মন্দিরে দুর্গাপুজোর সময় প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। স্থানীয় মানুষেরা যেমন এই পুজোয় আসেন, তেমনই দূর-দূরান্তের মানুষও এই মন্দিরের পুজো দেখতে ভিড় জমান এখানে। পুজোর দিনে এখানে প্রচুর খিচুড়ি বিতরণ করা হয়।”

জেলা কোচবিহারের এই অতি প্রাচীন মন্দির জেলার বহু পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে। তাই এবার দুর্গা পুজোর ছুটিতে প্রাচীন দুর্গা পুজো এবং ইতিহাসের খোঁজে এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের ঘুরতে আসতে পারেন। একেবারে অন্যরকম এক অনুভূতির সাক্ষী থাকতে পারবেন এই মন্দিরে এলেই।

Durga Puja 2024: ২৭৫ বছরের পুরনো বনেদি পুজোয় উঠল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ রব

বারুইপুর: বারুইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো এ’বছর ২৭৫ তম বর্ষে পড়ল। রমরমিয়ে চলছিল পুজোর প্রস্তুতি, মাঝে আচমকাই ছন্দপতন। আরজি করে ঘটে যাওয়া নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় গোটা বাংলা মায় দেশের মতোই মন ভারাক্রান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদেরও। পুজোয় আনন্দ করার মানসিকতায় বাঁধা পড়েছে। পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার ইচ্ছে যেন জাগছে না মন থেকে। তাঁদের ভাষায়, ” মা আসছেন, পুজো হবে, কিন্তু পুজোর এই ক’টা দিন আগের মতো আর আনন্দে মাততে পারব না বোধহয়।”

বারুইপুরের কল্যাণপুরের বন্দোপাধ্যায় বাড়ির প্রতিটা সদস্যের এক দাবি, ”  দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি ও ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে।” তাঁদের কথায়, ” পুজোর আগে দোষীরা শাস্তি পেলে ভারাক্রান্ত মনটা খানিক হালকা হবে অন্তত। আর কবে দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে? দেখতে দেখতে এক মাস গড়িয়ে গেল। গোটা দেশের কোণায় কোনায় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ রব… আমরাও চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার হোক। দোষীরা কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি পাক। তাহলে অন্তত মন কিছুটা হলেও স্বান্তনা পাবে। মা আসছেন। মার কাছেও মনপ্রাণ থেকে প্রার্থণা করব, একজন দোষীও যেন নিস্তার না পায়।”

সুমন সাহা

Boro Devi Shakti Pujo: ময়নাকাঠে মন্ত্রের মাধ্যমে শক্তি স্থাপন, কোচবিহারে শ্রাবণের শুক্লাষ্টমীতে সূত্রপাত প্রাচীন দুর্গো‍ৎসবের

কোচবিহার জেলার দুর্গা পুজো বলতে বড় দেবীর পুজো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী। এই পুজোর রীতিনীতি রয়েছে প্রচুর। সেগুলির প্রথম এবং প্রধান রীতি হল ময়না কাঠেরশক্তি পুজো।
কোচবিহার জেলার দুর্গা পুজো বলতে বড় দেবীর পুজো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী। এই পুজোর রীতিনীতি রয়েছে প্রচুর। সেগুলির প্রথম এবং প্রধান রীতি হল ময়না কাঠেরশক্তি পুজো।
এদিন কোচবিহার ডাঙর আই মন্দিরে শক্তি পুজোর মাধ্যমে বড় দেবীর পুজোর সূচনা করা হল। শক্তি অর্থাৎ মেরুদন্ড, বিশেষ প্রজাতির কাঠ থেকে এই মেরুদন্ড নির্মাণ করা হয় বড় দেবীর প্রতিমার।
এদিন কোচবিহার ডাঙর আই মন্দিরে শক্তি পুজোর মাধ্যমে বড় দেবীর পুজোর সূচনা করা হল। শক্তি অর্থাৎ মেরুদন্ড, বিশেষ প্রজাতির কাঠ থেকে এই মেরুদন্ড নির্মাণ করা হয় বড় দেবীর প্রতিমার।
ময়না কাঠের দন্ডের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় বড় দেবীর প্রতিমা। এই কাঠের মধ্যে মন্ত্রের মাধ্যমে শক্তি স্থাপন করেন রাজপুরোহিত। সম্পূর্ণ পুজো সম্পন্ন করতে সময় লাগে দু'ঘন্টার সামান্য বেশি।
ময়না কাঠের দন্ডের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় বড় দেবীর প্রতিমা। এই কাঠের মধ্যে মন্ত্রের মাধ্যমে শক্তি স্থাপন করেন রাজপুরোহিত। সম্পূর্ণ পুজো সম্পন্ন করতে সময় লাগে দু’ঘন্টার সামান্য বেশি।
এই পুজোর বিষয়ে রাজ পুরোহিত জানান, এই পুজোয় বলি প্রথা প্রচলিত রয়েছে। মূলত শক্তি পুজোয় রক্তের প্রয়োজন হয়। রাজ আমলের রাজ বিধি অনুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরেই এই পুজো হয়ে আসছে।
এই পুজোর বিষয়ে রাজ পুরোহিত জানান, এই পুজোয় বলি প্রথা প্রচলিত রয়েছে। মূলত শক্তি পুজোয় রক্তের প্রয়োজন হয়। রাজ আমলের রাজ বিধি অনুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরেই এই পুজো হয়ে আসছে।
শ্রাবণের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে পুজো হয় এই ময়না দন্ডের। এই পুজোকে বলা হয় যুগচ্ছেদন পুজো। একমাস বিভিন্ন আচারে পুজো হওয়ার পরে এই কাঠ চলে যায় প্রতিমার তৈরি করার কাজে।
শ্রাবণের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে পুজো হয় এই ময়না দন্ডের। এই পুজোকে বলা হয় যুগচ্ছেদন পুজো। একমাস বিভিন্ন আচারে পুজো হওয়ার পরে এই কাঠ চলে যায় প্রতিমার তৈরি করার কাজে।
বড় দেবীর এই প্রতিমা তৈরির কাজ করা হয় বড় দেবীর মন্দিরে। রাজ আমল থেকে কোচবিহারের এই পুজো আজও বেশ জনপ্রিয়। দূর দুরান্তের বহু মানুষ পুজোয় এসে থাকেন কোচবিহারের বড় দেবী বাড়িতে।
বড় দেবীর এই প্রতিমা তৈরির কাজ করা হয় বড় দেবীর মন্দিরে। রাজ আমল থেকে কোচবিহারের এই পুজো আজও বেশ জনপ্রিয়। দূর দুরান্তের বহু মানুষ পুজোয় এসে থাকেন কোচবিহারের বড় দেবী বাড়িতে।

Durga Puja: শ্রাবণেই দুর্গার আবাহন! জলদস্যুর থেকে রক্ষা পেতেই কৃষ্ণনগরে শুরু এই মহিষমর্দিনী বন্দনা

কৃষ্ণনগর: জগদ্ধাএী পুজোর পাশাপাশি আর একটি পুজোও বিখ‍্যাত নদিয়ার কৃষ্ণনগর সদর শহরে মা মহিষমর্দিনী পুজো, আর এই মহিষমর্দিনী পুজো নদিয়ার কৃষ্ণনগর সদর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কৃষ্ণনগর কদমতলা ঘাট সংলগ্ন গোলাপট্টি বারোয়ারীতে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর। আর এর এক ইতিহাস রয়েছে কৃষ্ণনগরের ইতিহাসের পাতায়।

একসময় নদিয়ার কৃষ্ণনগর সদর শহরে ছিল না কোনও সড়ক যোগাযোগ ব‍্যবস্থা, একমাত্র যোগাযোগ ব‍্যবস্থা ছিল নদীপথে, আর এই নদীপথ নিয়ে ইতিহাস শুরু। যেখানে নদীপথে নৌকার মাধ‍্যমেই ব‍্যবসা-বাণিজ্য চালাত কৃষ্ণনগর শহরের মানুষজন আর সেখানে প্রায়ই জলদস‍্যুদের আক্রমণের হাতে পড়তে হত বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বণিকদের।

আরও পড়ুনঃ ১৫ অগাস্টের লম্বা ছুটিতে বোলপুর শান্তিনিকেতন আসছেন? তাহলে একটি খুশির খবর আপনার জন্য, জানুন

একসময় নদীপথে জলদস‍্যুর দ্বারা আক্রান্ত হলে ব্যবসায়ীরা মায়ের স্বপ্নাদেশ পান, যেখানে মা বলেছিলেন আমাকে ঝুলন পূর্ণিমার আগে অষ্টমী তিথিতে আমার পুজো কর তবে তোরা রক্ষা পাবি। তারপর থেকে বণিকদের হাত ধরেই রীতিমত কৃষ্ণনগর গোলাপট্টি বারোয়ারীতে শুরু হয় মা মহিষমর্দিনী পুজো, আর এই পুজোই প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো, এই পুজোই এখনও করছে কৃষ্ণনগর কদমতলা ঘাট সংলগ্ন সাধারণ মানুষ।

এখনও জাঁকজমক ভাবে সমস্ত রীতিনীতি মেনে কৃষ্ণনগর গোলাপট্টি বারোয়ারীতে এই পুজো হয় চারদিনের। মা মহিষমর্দ্দিনি পুজোয় মায়ের ভোগে থাকে নানা রকমারী ভাজা এবং তরকারি ও সবশেষে থাকে পায়েস ও মিষ্টি, এবং পুজোর শেষে থাকে অন্নমহোৎসব। স্থানীয় বাসিন্দারা মায়ের ভোগ রন্ধন করে সেবা করে থাকেন এখানে। পরিশেষে বলা যায় জগদ্ধাত্রী পুজো এবং দুর্গাপুজোর আগে কৃষ্ণনগরবাসীর এক বাড়তি পাওনা এই মহিষমর্দিনী পুজো।

Mainak Debnath

Durga Puja 2024: এবার পুজোয় বিরাট চমক! সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে ‘City of Joy’ কলকাতা

কলকাতা: আমেরিকায় দুর্গাপুজোর ইতিহাস বহু দশক পুরনো, ইন্টারনেট এর তথ্য মানলে শতাব্দী প্রাচীন। বিগত কয়েক দশকে খুব সঙ্গত কারণেই  নিউ ইয়র্ক – নিউ জার্সি হয়ে উঠেছে আমেরিকান দুর্গাপুজোর প্রাণকেন্দ্র।  বহু বাঙালি তথা ভারতীয়ের বাস পূর্ব-তটের এইসব রাজ্যে। কয়েক দশক আগেও  বিদেশের দুর্গাপুজো নিয়ে বাঙালিদের যেমন বিস্ময় আর উৎসাহ ছিল এখন আর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে দুর্গাপুজোকে তারা তেমন বিশেষ গুরুত্ব দেয়  না। কেনই বা দেবে? আগে হাতে গোনা কিছু পুজো, তাদের বঙ্গ -আমেরিকান  আচার, সংস্কৃতি, রীতি দেশের বাঙালিদের মনে কিছুটা  কৌতূহল জাগাত। এখন আমেরিকায় বাঙালি জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পুজোর সংখ্যাও।

বিদেশে দুর্গাপুজো এখন আর তেমন বিরল নয়। কেবলমাত্র নিউ জার্সিতেই  এবছর কুড়িটিরও বেশি  দূর্গাপুজো হচ্ছে। আর এই সব পুজোর সামগ্রিক ছাঁচ বা ধরণটাও  বেশ চেনা পরিচিত হয়ে গেছে দেশের মানুষের কাছে। স্কুল বা কোনও কমিউনিটি হলে উইকেন্ড-এ পুজো – এক বা দু’দিনের , একটু বাঙালি খাওয়া, এই আর কি।  বাচ্চারা একটু বাংলায় কবিতা বলে কি গান গায় , দু দিন একটু ‘ethnic wear’ পরে থাকে,সব  মিলিয়ে দু’দিন একটু পুজো পুজো আমেজ আসে।

তবু এই সব জানা ছক আর সংখ্যার ভিড়ে নিজেদের অনন্যতায় নজর কেড়ে নেয় কিছু পুজো। মাত্র দু’বছর আগে শুরু হওয়া ত্রিনয়নী’র পুজো ইতিমধ্যেই নিজের এক স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছে অনেক পুজোর ভিড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে কোন দিক দিয়ে এই পুজো অন্য সব পুজোর থেকে আলাদা? ২০২২ এ নিউ জার্সি এবং পেনসিলভানিয়া’র কিছু বাঙালি পরিবার মিলে এই পুজোর সূচনা করেন। প্রথম বছর সদস্যরা নিজেরা থার্মোকল দিয়ে প্রতিমা বানিয়েছিল। যামিনী রায়-এর শৈল্পিক ঘরানার আদলে। সব অতিথি অভ্যাগতদের  মুগ্ধ করেছিল সেই প্রতিমা এবং তার সাজ।  পরের বছর থেকে ত্রিনয়নী শুরু করে থিম পুজো । সে বছর থিম ছিল ‘পথের  পাঁচালী’।

আরও পড়ুন-  ভয়ঙ্কর তোলপাড় পরিবর্তন! সূর্য-মঙ্গল-বুধ-শুক্রের বিরাট চালে ভাগ্যের খেলা শুরু…! কারা ভাগ্যবান, কাদের লোকসান? আপনার কপালে কী?

পুজোর আগে কয়েক মাস নিরলস পরিশ্রম করে নিজেদের হাতে করা কুঁড়েঘর, তুলসী মঞ্চ, কাশবন আর অপু-দূর্গা দিয়ে সাজিয়েছিলেন পূজা প্রাঙ্গন। শান্তিনিকেতনী  আলপনা  আর সত্যজিৎ রায়ের পথের  পাঁচালি’র অনন্য পোস্টার এ সেজে উঠেছিল স্কুল এর করিডর।  সেই “মন্ডপসজ্জা” নজর কেড়েছিল  সবার।  এ বছরের থিম ‘City  of Joy’ কলকাতা। ইতিমধ্যেই কাজ চলছে পুরোদমে।  অতিথিরা এই বছর ও কিছু অনবদ্য শিল্প নমুনা অবশ্যই আশা করতে পারেন। দেশের নামী  শিল্পীদের  অনুষ্ঠান প্রায় সব পুজোরই অঙ্গ, ত্রিনয়নী ও ব্যতিক্রম নয়।

আরও পড়ুন-   মাত্র ৭ দিনেই জব্দ! ধমনী থেকে নিংড়ে বার করবে কোলেস্টেরল, শিরায় জমে থাকা ময়লা হবে সাফ, রোজ পাতে রাখুন এই খাবার

গত বছর ভূমি এবং শৌনক চট্ট্যোপাধ্যায় এর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ত্রিনয়নীর নিজস্ব শ্রুতিনাটক ও গানের প্রযোজনা মন কেড়েছিল সবার। এবছর ত্রিনয়নীতে  আসছেন রাঘব চট্ট্যোপাধ্যায় এবং সোমলতা। ত্রিনয়নীর জনপ্রিয়তার অন্যতম স্তম্ভ তাদের অসাধারণ খাওয়াদাওয়া এবং আতিথেয়তা। দু’দিন ধরে ভোগ এবং আমিষ ও নিরামিষ খাওয়ার অঢেল আয়োজন থাকে এই পুজোয়। সদস্যরা নিজেরা পরিবেশন করে গরম খাবার খাওয়ান অতিথিদের। সঙ্গে থাকে বিশেষ বাঙালি মিষ্টি। বাঙালি তো বটেই, অবাঙালি অতিথিরাও খাবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।

তবে প্রেসিডেন্ট শ্রী সুমিত দে’র মতে, এই সব কিছুকে ছাপিয়ে যা মানুষকে ত্রিনয়নীর পুজোর সঙ্গে একাত্ম করে তা হল সদস্যদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা। সেই অনন্য আন্তরিকতার কারণেই এই পুজো সবার কাছে নিজের বাড়ির বা পাড়ার পুজোর অনুভূতি বয়ে এনেছে বিগত বছরে। এ বছর ত্রিনয়নীর পুজো হচ্ছে ১২ই ও ১৩ই অক্টোবর। শহর কলকাতার অলি-গলি, ইমারত আর জিভে জল আনা খাবার নিয়ে তৈরি থাকবে টিম  ত্রিনয়নী। তারা এই বছর ও তাদের বৃহত্তর পরিবারকে আমন্ত্রণ জানায় আনন্দ উৎসবে।

Ancient Puja: শুক্লা ত্রয়োদশীতে বর্ষার জঙ্গলে কয়েকশো বছরের প্রাচীন পুজোয় ঐতিহ্য মেনে পূজিতা হন দেবী

শমিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া : বৈচিত্রে পরিপূর্ণ জেলা পুরুলিয়া। বৈচিত্র্যময় এই জেলার সব কিছুর সঙ্গেই রয়েছে বৈচিত্র। প্রতিবছর এই জেলায় পালিত হয় নরহারা পুজো। ‌প্রতি বছরের মতো এ বছরও উল্টোরথের পর শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন অতি প্রাচীন নরহারা পুজো হয় ঝালদা থানার নরাহারা জঙ্গলে। জনশ্রুতিতে কথিত, এককালে এখানে নরবলি হত , কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন আর নরবলি হয় না এই পুজোর।

এখন এখানে ছাগ বলির প্রচলন রয়েছে। এই পুজো নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। এই বিষয়ে রাজপরিবারের সদস্য শিবাজি সিংহদেও জানান , অতি প্রাচীন এই পুজো। তিনি তাঁর দাদুদের কাছ থেকে শুনে আসছেন‌ এই পুজোর ব্যপারে। কথিত আছে সেই সময় নরবলি হত। পুজোর রীতিনীতি অনুযায়ী এই পুজোর দিন রাজপরিবারের কেউ যায় না পুজোর জায়গায়।

আরও পড়ুন : পঞ্চ দোষেই সর্বনাশ! রাতে খাওয়ার সময় এই ৫ ভুলেই বাড়বে ব্লাড সুগার! ডায়াবেটিস থাকলে জানতেই হবে…

এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকার মানুষেরা জানান, প্রায় তিনশো বছর আগে ঝালদার তৎকালীন রাজা শক্তি দেবীর আরাধনা করতেন। খুব জাগ্রত পুজো বলে তাই আশপাশের গ্রাম ছাড়াও জেলা তথা পাশের ঝাড়খণ্ড থেকেও আসেন ভক্তরা পুজো দিতে। এই পুজোর প্রসাদ বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই এখানেই জঙ্গলের মধ্যে রান্না করে খেয়ে বাড়ি যেতে হয় ভক্তদের। এই ভাবেই কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই পুজো।‌

ঐতিহ্যপূর্ণ এই জেলার সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে নানা বৈচিত্র। ‌ তারই মধ্যে অন্যতম ঝালদার এই নরহরি পুজো। যুগ যুগ ধরে রীতি মেনে এই পুজো আয়োজিত হয়ে আসছে। এই পুজোকে ঘিরে ঝালদার মানুষদের আবেগ উৎসাহ থাকে চোখে পড়ার মত। ‌

Durga Puja 2024: বাড়ির মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ, ৫০০ বছরের সেন বাড়ির পুজোয় সমস্ত জোগাড়যন্ত্র করেন পুরুষেরা

উত্তর দিনাজপুর: দুর্গাপুজোর আর ৯২ দিন। আর ৯২ দিন পরেই বাঙালির মনে ফূর্তি-আনন্দের ফোয়ারা! মা আসছেন। এক বছর বাদে মা ফিরছেন বাড়িতে। উত্তর দিনাজপুর জেলার বনেদি বাড়ির প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম সেন বাড়ির পুজো। জেলার সর্বপ্রাচীন পুজো গুলির মধ্যে একটি এই সেন বাড়ির পুজো।

প্রতিবছরই রথের পরের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় সেন বাড়ির পুজোর প্রস্তুতি । এই বাড়ির পুজো আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ বছরের পুরনো। পূর্ববঙ্গের সমস্ত রীতি-নীতি মেনে এ ‘পুজোর আয়োজন করা হয়। জানা যায়, সেন বাড়ির পুজোয় পুজোর সমস্ত জোগাড়, কাজকর্ম সবই বাড়ির পুরুষেরা করে থাকেন। বহু বছর ধরে এমনই রীতিনীতি পালন হয়ে আসছে এই পুজোয়। বাড়ির মহিলাদের মন্দিরের ভিতরে প্রথম থেকেই প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। মন্দিরের বাইরে চাতালে দাঁড়িয়ে মায়ের দর্শন করতে হয় সেন বাড়ির মা, বোনেদের। পূর্ববঙ্গের জমিদার বাড়ির এই পুজোতে এমনই নিয়ম মেনে চলে আসছেন সকলে। পরিবারে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, সে কারণেই পরিবারের সকলেই মেনে চলছেন এই রীতি।

জানা যায় ওপার বাংলার যশোরের জমিদার তারিণী চরণ সেনের পূর্ব পুরুষেরা দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন । এরপর তাঁদের বংশধর সুরেন্দ্রনাথ সেনও পুজো করেছেন বাংলাদেশেই । এখন আর বাংলাদেশে নেই, নেই জমিদারি প্রথা। সেখানকার সব কিছু ছেড়ে তাঁরা এপার বাংলার এই রায়গঞ্জ শহরে বসতি করেছেন। একান্নবর্তী এই সেন পরিবারের বহু সদস্যই কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে থাকলেও পুজোর কয়টা দিন সকলেই আসেন রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরের বাড়িতে। এই সেন বাড়ির ৫০০ বছর পার হলেও একবারের জন্যও বন্ধ হয়নি।

পিয়া গুপ্তা