দক্ষিণ দিনাজপুর : ওরা ‘বন্ধু চল’-এর সদস্য। কেউ প্রতিমা গড়ে, কেউ তাতে রং লাগায়। কেউ প্যান্ডেলের কাজ করছে, তো কেউ হাত লাগাচ্ছে বাজারের কাজে। এরা প্রত্যেকেই ছোট। বয়স মেরেকেটে এগারো, বারো বা তেরোর ঘরে। অথচ দুই বছর ধরে নিপুণ হাতে সামলে আসছে দুর্গাপুজোর সমস্ত রীতি। তিন বছরে এসেও তাই।
এমনিতে পুজোর পুরোহিতই ‘বয়োজ্যেষ্ঠ’ হয়। তবে এখানে যেন উল্টো। সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া তেরো বছরের জ্যোতির্ময় অধিকারী এই পুজোর পুরোহিত। দিনরাত মন্ত্র মুখস্থ করার চেষ্টা করে চলেছে জ্যোতির্ময়। ছোটদের হুজুগে পাগলিগঞ্জের তিন বছরের এই পুজো বরাবরই নজর কাড়ে এলাকায়।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে দুর্গাপুজোর আমেজ ফিরল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর! কী ঘটেছিল?
প্রসঙ্গত, হাতে দিন গোনা শেষ। পঞ্চমী পরে গিয়েছে। আর মাত্র একদিনের অপেক্ষা। তারপরেই আলোর উৎসবের সঙ্গী হতে চলেছে বছর আট থেকে আশি সকলেই। এই অবস্থায় কোনওরকম খামতি রাখা যাবে না। তাই গোটা পুজোর দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে ‘বন্ধু চল’-এর সদস্যরা। উদ্যোক্তারা সকলেই পতিরাম হাইস্কুল ও খাসপুর হাইস্কুলের ছাত্র। পঞ্চম, ষষ্ঠ কিংবা অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। পঞ্চম শ্রেণির সূর্যদীপ হালদার ও অষ্টম শ্রেণির ঋষি হালদারের দায়িত্ব প্রতিমা গড়ার। সপ্তম শ্রেণির চন্দ্র হালদার ও শুভজিৎ হালদারের দায়িত্ব প্যান্ডেল বানানোর। নিজেরাই বাঁশ কেটে এনে প্যান্ডেল তৈরি করছে। ক্লাস ফাইভের বিবেক হালদার ও রাজ হালদারের দায়িত্ব পুজোর জোগাড় করার। তবে পুজোর দিনগুলোতে বছর পনেরোর ঈশিতা হালদার ও শুভশ্রী মণ্ডল পুজোর জোগাড় করে।
শুধুমাত্র প্রতিমা তৈরি করা নয়, দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন সমস্ত রীতিনীতি মেনেই বিগত ৩ বছর ধরে পুজো করে আসছে এই খুদেরা। তাঁরা নিজেরাই একশো দুশো টাকা জমিয়ে প্যান্ডেল এবং প্রতিমার খরচ তুলছে। যদিও প্রতিমা বানাতে সূর্যদীপ কোন টাকা পয়সা নিচ্ছে না। আর বাকি কিছু টাকা তাদের অভিভাবকরাই দিয়ে থাকে। সত্যিই এ যেন এক অন্য রকমের পুজো, যা ছোট থেকেই শিল্পীসত্ত্বা তৈরিতে ব্যস্ত। তবে শুধুমাত্র এলাকাবাসীই নয়, বালুরঘাট ব্লকের সাধারণ মানুষদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘বন্ধু চল’ খুদেদের এই সংস্থা। এমনকি নিজেদের হাতে প্রতিমা তৈরি করতে পেরে যথেষ্ট খুশি তাঁরাও।
—– সুস্মিতা গোস্বামী