মানিক সাহা

Tripura News: ‘৩৫ বছরের শাসনে ত্রিপুরায় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল কমিউনিস্টরা…’ বললেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী

আবীর ঘোষাল, আগরতলা: ‘‘দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের শাসনে রাজ্যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল কমিউনিস্টরা। আর এখন কংগ্রেসের সুরে তাল মিলিয়ে বলছে গণতন্ত্রের কথা। তাদের সময়কালে শুধু খুন, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ-সহ অস্থির পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্যের মানুষ। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার সবসময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছে।’’ বিলোনিয়ায় ভারতীয় জনতা মহিলা মোর্চার উদ্যোগে আয়োজিত শক্তিস্বরূপা কর্মসূচিতে সম্বোধন করতে গিয়ে একথা বলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে ভারতীয় জনতা পার্টি মনোনীত প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেবের সমর্থনে এই নির্বাচনী সভার আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন– নজির বিহীন! লোকসভা ভোটে ১০০ শতাংশ বুথেই ওয়েবকাস্টিং, নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের

সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কমিউনিস্টরা প্রায় সময় বলে যে ত্রিপুরাতে গণতন্ত্রের হরণ হয়েছে। আপনাদের জানিয়ে রাখি কমিউনিস্টদের একটা বই আছে। যেখানে প্রথমেই লেখা রয়েছে যে আমাদের একনায়কতন্ত্র চালাতে হবে। আর এই একনায়কতন্ত্র কিভাবে চালাবে তারা? সেই শ্রমজীবী অংশের মানুষকে নিয়ে বিপ্লবের ডাক দিয়ে ওরা সরকারে থাকতে চায়। রাজ্যে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের শাসনে কি গণতন্ত্র তারা চালিয়েছিল সেটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। নারীদের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করেছে তারা। প্রতিটি নির্বাচনের সময়ে খুন, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই রাজ্যের মানুষ। কংগ্রেসও বলছে দেশে নাকি গণতন্ত্র নেই। জরুরী অবস্থার সময়ে কি করেছিল তারা। সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেতা নেত্রী যারা প্রতিবাদ করেছিলেন তাদেরকে জেলে পুরা হয়েছিল। আর এখন তারা বলছে গণতন্ত্রের কথা। ২০২৩ সালে রাজ্যে কিভাবে শান্তিপূর্ন নির্বাচন করা যায় সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। কোন ধরণের সহিংসতা বা অঘটন ছাড়া কিভাবে এত শান্তিপূর্নভাবে নির্বাচন করা গেছে সেটাই সারা দেশে আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কমিউনিস্টদের দীর্ঘ শাসন ও কংগ্রেস জোট সরকারের ৫ বছরের শাসনে কোন অঘটন ছাড়া নির্বাচন করা যায় নি।

আরও পড়ুন– আজ দুই দিনাজপুরে দুই সভা মমতার, নজরে বালুরঘাট ও রায়গঞ্জ

জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ‘‘কমিউনিস্টরা সায়েন্টিফিক রেগিং নিয়ে গর্ববোধ করতো। বিভিন্নভাবে মানুষের মনের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করতে দেয় নি তারা। এমনকী ভোট দিতেও বাধা দিয়েছে। সেই জায়গায় ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি কীভাবে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হয়। বক্সনগর ও ধনপুরের উপনির্বাচনেও কোনও ধরণের অনভিপ্রেত ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। বক্সনগরে বিরোধীদের জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ৩৫ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী। ধনপুরেও গতবারের চাইতে ভোটের হার কয়েক গুণ বেড়েছে। ১৮ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন আমাদের প্রার্থী। গণতন্ত্র কাকে বলে সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গণতন্ত্র রক্ষার মাধ্যমে কীভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হয় সেটা শিখিয়েছেন আমাদের। যেখানে যেখানে কমিউনিস্টরা রাজত্ব করেছে সেখানে গণতন্ত্র হরণ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও সুদীর্ঘ বছর শাসন করেছিল তারা। আর এখন তৃণমূল কংগ্রেসের শাসন একেবারে হুবহু কমিউনিস্টদের কার্বন কপি।’’

মানিক সাহা এদিন আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসন সংখ্যা রয়েছে। গতবার এই ৪২টির মধ্যে ১৮টি আসন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় এবার সেখানে আরও আসন সংখ্যা বাড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ডাঃ সাহা। তিনি বলেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে ৩৭০টি আসনের টার্গেট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই লক্ষ্যমাত্রার অধিক আসন নিয়ে কেন্দ্রে সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। বিরোধীদের পায়ের তলায় এখন আর জমি নেই। তাদের কাছে কোন ইস্যুও নেই। তাই অস্তিত্ব রক্ষায় এখন INDIA জোট করেছে তারা। কংগ্রেস বলছে তারা সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলায় নি, তারা INDIA জোটে শামিল হয়েছে। এ এক অদ্ভুত রাজনীতি। কিন্তু সেই INDIA থেকে এখন ‘A’ চলে গিয়েছে। আস্তে আস্তে সেই জোটও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মানুষ এখন সব বোঝে। যে সরকার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারবে, শান্তি বজায় রাখতে পারবে তাদের সঙ্গেই থাকবে মানুষ। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার দুটি আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’’

সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব, বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী মিমি মজুমদার-সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব।