Akanda Crown Flower Collection: ফুলের ঘায়ে হাত ফেটে রক্ত ঝরে! তবুও এই জীবিকা আঁকড়ে বাঁচা

বাঁকুড়া: একটা সাইকেল নিয়ে গোটা বাঁকুড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন শ্যামল দেওঘরিয়া। রাস্তার ধারে হঠাৎ বিশেষ একটি গাছ দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। তারপর টুকটাক করে তুলে নেন বেশ কয়েকটি ফুল। সেই ফুল বিক্রি করেই চালান সংসার। এই ফুল যে সে ফুল নয়, এই ফুল ছাড়া হয় না মালা বদল! এই ফুল ছাড়া কোনওভাবেই সম্পন্ন নয় মহাদেবের পুজো। প্রতি সোমবার প্রয়োজন হবেই এই ফুলের। শ্রাবণ মাসে এই বিশেষ ফুলটির চাহিদা পৌঁছে যায় অন্য মাত্রায়।

বাঁকুড়ার এক্তেশ্বরের বাসিন্দা শ্যামল দেওঘরিয়া প্রতিদিন বিকেল হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আকন্দ ফুল তুলতে। বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন মফস্বল এলাকাগুলির রাস্তার ধারে ধারে বিক্ষিপ্তভাবে দেখা যায় এই গাছ। যদিও কংক্রিটের জঙ্গলের অত্যাচারে ধীরে ধীরে আকন্দ গাছের সংখ্যা কমছে। শ্যামল দেওঘরিয়া সাইকেল নিয়ে পৌঁছে যান ধলডাঙা থেকে কানকাটা, আবার কখনও বিকনা। উদ্দেশ্য আকন্দ ফুল সংগ্রহ করা।

আর‌ও পড়ুন: বাজ পড়ে ফের কৃষকের মৃত্যু, সুন্দরবনে ভয়াবহ ঘটনা!

এই গাছগুলিকে খুঁজে প্রতিদিন ফুল সংগ্রহ করেন শ্যামলবাবু। তারপর বাড়ি গিয়ে সেই ফুলগুলিকে পরিষ্কার করে মালা গাঁথেন। সেই মালা ১০ টাকা প্রতি পিস মূল্যে বিক্রি করেন। বাঁকুড়ার সবচেয়ে বড় শৈবক্ষেত্র এক্তেশ্বরে তাঁর বাড়ি। ফুলগুলি সংগ্রহ করে বিক্রি করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। তবে শুধুমাত্র এই ফুল বিক্রি করে সংসার চলে না। ফুলের সঙ্গে রয়েছে বেলপাতা, বেল মালা এবং অন্যান্য সামগ্রী। শ্যামল দেওঘরিয়া বলেন, আকন্দ ফুলের আঠা হাতে লেগে হাত ফেটে রক্ত বেরোয়। কিন্তু কিছু করার নেই। এতেই আমার সংসার চলে। তাই প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।

এখন চলছে শ্রাবণ মাস, ফলে আকন্দ ফুল বিক্রি হচ্ছে পুরোদমে। তবে শ্রাবণ মাস শেষ হতেই বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া এই ফুল বিক্রি করা কঠিন হয়। চৈত্র মাসে গাছ ভরে দেখা যায় আকন্দ ফুলে। বছরের বাকি সময়টা এই ফুলের যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে ফুল ব্যবসায়ীদের পক্ষে। তবুও পেটের খিদে এবং জীবন জীবিকা ধরে রাখতে বয়স এবং শারীরিক বাধা অতিক্রম করে এভাবেই কাজ করে চলেছেন বাঁকুড়ার বহু মানুষ। শ্যামল দেওঘরিয়া তাঁদের অন্যতম।

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী