চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ 

Durga Puja 2024: পদধূলি পড়েছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের! ৩৫৯ বছরের পুজো আজও সেরা আভিজাত্যে

সুমন সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা:  দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো হিসেবে খ্যাত সাউথ গড়িfয়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো। ব্রিটিশ বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস সস্ত্রীক এই বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন প্রতি বছর। শুধু তিনি নন, আরও বহু ব্রিটিশ সাহেব দুর্গাপুজো দেখতে আসতেন এই জমিদার বাড়িতে। এছাড়াও অনেক মনীষীর পদধূলি পড়েছে এই বাড়ির দুর্গাপুজোতে।

সাউথ গড়িfয়ায় এই জমিদারির সূচনা করেছিলেন জমিদার রাজকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ব্রিটিশদের প্রধান খাজাঞ্চি ছিলেন। ষোড়শ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ বারাসত থেকে সাউথ গড়িfয়ায় আসেন এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। সাতটি পরিবার তথা সাত ঘর নিয়ে এই জনপদের সূচনা হয়েছিল সে সময়। ৩৫৯ বছর আগে ১৬৬৫ সালে এই সাউথ গড়িয়ার বাড়িতেই শুরু হয় দেবী দুর্গার আবাহন।

রাজকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায় এই জমিদারির সূচনা করলেও জমিদারির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। ১৮৭৫ সাল নাগাদ তাঁর হাত ধরেই এই পুজোর জৌলুসবাড়তে থাকে। যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে যা সম্পত্তি অর্জন করেছিলেন, তার থেকে কিছুটা অংশ এই পরিবারের কুলদেবতা জনার্দন জিউ ও কুলদেবী দুর্গামাতা ঠাকুরানির নামে উৎসর্গ করে যান। সেই দেবত্র সম্পত্তির ট্রাস্ট থেকে আজও পুজোর সমস্ত খরচ বহন করা হয়।

বর্তমানে এই বংশের ৩১ তম প্রজন্মের হাত ধরে চলছে এই পুজো। গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান সম্পত্তির দেখাশোনা করেন ডঃ স্বর্ণবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া দেবত্র ট্রাস্টের মূল প্রশাসক হিসেবে রয়েছেন পরমজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মের হাত ধরে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের জমিদারির দায়িত্ব বদল হলেও এই পরিবারের পুজোর নিয়ম, রীতিনীতিতে কোন পরিবর্তন হয়নি। এখনও পঞ্চমীতেই মায়ের বোধন হয়। ষষ্ঠীতে বেলতলায় মায়ের অধিবাস ও সপ্তমীতে নবপত্রিকার স্নান দিয়ে শুরু হয় পুজো। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মণ্ডপ প্রাঙ্গন থেকে ভোগ বিতরণ ও দরিদ্র নারায়ণ সেবা আজও হয়। অষ্টমীতে হয় কুমারী পুজোর পাশাপাশি দুঃস্থ মানুষদের বস্ত্র বিতরণ হয়।  দশমীতেই এই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হয়। তবে প্রথমে এই জমিদার বাড়ির ঠাকুর বিসর্জন হবে, তারপর আশপাশের অন্যান্য ঠাকুর বিসর্জন-এই রীতি আজও রয়েছে। শূন্যে বন্দুক দেগে, নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয় বিসর্জনের সময়। বছরের পর বছর ধরে বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে ঢাকি, ব্রাহ্মণ-সকলেই এই পুজোয় অংশ নেন।

আরও পড়ুন : থিম থেকে দূরে জমিদারবাড়ির সাবেকিয়ানার স্বাদ পেতে আসুন ‘গোলকধামের পুজো’-য়

এই পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের বংশধররা দেশে বিদেশে থাকলেও পুজোর ক’টা দিন সকলে মিলে মিলিত হন এই সাউথ গড়িয়ার বাড়িতে। একসঙ্গে পুজোয় অংশ নেওয়া, খাওয়া দাওয়া, আড্ডায় মিলিত হন। আশপাশের বহু মানুষও আসেন এই পুজো দেখতে। বিশেষ করে সন্ধ্যারতি দেখার জন্য মানুষের ভিড় লেগে থাকে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো প্রাঙ্গণে। এখনও বনেদিয়ানা ও আভিজাত্যে এই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে।