কোচবিহার: “বিজেপির উদাসীনতার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই; প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোচবিহারে বক্তব্য রেখেছেন কিন্তু সাম্প্রতিক ঝড়ের বিষয়ে চুপ থেকেছেন, যা জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ধ্বংস করেছে ৷’’ উত্তরবঙ্গের প্রচারে এই ইস্যুতে সরগরম তৃণমূল কংগ্রেস।
কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভার পরপরই, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছে, আবাস যোজনার তহবিলের উপর শ্বেতপত্র প্রকাশে ব্যর্থতা, আদতে তাদের মিথ্যাকেই আরও প্রকট করে তোলে। ২০২১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যে বাংলাকে টাকা দিয়েছে, তার প্রমাণস্বরূপ, গত ১৪ মার্চ, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য একটি খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন।
আরও পড়ুন– উত্তরবঙ্গে প্রচারে ঝড় তুলবেন ! তিনটি সভা ও রোড শো শেষ বেলায় অভিষেকের
কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণের আগে, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন:
21 days, 500+ hours, 30,000 + minutes and still, @BJP4India‘s silence echoes.
Rather than announcing MORE MISLEADING JUMLAS, it’s high time the GUARANTOR delivers a white paper on MGNREGA and AWAS PLUS post their 2021 defeat in WB. #ReleaseWhitePaper
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) April 4, 2024
বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে, #ReleaseWhitePaper বাংলার সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডে শীর্ষস্থানে চলে এসেছিল, কারণ তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা সরব হয়ে বিজেপির কাছে উত্তরের দাবি জানিয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে, নরেন্দ্র মোদির বাংলা সফরের হ্যাশট্যাগ নিয়ে প্রতিযোগিতার পরেই, এই হ্যাশট্যাগটি সারা ভারতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল, যা বিজেপির তুলনায় মানুষের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতার ইঙ্গিত বলে দাবি তৃণমূলের।
তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন, “500+ hours later, the challenge still stands. PM @narendramodi, Bengal awaits your response. #ReleaseWhitePaper.” AITC National Spokesperson Dr Shashi Panja also took to social media platform X to express her views on this matter. She posted, “500+ hours have passed since Shri @abhishekaitc ‘s challenge, PM @narendramodi did you bring the white papers? #ReleaseWhitePaper.”
তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের তীব্র নিন্দা করেছে এবং সাম্প্রতিক ঝড়ের ফলে জলপাইগুড়ির মানুষের অসুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছে। জলপাইগুড়ির জনসভায়, তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জলপাইগুড়ির মানুষের প্রতি তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জলপাইগুড়িতে তিনি বলেন, ‘‘ঘরগুলো মাটির তৈরি হওয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এই কারণেই আমরা ১১.৩৬ লাখ উপভোক্তার জন্য আবাসের তহবিল রিলিজ করার জন্য জোর দিয়েছিলাম।’’
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শ্বেতপত্র চেয়েছেন। চ্যালেঞ্জের ২১ দিন পর বাংলায় আসা সত্ত্বেও, তিনি নথি দেখাতে ব্যর্থ হন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছিলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার ৪০ লক্ষ বাড়ির জন্য তহবিল অনুমোদন করেছে। তিনি তাঁর নিজের সরকারের বিজ্ঞাপনের বিরোধিতা করছেন, যা কিছু দিন আগে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এই সংখ্যাটিকে ৪.৬৯ লক্ষ বলে দাবি করেছেন।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর তথাকথিত গ্যারান্টিগুলি ভেঙে দিয়ে কুণাল ঘোষ যোগ করেছেন, “নরেন্দ্র মোদি কীভাবে দুর্নীতি এবং পরিবারতন্ত্রের কথা বলতে পারেন? হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, নারায়ণ রাণে, শুভেন্দু অধিকারী, অজিত পাওয়ার, এবং প্রফুল্ল প্যাটেল – এরা সবাই সেই লোক, যাদেরকে বিজেপি নিজেই চোর বলেছিল। এই নেতাদের পেছনে সিবিআই-ইডি বসানো হয়। কিন্তু তারা বিজেপিতে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সব পাপ মাফ হয়ে গেল। এটি মোদির ‘পরিবার’ – যারা তাদের অপরাধমূলক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যকলাপের জন্য মামলা এড়াতে তাঁর কাছে গিয়েছিল। তারা শুধু মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। তারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক কথা বললেও কিছুই করেনি। এমনকী, যখন ভারতের সোনার মেয়ে সাক্ষী মালিক ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি তাঁকে রক্ষা করেছিলেন এবং কোনও ব্যবস্থা নেননি।”
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য তুলে ধরে দলীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিএএ-এর অধীনে আবেদনের অর্থ, নিজের দেশেই আপনাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা এবং সেই সঙ্গে সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর সভা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণে আজ তেমন তেজ ছিল না। এর কারণ, স্পষ্টতই তিনি বুঝে গিয়েছেন যে, তাঁর পক্ষে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয় এবং বাংলার মানুষের কাছে যে বিজেপির কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই, তা-ও দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। তৃণমূল কংগ্রেস যে এইবার বিপুল ব্যবধানে জয়ী হতে চলেছে সে কথা প্রধানমন্ত্রী জানেন, আর সেই কারণেই তাঁর আজকের ভাষণে বিশেষ জোর ছিল না।’’
আরও পড়ুন- মাসির মেয়ের বিয়ে, পার্লারে মেকআপ করে বেরোতেই আঁতকে উঠলেন সবাই ! ঘন লম্বা চুলের দফারফা
বাংলার দুর্দশার প্রতি বিজেপির উদাসীনতায় হতাশা প্রকাশ করে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “বাংলার প্রতি বিজেপির উদাসীনতার কোনও সীমা নেই। প্রধানমন্ত্রী আজ কোচবিহারে এসেছিলেন, যার ঠিক পাশেই জলপাইগুড়ি, যেখানে ঝড়ে বিপর্যস্ত গ্রামের পর গ্রাম। এখানকার মানুষরাই গত নির্বাচনে বিজেপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছিল। অথচ প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া তো দূরের কথা, মানুষগুলোর দুর্দশার কথা একবার উল্লেখও করলেন না। জলপাইগুড়ির দুর্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে একবারও উচ্চারিতও হল না। অন্যদিকে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যস্ত এলাকায় পৌঁছন এবং ত্রাণ কার্যে সহায়তা করেন।”
ব্রাত্য বসুর সংযোজন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি অত্যন্ত ভাল মন্তব্য করেছেন, যা আমার কাছে নিতান্তই হাস্যকর ঠেকেছে। তিনি বলেছেন গত ১০ বছরে মানুষ যা দেখেছে, তা বিজেপি যে ঠিক কতটা কী করতে পারে, তার একটা ট্রেলার মাত্র, ‘পিকচার অভি বাকি হ্যায়’। বিজেপি যদি একটা ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টার সিনেমার পরিবর্তে, একটা ২০ সেকেন্ডের ট্রেলার বানাতে ১০ বছর লাগে, তাহলে মানুষের বোঝা উচিত যে, আগামী ২০ বছরেও ওরা কিছুই করতে পারবে না। ওঁর ট্রেলার জুড়ে শুধুই বিদ্বেষ, মিথ্যাচার আর জুমলাবাজি ছাড়া আর কিছু নেই।”