মাথার চুল কামাচ্ছে মেয়ে 

Offbeat News: সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সব নিয়ম মেনে মাথা মুড়িয়ে বাবার পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন মেয়ের

মৈনাক দেবনাথ, নদিয়া: সমস্ত সামাজিক বাধা পেরিয়ে মাথা কামিয়ে বাবার অন্ত্যেষ্টির কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নিবেদিতা ঘোষ দাস। শান্তিপুর শরৎকুমারী স্কুল লেলিন সরণির বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সি নারায়ণচন্দ্র ঘোষের চার মাস আগে হৃদযন্ত্রের গোলযোগ হয়। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছিল যে একাধিক চিকিৎসকদের দেখিয়েও কোনও ফল হয়নি। প্রত্যেকেই জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন বড়জোর মাস কয়েক আয়ু আছে তাঁর।

স্বাভাবিকভাবেই এই খবর শুনে পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও বাবার কিছু শেষ ইচ্ছের কারণে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তাঁর ছোট মেয়ে।পরিবার সূত্রে জানা যায়, নারায়ণবাবু অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসকেরা সময় বেঁধে দেওয়ার পরে তিনি তাঁর মেয়েকে বলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর পরের সম্পূর্ণ ক্রিয়াকর্ম তার মেয়েই যেন করেন। এছাড়াও তিনি তার কর্নিয়াগুলি দান করে গিয়েছিলেন যাতে তাঁর কর্নিয়ার জোরে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান অন্য কোনও দৃষ্টিহীন মানুষ।

এরপর নারায়ণবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর ছোট মেয়ে নিবেদিতা বাবার সৎকার থেকে শুরু করে পুত্রসন্তানদের মতো একইভাবে চুল বিসর্জন দিয়ে সব নিয়ম অনুসরণ করে বাবার সমস্ত পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করলেন তিনি। শুধু তাই নয়, বহুদিনের আর একটি ইচ্ছেও একইসঙ্গে পূরণ হল তাঁর। চুল কামানোর পরে সেই চুল ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে দান করেন তিনি।

আরও পড়ুন : আরাধ্য দেবতার আসনে বিশ্বকবির বিগ্রহ, এই মন্দিরে পূজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যদিও সামাজিকভাবে বাবার মৃত্যুর পরে কন্যাসন্তানদের এভাবে পারলৌকিক কাজ করতে সচরাচর দেখা যায় না, প্রথা ভেঙে এই ধরনের ব্যতিক্রমী কাজ করার জন্য কোন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে নিবেদিতা জানান, “এটা আমার বাবা বলে গিয়েছিলেন আমি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছি। কন্যাসন্তানই আমার মুখাগ্নি করবে। আমার বাবা আমাকেই বলে গিয়েছিলেন। দিদি এসেছিলেন। দিদিও তাঁর সাধ্যমতো কাজ করে গিয়েছেন। পরিবার-সহ আত্মীয়স্বজনেরাও উচ্ছ্বসিত এই ছকভাঙা কাজে।

একজন পুত্রসন্তান যা যা করেন, আমি মেয়ে  হয়ে আমার বাবার জন্য সেই কাজগুলিই করেছি”। প্রথাগত রীতি ভুলে ব্যতিক্রমী কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তার পরিবার-সহ আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকেও। তাঁরা প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত ইচ্ছে থাকে। নিজের বাবার জন্য এই কাজ করেছেন। তার জন্য খুশি সকলেই।