কী এই গ্লুকোমা? সতর্ক না হলেই চরম বিপদ! পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

Glaucoma: নীরব ঘাতক…! কেড়ে নিতে পারে দৃষ্টিশক্তি! কী এই গ্লুকোমা? সতর্ক না হলেই চরম বিপদ! পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

গ্লুকোমা হল সাধারণত চোখের রোগ। যা অপরিবর্তনীয় ভাবে চোখের নার্ভের ক্ষতি করে দিতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে দৃষ্টিশক্তি। আর সময়ে এর চিকিৎসা করা না হলে অন্ধত্ব পর্যন্ত আসতে পারে। সেই কারণেই এই রোগকে ‘নীরব দৃষ্টি হরণকারী’ নামেও ডাকা হয়। এই রোগের বিষয়ে কথা বলছেন ম্যাক্সভিশন সুপার স্পেশ্যালিটি চোখের হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. রানি মেনন। (Dr. Rani Menon, Managing Director, Maxivision Super Specialty Eye Hospitals)

সারা বিশ্বে ৭৬ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে প্রথম দিকে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা উচিত। গ্লুকোমার সঙ্গে বর্ধিত ইন্ট্রাঅক্যুলার প্রেশারের যোগ রয়েছে। তবে এটা ছাড়াও তা ঘটতে পারে। কারণ বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, জাতি এবং ডায়াবেটিসের মতো অবস্থা কিন্তু ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা, শিক্ষা এবং সচেতনতা জীবনের মান উন্নত করতে পারে। রোগ যাতে বৃদ্ধি না হয়, তার জন্য উপযোগী হতে পারে আই ড্রপ, লেজার থেরাপি এবং সার্জারি। চোখের স্বাস্থ্য যাতে ভাল থাকে, তার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম বয়সে এই রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখে নেওয়া যাক।

গ্লুকোমার সবথেকে বিপজ্জনক দিক:
প্রথম দিকে গ্লুকোমার কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। পরিধি থেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে শুরু করে। যা ধীরে ধীরেই হতে থাকে। যদি তা নির্ণয় করা না যায়, তাহলে তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে টানেল ভিশন অথবা ব্লাইন্ড স্পটের মতো উপসর্গও প্রকট হতে শুরু করে। আর এই ক্ষতি ব্যাপক এবং স্থায়ী হয়। এর থেকেই বোঝা যায় নিয়মিত চোখ পরীক্ষার গুরুত্ব। এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা জরুরি।

আরও পড়ুন-   মাত্র ৭ দিনেই জব্দ! ধমনী থেকে নিংড়ে বার করবে কোলেস্টেরল, শিরায় জমে থাকা ময়লা হবে সাফ, রোজ পাতে রাখুন এই খাবার

বর্ধিত ইন্ট্রাঅক্যুলার প্রেশার (আইওপি)-এর সঙ্গে যোগ রয়েছে গ্লুকোমার:
প্রাথমিক ভাবে গ্লুকোমার যোগ রয়েছে বর্ধিত ইন্ট্রাঅক্যুলার প্রেশার (আইওপি)-এর সঙ্গে। যা অপটিক নার্ভের ক্ষতি করে দিতে পারে। যদিও এমনটা নয় যে, যাঁদের হাই আইওপি রয়েছে, তাঁদের যে গ্লুকোমা হবেই, এর কোনও মানে নেই। উল্টে সাধারণ আইওপি থাকা মানুষরাও কিন্তু গ্লকোমায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই জটিলতার জন্য পৃথক ঝুঁকির কারণগুলি বোঝা জরুরি। এর মধ্যে অন্যতম হল বয়স (৬০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি), পারিবারিক ইতিহাস, জাতি (আফ্রিকান আমেরিকান এবং হিস্প্যানিকদের ঝুঁকি বেশি) এবং ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন-সহ আগে থেকেই থাকা কোনও রোগ।

এই পরিস্থিতিতে কী কী করণীয়?

নিয়মিত চোখ পরীক্ষা:
সকলের জন্য এমনকী উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের জন্য নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার আগেই কম্প্রিহেনসিভ চোখ পরীক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ে গ্লুকোমা নির্ণয় করতে সক্ষম। এই পরীক্ষার মধ্যে পড়ে ভিস্যুয়াল অ্যাকুইটির জন্য পরীক্ষা, আই প্রেশার এবং অপটিক নার্ভের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা। অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি (ওসিটি)-র মতো অ্যাডভান্সড ডায়াগনস্টিক টুল এবং ভিস্যুয়াল ফিল্ড টেস্ট অপটিক নার্ভ ও রেটিনার বিস্তারিত ছবি ও পরীক্ষা করে দেয়। রোগ আদৌ বাড়ছে কি না, সেদিকে নজর রাখা যায়।

আরও পড়ুন- ১ টাকাও খরচ হবে না, বর্ষায় এটিই ‘ধন্বন্তরি’! এক চিমটি দিলেই লাল লাল ফুলে ভরবে গাছ, পোকামাকড় ঘেঁষবে না ধারেকাছে, গ্যারান্টি…!

গ্লুকোমার বিষয়ে সচেতনতা এবং শিক্ষা:
গ্লুকোমার বিষয়ে সচেতনতা এবং শিক্ষা জরুরি। কারণ এর ফলে রোগ নির্ণয় দ্রুত করা সম্ভব। রোগীর জীবনের উপর প্রভাব পড়ে। গ্লুকোমার চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম হল আইওপি কমানোর জন্য প্রেসক্রিপশন আই ড্রপ, লেজার থেরাপি এবং সার্জিক্যাল পদ্ধতি। যা অপটিক নার্ভের ক্ষতিও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। যদিও এই চিকিৎসা পদ্ধতি দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে না। তবে তা রোগের বৃদ্ধির হার কার্যকর ভাবে মন্থর করে দিতে পারে।

জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রাম:
গ্লুকোমার বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রাম। তথ্য এবং সম্পদ প্রদান করে এই প্রোগ্রামগুলি নিয়মিত আই-স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব বর্ণিত করে। শুধু তা-ই নয়, চোখের স্বাস্থ্যের গুরুত্বও মানুষকে জানায়। নিজেদের চোখের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষ সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রত্যেকের জন্য গ্লুকোমার সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঝুঁকির বিষয়গুলি বুঝে নিয়ে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এতে অন্ধত্বও প্রতিরোধ করা সম্ভব।