জমিদার বাড়ির পুজো 

Durga Puja 2024: জমিদারি নেই, তবু আজও রস সাহিত্যিকের পৈতৃক বাড়ির পুজোয় অটুট সাবেকিয়ানা

বনোয়ারীলাল চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমান: এই জমিদারবাড়ির ইট, কাঠ জুড়ে রয়েছে রস সাহিত্যিক পঞ্চানন্দের স্মৃতি। যাঁর আসল নাম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ১৮৪৯ সালে পাণ্ডুগ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পঞ্চানন্দ বা পাঁচু ঠাকুর ছদ্মনামেই আজীবন লেখালেখি চালিয়ে গেছেন।

ইন্দ্রনাথ ওরফে পাঁচু ঠাকুর ১৮৭৮ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেছিলেন ‘পঞ্চানন্দ’ পত্রিকা। বাংলা রস সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁর সাহিত্যকর্মের কিছু নিদর্শন হল ‘কল্পতরু’, ‘খুদিরাম’, ‘ভারত উদ্ধার’ ইত্যাদি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নাকি তাঁর রচনার প্রশংসা করেছিলেন। সেই ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি গ্রামে। স্থানীয়দের কাছে যে বাড়ি আজ‌ও ‘বাবুদের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত। ১৯১১ সালে ৬২ বছর বয়সে প্রয়াত হন ইন্দ্রনাথ। তাঁর প্রয়াণের পর ১১২ বছর পেরিয়ে গেলেও পৈতৃক বাড়িটি আজও এক‌ইরকম আছে।

রস সাহিত্যিক ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠাকুর দালানে আজ‌ও ধুমধাম করে পালিত হয় দুর্গাপুজো। দুর্গা পুজোয় এই বাড়িতে আজও কয়েকশো মানুষ ভিড় জমান। জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যের কথায় এই দুর্গাপুজো প্রায় ১০০ বছরের পুরানো। বর্তমানে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরিরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও এই জমিদার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও পুজো পরিচালনার জন্য ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। জমিদার বাড়ির সদস্য শক্তিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এই পুজো শুরু করেছিলেন স্বর্গীয় ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উকিল ছিলেন এবং জমিদারও ছিলেন। শাক্ত মতে আমাদের এই পুজো হয়। আগে এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা বসতো, যাত্রাপালা হত , দারুণভাবে সাজিয়ে তোলা হত এই জমিদার বাড়ি। তবে এখন সাধারণভাবেই পুজো হয়।”

আরও পড়ুন : দুর্গাষষ্ঠীর ১৫ দিন আগে বোধন! তালপাতার পুঁথি পড়ে পালিত এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গো‍ৎসব

এখন আর জমিদারি নেই। তবে ঠাকুরদালানের পুরানো আভিজাত্য এখনও তাজা রয়েছে। সেসময় নাকি লক্ষাধিক টাকা খরচ করে আগ্রা থেকে কাচ আনিয়েছিলেন ইন্দ্রনাথবাবু। সেই কাচ দিয়ে সাজানো ঠাকুরদালান আজও রয়েছে। এখনও পুজো হয় এই জমিদার বাড়িতে। বছরের এইসময় সমবেত হন ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বংশধরেরা। পুজোকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে জমিদারবাড়ি। তবে আগের তুলনায় পুজোর জৌলুস কমেছে অনেকটাই। কিন্তু জৌলুস কমলেও আজও সাহিত্যিক ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোর সঙ্গে।