নবাব মল্লিক, মন্দিরবাজার: জোরকদমে চলছে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। মন্দিরবাজারের নস্করবাড়িতেও সমস্ত রীতিনীতি মেনে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এলাকার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই পুজো। এই পুজো এলাকায় ‘ছয় বুড়োর পুজো’ বলে পরিচিত। ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পুজো।
অন্যান্য পুজোগুলির থেকে এই নস্করবাড়ির পুজোর রীতিনীতি কিছুটা আলাদা। শাস্ত্র মেনে পুজো হয় এখানে। দেবীকে নৈবেদ্য হিসাবে দেওয়া হয় ৬ মণ চাল। আগে ২১ মণ চাল দেওয়া হত। এই পুজো মন্দিরে বাজারের সবথেকে প্রাচীন পুজো বলে জানিয়েছেন নস্করবাড়ির প্রবীণ ব্যক্তি পঞ্চানন নস্কর। বর্তমানে পুজোর জৌলুস কিছুটা হারালেও পুজোয় সমস্ত রীতিনীতি মেনে এখনও দেওয়া হয় ৬ মণ চাল। পুজোর সময় দুর্গা ও রাধাগোবিন্দ একসঙ্গে পূজিত হন এখানে।এই পুজোর পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ইতিহাস।
বাংলার নবাব হুসেন শাহের সময় রায়দিঘির ছত্রভোগের বাসিন্দা রামচন্দ্র লস্কর ছিলেন নবাবের দেওয়ান। দীর্ঘদিন ভাল কাজ করায় নবাব তাঁকে খুশি হয়ে উপাধি দিয়েছিলেন ‘খাঁ’। সেই থেকে তাঁরা উপাধি হিসাবে ব্যবহার করতেন খাঁ লস্কর। তিন পুরুষ ধরে এই পদবি ব্যবহারের পর রামচন্দ্রের পৌত্র রামজীবন খাঁ লস্কর উপাধি ত্যাগ করে নস্কর উপাধি নিয়ে তিনি ও তাঁর ৫ ভাই চলে আসেন মন্দিরবাজারের জগদীশপুরে।
আরও পড়ুন : চিয়াদানার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে খেতেও হবে এটাও! নয়তো কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্টে কেঁদে ফেলবেন
তাঁরাই ছয় জন মিলে শুরু করেছিলেন এই পুজো। সেই থেকে এই পুজো পরিচিত ছয় বুড়োর পুজো হিসাবে। নবাবি আমলে মহাধূমধাম করে এই পুজো হত। বর্তমানে এই পুজোর জৌলুস কিছুটা কমেছে। তবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভাটা পড়েনি এতটুকুও। আজও পুজোর দিনগুলিতে গমগম করে নস্করবাড়ির প্রাঙ্গণ। পুরনো সেই দিনের কথা স্মরণ করে চন্ডীমণ্ডপে বসে আজও নস্টালজিক হয়ে পড়েন দেবপ্রসাদ নস্কর, অনুপ নস্করের মত নস্করবাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও। প্রতিবছরের মতো এবছর আবারওএই ঐতিহাসিক পুজো দেখতে ভিড় যে বাড়বে, তা আর বলার অবকাশ রাখে না।