ডোকরার কাপপ্লেট

Dokra Art: ভয়ঙ্কর সুন্দর শিল্প! দেখুন ডোকরার জটিল প্রক্রিয়া

বাঁকুড়া: ডোকরা বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাঁকুড়া শহরের উপকন্ঠে মডেল গ্রাম বিকনার শিল্পীদের কর্মব্যস্ততার ছবি। তবে জেনে নেওয়া যাক ঠিক কীভাবে তৈরি করা হয় চোখ ঝলসানো ডোকরা শিল্পদ্রব্য। প্রথমত মাটির ছাঁচ তৈরি করা হয়, এরপর বাজারজাত ধুনো ৩০০ টাকা কিলো দামে কিনে নিয়ে আসেন শিল্পীরা। সেই ধুনোকে টেনে লম্বা করে আগুনে গরম করে মাটির ছাঁচের উপরে মুড়ে ফেলে পরত তৈরি করা হয়। এবার ধুনোর পরতকে আগুনে গরম করা হয়। তারপর ধীরে ধীরে টিনের পাত দিয়ে ধুনোর প্রলেপের উপর নকশা কাটা হয়। এবার বাজারজাত মোম ৬০০ টাকা কিলো দরে কিনে নিয়ে এসে তৈরি করা হয় মোমের সুতো। তারপর সেই মোমের সুতোকে খুবই সন্তর্পনে এবং শৈল্পিক ছোঁয়ায় বসানো হয় মাটির ছাঁচ দেওয়া ধুনোর প্রলেপের উপরে। দেখতে খুবই সুন্দর লাগে এই সময়।

এরপরে এই প্রোডাক্ট’টাকে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয় স্তরে স্তরে। ভাটি তৈরি করে পিতল গলানো হয় এবার। বাজার থেকে এই ধাতু প্রায় ৬০০ টাকা কেজি দরে কিনে আনেন শিল্পীরা। এবার পিতলের প্রলেপ দিয়ে তাতে পালিশ করলেই চলে আসে ডোকরার চোখ ঝলসানো রং। প্রতি পিসে ১০০ টাকায় ২০ টাকার মত লাভ থাকে বলে জানিয়েছেন প্রবীণ ভোকরা শিল্পী সুবল কর্মকার। মূলত পাইকারি দরে বিক্রি করলে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পান বিকনার শিল্পীরা।

আর‌ও পড়ুন: পাঁচদিন ধরে গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, জল না পেয়ে পথ অবরোধ

সুদূরঅতীতে বাঁকুড়ার এই গ্রামে ডোকরা শিল্পের প্রচলন হয়েছিল। কারোর মতে ১৫০ বছর বা আবার কেউ বলেন তারও বেশি। তবে দিন, মাস এবং বছরের হিসেবে সময় যাই হোক না কেন দীর্ঘ এই যাত্রা পথে একটু একটু করে বদলেছে বিকনার ডোকরা শিল্পীদের কাজের ধরণ। এক সময় যেখানে লক্ষ্মীর ভাঁড়, চাল মাপার পাই কিংবা হাতি, ঘোড়া এবং দেবদেবীর মূর্তি তৈরির কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ তার পরিধি অনেক বেড়েছে। মানুষের চাহিদা ও আগ্রহের কারণে নিজেদের শিল্পকর্মকে একটু একটু করে বদলে ফেলেছেন এই গ্রামীণ শিল্পীরা।

ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখন এখান তৈরি হচ্ছে সুদৃশ্য কারুকাজ সমৃদ্ধ সোপ কেস, অ্যাসট্রে, ঘর সাজানোর নানান জিনিস। তবে বিশেষ চাহিদা রয়েছে দুর্গার। এছাড়াও বাঁকুড়ার বাজার ছাড়াও বিষ্ণুপুর এবং বিশ্ব বাংলাতে বড় লট করে শিল্পদ্রব্য নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই সচ্ছল হয়েছে শিল্পীদের।

বাঁকুড়া শহরে যদি আসেন, তাহলে অবশ্যই একবার সকাল সকাল চলে আসুন বাঁকুড়া-২ ব্লকের হেভিরমোড় পেরিয়ে বিকনা গ্রামে। এখানে রয়েছে ডোকরা শিল্পীদের মডেল গ্রাম। ৮৫টি পরিবার এবং ২৫০ শিল্পী। এই গ্রামে এলে সকাল থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত দেখতে পাবেন তাঁদের কর্মব্যস্ততা এবং প্রাচীন ডোকরা শিল্পের খুঁটিনাটি। পুনরুজ্জীবিত হবে আপনার শিল্প পৃষ্ঠপোষকতা।

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী