History & Heritage: রাজবাড়ি, নাট্যশালা, মন্দির…সুবর্ণরেখার দু’পাশে ইতিহাসের খনি বাঁচিয়ে রাখার জন্য পদক্ষেপ

রঞ্জন চন্দ, পশ্চিম মেদিনীপুর: প্রাচীন জনপদ দাঁতনকে ঘিরে রয়েছে অগাধ কিংবদন্তি। দাঁতনের অলিতে গলিতে রয়েছে নানা ইতিহাস। যা প্রাচীনত্বের ধারাকে বহমান রেখেছে। তবে কালের নিয়মে সেই জৌলুস হারাচ্ছে এই ইতিহাসক্ষেত্র গুলো। ইতিমধ্যেই সেই ইতিহাস বাঁচানোর জন্য তদ্বির শুরু হয়েছে। নবান্নে রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের চিঠি পাঠিয়েছেন এলাকার বিধায়ক। দাঁতনের একটি রাজবাড়ি এবং একটি প্রাচীন মন্দিরকে হেরিটেজ ঘোষণা করে তার সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন দাঁতনের বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নতুন গন্তব্য এবং প্রাচীন এই ক্ষেত্র সংরক্ষণের উদ্যোগে আশার আলো দেখছে দাঁতনের মানুষ।

গত ২১ অগাস্ট মনোহরপুর রাজবাড়ি ও কাকরাজিৎ মন্দিরকে হেরিটেজের আওতাভুক্ত করার জন্য জেলাশাসককে চিঠি পাঠান বিধায়ক। বিধায়কের এই প্রস্তাব বিবেচনার জন্য রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে পাঠিয়েছেন জেলাশাসক । এর পরেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বিধায়ক-সহ দাঁতনবাসী। প্রসঙ্গত, দাঁতনের মনোহরপুর রাজবাড়ি বেশ পুরনো। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাচীন নানা ইতিহাস। ইতিহাসবিদদের মতে, দাঁতনের উত্তর রায়বাড়ে ষোড়শ শতাব্দীতে গড়ে উঠেছিল মনোহরপুর রাজাদের আধিপত্য। যার পুরোধা ছিলেন আকবরের অন্যতম সেনানী মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের অধিবাসী লক্ষ্মীকান্ত উত্তর রাও তথা লক্ষ্মীকান্ত উত্তর রাও। তিনি ১৫৭৫ সালে মোগল-পাঠান যুদ্ধে মোগল শাসক আকবরের সেনাদলে অংশ নিয়ে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন। তাই তাকে ‘বীরবর’ উপাধি দিয়েছিলেন আকবর।

তবে দাঁতনের সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী এলাকায় যুদ্ধ শেষে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে লক্ষ্মীকান্ত আর দেশে ফিরে যাননি। এখানেই বসতি গড়ে তোলেন। গড়ে ওঠে রাজবংশ। পরে মনোহরপুরে উঠে আসেন তাঁরা। এখানেই গড়ে ওঠে রাজাদের অট্টালিকা। সেই বাড়িতে এখনও অবস্থান করেন উত্তরসূরিরা। বাড়ির কিছু কিছু অংশ ভগ্নপ্রায়। এখানে ছিল তিনতল বিশিষ্ট নাট্যশালাও। যার দুটি স্তম্ভ এখনও অক্ষত। আগেই রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। অপরদিকে কাকরাজিতেও আছে প্রাচীন মন্দির। গড়হরিপুর এলাকার জমিদারদের সময়ে গড়ে উঠেছিল মন্দির। এখন অবশ্য নতুন করে বিশাল মন্দির গড়ে উঠেছে। তবে অনেকেই মনে করেন কাকরাজিত হয়ে চৈতন্যদেব পুরী গিয়েছিলেন। ফলে জায়গাটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে চৈতন্যদেবের বিগ্রহ আছে। ইতিহাস, প্রাচীনত্ব ও কিংবদন্তি মিলিয়ে ঐতিহ্য আছেই। সেই ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিতেই বিধায়কের প্রচেষ্টা।

আরও পড়ুন : কলের জল নাকি RO Water? ঠান্ডা না গরম? এই খোসা ভেজানো জলেই আপনার যে কোনও গাছ ঢাকবে ফলে ফুলে পাতায়

প্রসঙ্গত এর আগে বিভিন্ন ইতিহাস ক্ষেত্র সংরক্ষণের দাবি উঠেছে বহুবার।দাঁতনের দন্ডভুক্তি একাডেমি এলাকার প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ জায়গা ও স্থাপত্যগুলির সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছিল। স্থানীয় প্রশাসনকে সংযুক্ত করে মনোহরপুর রাজবাড়ির ভগ্ন নাট্যশালা সংস্কারের উদ্যোগও করা হয়েছে। বিধায়কের এই প্রচেষ্টায় খুশি তাঁরা। তবে রাজ্য পর্যটন মানচিত্রে নতুন গন্তব্য এবং বিধায়কের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলে। দুটি ইতিহাস ক্ষেত্রকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন দাঁতনবাসী।