Bangla Video: এই প্রকল্প দিনের আলো দেখলে পাল্টে যেত বাঁকুড়া

বাঁকুড়া: রুক্ষ নদী গন্ধেশ্বরী। এক ফোঁটা জল নেই নদীতে। একটি নদী পাড়ের যে সুযোগ সুবিধা বাঁকুড়া শহরের মানুষের পাওয়ার কথা তার একটাও পাচ্ছেন না তাঁরা। প্রতিবছর একটু একটু করে বাড়ছে গরম! একপ্রকার শুকিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট নদী গন্ধেশ্বরী। গন্ধেশ্বরী নদীকে বাঁচানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘গন্ধেশ্বরী বাঁচাও কমিটি’।

বাঁকুড়া শহর এবং গন্ধেশ্বরী ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্থানীয় কিছু দূরদর্শী মানুষ তৎকালীন সেচ মন্ত্রী গণেশ মণ্ডলকে লিখিতভাবে জানান। ২০০৬-০৭ অর্থবর্ষে বাঁকুড়ার গন্ধেশ্বরী বিষয়টি বিধানসভায় তোলা হয়। এরপর ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে দুটি বাজেট করে রাজধানীতে পাঠানো হয়।

আর‌ও পড়ুন: ভোটের আগে কী চাইছে ময়ূরেশ্বরের মানুষ?

দিল্লি থেকে অনুসন্ধান করে রিপোর্ট তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয় আইটি খড়গপুরকে। আইআইটি খড়গপুরের বিশেষজ্ঞরা কীভাবে গন্ধেশ্বরী নদীকে ব্যবহার করে বাঁকুড়ার সেচের জলের অভাব এবং পানীয় জলের অভাব দূরীকরণ করা যায় তার একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেন। সেই নকশা আবার সংশোধিত হয়ে ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে বিধানসভায় পাস হয়। এই প্রজেক্টটির জন্য বরাদ্দ করা হয় টাকা। প্রজেক্টটির মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল দ্বারকেশ্বর নদ এবং গন্ধেশ্বরী নদী। তবে গন্ধেশ্বরী নদীতে আলোকপাত করলে জানা যাবে, মাত্র ৩২ কিলোমিটার লম্বা গন্ধেশ্বরী। শালতোড়া যেতে কলুর বাঁধ থেকে উৎপত্তি হয়ে এই নদী এসে দ্বারকেশ্বর নদে মিলেছে বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন বাঁকি গ্রামের দুমওনি ঘাটে। তৎকালীন সময়ে গ্রামাঞ্চলে নদীর চিত্র অন্যরকম হলেও শহরাঞ্চলে প্রবেশ করতেই যেন নদীর গলা টিপে ধরা হয়েছিল। একটু একটু করে সচেতনতার অভাবে নদী বুজতে শুরু করেছিল। সেই কারণেই ২০০৮ সালে শুরু হয় গন্ধেশ্বরী নদীকে বাঁচিয়ে তোলার বিরাট পরিকল্পনা।

ছাতনার ঝুঁঝকা গ্রামের কাছে গন্ধেশ্বরী নদীর ওপর তৈরি করার কথা ছিল একটি ড্যাম। সেই ড্যাম থেকে বেরিয়ে যাবে দুটি ক্যানাল। কথা ছিল, একটি ক্যানেল চলে যাবে বাঁকুড়ার প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী কেঞ্জাকুড়া জনপদের দিকে। ওপর ক্যানেল বয়ে যাবে দক্ষিণ দিকে। এরপর নদীর যে অংশটি বয়ে বাঁকুড়া শহরের দিকে ডুকছে, সেই সেই অংশটি এসে মিশছে দ্বারকেশ্বর নদের সঙ্গে দোমওনি ঘাটে। এই দ্বারকেশ্বর নদ এবং গন্ধেশ্বরী নদীর সংযোগস্থলে আরও একটি ড্যাম হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল দুর্গাপুর ব্যারেজের মত অনুকরণ করে তৈরি করা হবে বাঁকুড়াতে ব্যারেজ। আটকে রাখা হবে জলকে, সেই জলই পরবর্তীকালে ব্যবহার করার কথা ছিল পানীয় জল হিসেবে এবং সেচের কাজে।

আর‌ও পড়ুন: অফ সিজনে ব্যস্ততা তুঙ্গে! মৎস্যজীবীদের হঠাৎ হলটা কী?

পুরো পরিকল্পনাটি স্বপ্নের মত মনে হলেও একসময় সত্যি হবে বলে ভাবা হত। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে যখন বাঁকুড়ার গরম অসহ্য, তার সঙ্গে ভৌম জলস্তর ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে, তখন মনে হতেই পারে এই বাঁধ যেন আবারও জাগিয়ে তুলত গোটা শহরটাকে। উন্নতি হতে পারত আর্থসামাজিক দিক দিয়ে। পরিবর্তন হত আবহাওয়ার। মিটত জলে সমস্যা। মেদিনীপুর শহরেও কংসাবতী নদীর উপর তৈরি হয়েছে অ্যানিকেট ড্যাম। পাল্টে গেছে শহরের চিত্র। সবুজ হয়েছে ধরিত্রী। বাঁকুড়ায় এই প্রকল্প রূপায়িত না হওয়ার হতাশা এখনও অনুভব করছেন সাধারণ মানুষ।

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী