সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: উত্তরবঙ্গে কার্যত মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার উত্তরবঙ্গের পর দক্ষিণবঙ্গ নজর দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড। ২৫ এপ্রিল থেকেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় সভা ও সাংগঠনিক বৈঠক শুরু করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যার মধ্যে পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান এওসভা – রোড শো করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর, ২৩  এপ্রিল উত্তরবঙ্গের নকশালবাড়িতে সভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই মালদহের কালিয়াচকেও সভা করবেন অভিষেক। ২৪ এপ্রিল  মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রের জন্য সভা ও রোড শো করার কথা অভিষেকের। জঙ্গিপুরে সভা করবেন অভিষেক এবং জলঙ্গিতেও রোড শো করার কথা রয়েছে তাঁর।

আরও পড়ুন– রাশিফল ২২ এপ্রিল – ২৮ এপ্রিল: দেখে নিন এই সপ্তাহ নিয়ে কী জানাচ্ছেন জ্যোতিষী চিরাগ দারুওয়ালা

এরপর ২৫ এপ্রিল থেকেই টানা কর্মসূচি রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও। শুধু তাই নয়, অভিষেকের নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারেও কর্মসূচি রেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর ২৫ এপ্রিল পুরুলিয়ায় সাংগঠনিক বৈঠক করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ২৭ এপ্রিল বীরভূমের দুবরাজপুরে রাজনৈতিক সভা অভিষেকের। প্রসঙ্গত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  ও বীরভূমে প্রচার শুরু করছেন আগামিকাল, মঙ্গলবার থেকে। ২৭ এপ্রিল বীরভূমের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরেও রোড শো করার কথা রয়েছে অভিষেকের। ২৮  এপ্রিল তাঁর নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে বেশ কিছু কর্মসূচি রাখছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৯ এপ্রিল উলুবেড়িয়ায় নির্বাচনী সভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন– সপ্তাহভর তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি, বুধবার থেকে গরম আরও বাড়বে! শুকনো গরম ও অস্বস্তি চরমে পৌঁছবে

মূলত এই সভা উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের জন্যই করতে চলেছেন অভিষেক। তারপর ৩০ এপ্রিলেও বেশ কিছু কর্মসূচি রাখতে চলেছেন তিনি। যদিও ভোটের প্রচারের একদম শেষ লগ্নে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ফের যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১ মে মালদহ উত্তরের চাচলে নির্বাচনী সভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জেও রোড শো করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ২৩ এপ্রিল থেকেই বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, তমলুক এবং আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের জন্য নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিচ্ছেন।

আবীর ঘোষাল, তমলুক: শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুকে আজ, সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় বৈঠক। হলদিয়ায় ২০২২ সালের মে মাসে সভা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । রানিচক সংহতি ময়দানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

হলদিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক, কর্মচারীদের নিয়ে সম্মেলন করে আইএনটিটিইউসি। সেই প্রথমবার শ্রমিকরা তাঁদের সমস্যা রাজ্য নেতৃত্বকে সরাসরি জানানোর সুযোগ পেয়েছিল। শ্রমিকদের সমস্যা ও তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে সেই সমাবেশে বার্তা দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন৷ হলদিয়া যে লোকসভার অন্তর্ভুক্ত তা হল তমলুক ৷ একদা যার সাংসদ ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই তমলুক লোকসভায় বিজেপি এবার প্রার্থী করেছে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ৷ আর তৃণমূলের হয়ে লড়াই করছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন– উত্তরবঙ্গের ভোট প্রচারে ঝড় তুলতে চান মুখ্যমন্ত্রী, কোচবিহারের রাসমেলার মাঠে আজ সভা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

গত কয়েক বছর ধরেই হলদিয়ার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠে আসে। এমনকী, এর আগে  কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে আইএনটিটিইউসি-র দুই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর সংগঠনে রদবদল থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চলে স্বচ্ছতা আনতে টোল-ফ্রি নম্বর চালু করে আইএনটিটিইউসি। রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেকের হলদিয়া সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনে হলদিয়ায় জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সেখানে ঘাসফুল ফোটানো সম্ভব হয়নি। আবার হলদিয়ায় অধিকারী পরিবারের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়াও হলদিয়া পুরসভার বর্তমান পুরবোর্ডের মেয়াদও শেষ হয়েছে। তাই লোকসভা ভোটের আগে অভিষেকের হলদিয়া সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়েও কোনও সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন– সপ্তাহ জুড়েই তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি দক্ষিণবঙ্গে! চরম গরম ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া

হলদিয়ার রানিচকের সংহতি ময়দানের জনসভায় যোগ দেন অভিষেক। সেখানে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের প্রতিটা শব্দ আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। আপনাদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ, পরামর্শ আমি অক্ষরে অক্ষরে শুনেছি। কী করে শুনেছি তা আমার উপর ছেড়ে দিন। গতকাল যেমন এক জন তৃণমূল কর্মী বলছিলেন, ‘‘সমাবেশকে ঘিরে দল যে পরিশ্রম করেছে, তা যদি স্থানীয় নেতৃত্ব করত তা হলে আমরা হলদিয়ায় ৩০ হাজার ভোটে জিততাম।’’ ভুল বলছি? আপনারা যা বলছেন তা আমাদের কানে পৌঁছেছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘কে অনুগামী সেজে দলের ভিতরে ঢুকে দলের বারোটা বাজিয়েছে তা আমার ফোনে সব রয়েছে। আমি আসতে আসতে পাঁচ-ছয় জন অনুগামীকে চিহ্নিত করেছি। তারা এই সভাতেও রয়েছে। পয়লা মে কে কোন কারখানায় পদ্মফুলের হয়ে বিএমএসের ঝান্ডা তুলেছে আর তৃণমূলে ছাপ দিয়েছে তার তথ্য আমার কাছে আছে।’’ নাম না করে শনিবার হলদিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে নিশানা করেন অভিষেক। তাঁর জন্য শ্রমিকদের সর্বনাশ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে এক জন রাজ্য প্রশাসন আর দলের মাঝে দেওয়াল তুলে দাঁড়িয়েছিল। আমি আজ এসে এই দেওয়াল চূর্ণ করে দিয়ে গেলাম। আজ থেকে আপনাদের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হল।’’ তবে লোকসভা জুড়ে কী চেহারা হয়, সেটাই এখন দেখার।