পশ্চিম মেদিনীপুর: তখন পরাধীন ভারতবর্ষ। দেশের জন্য গর্জে উঠছে যুবক যুবতীরা। লক্ষ্য পরাধীনতার গ্লানি থেকে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করা। দিকে দিকে সংঘটিত হচ্ছে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এগিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুরের তরুণ প্রজন্ম। বাংলা-ওড়িশা সীমানা এলাকা দাঁতনে আর্ত পীড়িত মানুষের সেবা এবং শরীর চর্চা ও এলাকায় পড়াশোনোর সংস্কৃতি তৈরি করতে কয়েকজন তরুণেরা। বাঁশ, মাটি দিয়ে চালাঘর তৈরি করে শুরু করলেন পাঠাগার। আজ থেকে প্রায় ৯৮ বছর আগে ১৯২৬ সালে দাঁতনের বুকে তৈরি হয় লাইব্রেরী। আর্ত-পীড়িত মানুষদের শুধু সেবা আর্তি শুধু নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই লাইব্রেরীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে একটি সাধারণ সভা আয়োজিত হয়। এরপর থেকে একাধিক সভার পর সিদ্ধান্ত হয় দাঁতনে সমাজ সেবামূলক এবং পাঠাগারের জন্য একটি ক্লাব গঠন করা হবে। ১৯২৬ এর জুন মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় দাঁতন সমাজ সেবক সমিতি ও সাধারণ পাঠাগার। এই পাঠাগারের দুটি শাখা, একটি গ্রামীণ সাধারন মানুষদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করা অর্থাৎ সমাজ সেবামূলক কাজ অন্যটি পাঠাগার। শুধু তাই নয়, মানুষের সেবা করার পাশাপাশি, পাঠাগারে গড়ে ওঠে ব্যায়ামাগার। প্রথম পর্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা অনেকেই যুক্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে।
শুধু শরীর চর্চা কিংবা পড়াশোনা নয়, এই ব্যায়ামাগারের আড়ালে চলতো ব্রিটিশ তাড়ানোর নানা ফন্দি। চলত মিটিং। ব্রিটিশ শাসকদের চোখকে ফাঁকি দিতে আলোচনা চলত এখানে। তৎকালীন সময়ে চরমপন্থী এবং নরমপন্থী দুই মনোভাবাপন্ন বিপ্লবীরা এখানে বসেই আলোচনা চালিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে প্রায় শতবর্ষের দিকে পা বাড়ানো এই লাইব্রেরীর স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা যথেষ্ট। এরপর ধীরে ধীরে আড়ে বহরে বাড়তে থাকে। বর্তমানে সরকার অধীনস্থ এই লাইব্রেরী। রয়েছে বেশ হাজারও বই, বহু মানুষ এখানে আসেন পড়াশোনোর জন্য।
তবে, প্রাচীন নথি ঘেঁটে জানা যায়, এই পাঠাগারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অগ্নিযুগের বীর বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর। তিনি পাঠাগারের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এখনও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে দাঁতনের টাউন লাইব্রেরী। অবিভক্ত মেদিনীপুরের ইতিহাস ঘাটলে জ্বলজ্বল করে ওড়িশা সীমানা এলাকার এই লাইব্রেরির কথা, যা সাধারণ মানুষের সেবার জন্য নয়, পরাধীনতার গ্লানি থেকে দেশকে রক্ষা করতে যার ভূমিকা ছিল চিরস্মরণীয়।
রঞ্জন চন্দ