বর্তমান প্রধান শিক্ষক মধুসূদন পাল।

Bangla Video: শিক্ষক-দারোয়ান-রাঁধুনি সব তিনিই! ভিলেন রাস্তার জন্য প্রধান শিক্ষকের এ কী হাল

পশ্চিম বর্ধমান: ধারে ভারে কলকাতাকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে আসানসোল। এটি রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরসভা এলাকা। অথচ সেই আসানসোল পুরসভা এলাকার সরকারি স্কুলের এমন বেহাল দশা দেখলে আপনি চমকে উঠবেন। যা দেখে চোখে জল চলে আসতে পারে। আবার সেই স্কুলে দাঁড়িয়ে এক শিক্ষকের অসম লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেও ইচ্ছে করবে আপনার।

শিক্ষকতা মানে যে বহু দায়িত্ব তা একাই বুঝিয়ে চলেছেন মধুসূদন পাল। আসানসোলের ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বিনোদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন মধুসূদনবাবু। তিনিই স্কুলের শিক্ষক, ছুটির ঘণ্টা তিনিই বাজান আবার মিড ডে মিলের তদারকি তিনিই করেন।

পড়ুয়াদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে রাঁধুনি হয়ে যান এই প্রধান শিক্ষক। কখনও আবার বিদ্যালয়ের ছুটির ঘণ্টাও তাঁকেই বাজাতে হয়। বন্ধ করতে হয় বিদ্যালয়ের গেট। আবার তাঁকেই দেখা যায় শিক্ষকের ভূমিকায়। যিনি একা পাঁচটি শ্রেণির পড়ুয়াদের পাঠদান করেন!

আর‌ও পড়ুন: আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে ভুগছে বাংলার ফরেস্ট রেঞ্জাররা, বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি

বিনোদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর শিক্ষক না থাকার কারণে এমন‌ই অবস্থা। বিদ্যালয়ের পুরো দায়িত্ব এসে পড়েছে মধুসূদন পালের কাঁধে। তাঁকে বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পড়াতে হয়। আবার মিড ডে মিলের কোনও কর্মী না এলে সেখানে সহযোগিতার জন্য ছুটে যেতে হয়। একা হাতে সারতে হয় বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম। আবার অশিক্ষক-কর্মচারীর কাজ করতেও দেখা যায় তাঁকে।

জানা গিয়েছে, আগে তিনজন শিক্ষক ছিলেন এই স্কুলে। কিন্তু তাঁরা চলে গিয়েছেন। অভিযোগ, এই বিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষক থাকতে চান না। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক পাঠানো হলেও কিছুদিন পর তাঁরা বদলি নিয়ে চলে যান। ফলে মধুসূদন’বাবু যদি কোনও কারণে বিদ্যালয়ে আসতে না পারেন, তাহলে সেদিন স্কুল অঘোষিত ছুটি থাকে। কিন্তু কেন এমন হাল হয়েছে বিনোদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের? সকলের অভিযোগ এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী শুধুমাত্র রাস্তা।

অভিযোগ, মূল রাস্তা থেকে বিদ্যালয় পৌঁছনোর জন্য তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু এই রাস্তাটির চরম বেহাল অবস্থা। পিচ অথবা মোরাম তো দূরে থাক, রাস্তায় ন্যূনতম মাটি পর্যন্ত নেই। পাথুরে পথ অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে পৌঁছতে হয়। অভিযোগ, এমন রাস্তার কারণেই অন্য শিক্ষকরা এই বিদ্যালয়ে আসতে চান না। এলেও বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। আর যার ফলস্বরূপ পাঁচটি শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়ানোর দায়িত্ব যার কাঁধে, তাকেই রাঁধুনীর কাজ সামাল দিতে হয়। করতে হয় আর অন্যান্য কাজও।

নয়ন ঘোষ