তোপ ফাটার মুহূর্ত 

Old Rituals: শব্দকে ব্রহ্মজ্ঞান করে তোপধ্বনি, বিষ্ণুপুরে শুরু মল্লরাজাদের কুলদেবীর আরাধনা

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়,  বাঁকুড়া: দশভুজা আগমনের সপ্তাহ দুয়েক আগেই ঘনঘন তোপধ্বনি দিয়ে শুরু হল মল্লরাজাদের কুলদেবী মৃন্ময়ীর আরাধনা। আকাশে পেঁজা সাদা তুলোর মতো মেঘ, সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে কাশফুলের দোলা। জানান দিচ্ছে দেবী দশভুজার আগমন আসন্ন। তাই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে এখনও সপ্তাহ দু’য়েক বাকি, এরই মধ্যে উৎসবের মেজাজ বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারে। প্রায় হাজার বছরেরও বেশী প্রাচীন রীতি মেনে আজ থেকে দেবী মৃন্ময়ীর পুজো শুরু হল।দেবী মৃন্ময়ী হলেন মল্লরাজ পরিবারের কুলদেবী। সারা বছরই তিনি বিষ্ণুপুর শহরে রাজ পরিবারের যে মন্দির রয়েছে সেখানে অধিষ্ঠান করেন।

মল্ল পরিবারের যে ইতিহাস রয়েছে সেই সূত্রে জানা যায় ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের আগে মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায়। রাজা জগৎমল্ল বটগাছের নীচে দেবীর সুবিশাল মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। পাশাপাশি, ঘন জঙ্গল কেটে রাজধানী সরিয়ে আনেন বিষ্ণুপুরে। তার পর দীর্ঘ ১০২৮ বছর ধরে বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী রয়েছেন দেবী মৃন্ময়ী। পরবর্তীতে মল্ল রাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হলেও শব্দকে ব্রহ্মজ্ঞান করে তোপধ্বনির প্রচলন শুরু হয়। সেই প্রথা আজও চলে আসছে।

আরও পড়ুন : সেন বংশের আমল থেকে হয়ে আসছে আলিপুরদুয়ারের চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো

নবমাদি কল্পারম্ভে সাত সকালে দেবীর আগমন ঘটে প্রাচীন মন্দিরে। প্রাচীন রীতি অনুসারে বৃহস্পতিবার রাজ দরবার সংলগ্ন গোপালসায়রে স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাকালীকে। দেবীপক্ষের চতুর্থী তিথিতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহালক্ষ্মী। সপ্তমীর দিন আনা হবে ছোট ঠাকুরানি অর্থাৎ মহা সরস্বতীকে। এই তিন ঠাকুরানি আসলে স্থানীয় ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা তিনটি বিশেষ পট। আরাধনা শুরু হয় নিয়ম মেনে।

কালের নিয়মের সঙ্গে রাজার রাজপাট চলে গিয়েছে, মাটিতে মিশেছে মল্লদের রাজপ্রাসাদ। গড়ের আকারে থাকা প্রাচীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুর আজ একটি আধুনিক শহর। তবুও রয়ে গেছে মল্লদের ফেলে যাওয়া সেই আদি নিদর্শন। নেই রাজত্ব নেই রাজাও তবুও নিষ্ঠা ভরে পালিত হয়ে আসছে শতাব্দীপ্রাচীন এই রীতি।