ধুতি পরিহিত কার্তিক গণেশ

Durga Puja 2024: রুগ্ন শিল্প বাঁচাতে প্রয়াস, নদিয়ার গর্ব তাঁতের ধুতি-কাপড়েই সেজে উঠছেন দশভুজা ও তাঁর সন্তান সন্ততি

মৈনাক দেবনাথ, শান্তিপুর: প্রত্যেক দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে থাকা কার্তিক গণেশ এবার পরবে তাঁতের ধুতি! খরচ কিছুটা বাড়লেও অতীতের গৌরবান্বিত তাঁত শিল্পের রুগ্ন হাল ফেরাতে মৃৎশিল্পীদের আন্তরিক প্রয়াস। শান্তিপুরের তাঁত শাড়ি তো অনেক পরেন! ভাঙা রাসের শোভাযাত্রার মতো হাতে বোনা ধুতির হাত ধরে বিশ্বের মাঝে শান্তিপুরের পরিচয় অনেক আগে।

নদিয়ার পুজোর শহর। শান্তিপুরে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ, মৃৎশিল্পীরাও সেই কারণে অত্যন্ত সুদক্ষ, তাদের তৈরি সাবেকি ঘরানার দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, কালী-সহ বিভিন্ন প্রতিমা ভিন জেলা তো বটেই, ভিন রাজ্যের পুজো উদ্যোক্তাদেরও আগ্রহের বিষয়। তবে বাস্তুতন্ত্রের মতো সমাজে সকলেই সমান গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য গরিমা হারানো সেই হস্তচালিত তাঁত শিল্প পুনরুদ্ধারের উদ্দেশে এবার পুজোর মরশুমে সুকৌশলে তারাও সচেষ্ট হয়েছেন।

নদিয়ার শান্তিপুর গোপালপুরে অবস্থিত বহু প্রাচীন এবং শিল্প উৎকর্ষে সমৃদ্ধ  “শিল্পালয়” পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রত্যেক দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে থাকা কার্তিক এবং গণেশের পোশাক হিসেবে চিরাচরিতভাবে ব্যবহৃত স্যাটিনের কাপড় বাতিল করে তাঁতের ধুতি লক্ষ করা গেল। এ প্রসঙ্গে মৃৎশিল্পী সৌরভ সাহা জানালেন, তিনি এবছর বরাত পেয়েছেন মোট ১৭ টি দুর্গা প্রতিমার। খরচ একটু বেশি হলেও সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে তাঁতশিল্পীদের সম্মানার্থে জনসাধারণের মাঝে ধুতির প্রবণতা বাড়াতে প্রচার হিসেবে চিরাচরিত রেশমি কাপড় বাদ দিয়ে এ বছরই প্রথম ধুতি ব্যবহার করেছেন। এর ফলে বাঙালির সাবেকিয়ানা এবং অতীতের গৌরব দুই-ই গৌরবান্বিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন : মহালয়ায় তর্পণের ভোরে বৃষ্টি হবে কলকাতায়? নাকি রোদ ঝলমলে আবহাওয়ায় স্বস্তি? জানুন পূর্বাভাস

সৌরভের ভাগ্নে আর এক মৃৎশিল্পী অরিত্র সাহা জানাচ্ছেন, বর্তমানে অষ্টমীতে বা প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় এই প্রজন্মের ছেলেদের নতুন করে ধুতি পরার প্রবণতা জন্মেছে। সঙ্গে মৃৎশিল্পীদের যদি কিছুটা প্রচেষ্টা চালানো যায় তাহলে হয়তো একদিন রুগ্ন শিল্প আবারও ফিরবে সমহিমায় এমনই আশাবাদী তিনি। যদিও তিনি উল্লেখ করেন তাদের ব্যবহৃত ধুতি মূলত ধনেখালির। তার ফলে খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রচার এবং প্রসার যদি ব্যাপক ঘটে সেক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদার ফলে আগামীতে হয়তো শান্তিপুরের তাঁতিরাও নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা শুরু করবেন। তখন খরচ কমবে অনেকটাই। তাঁদের মতো মৃৎশিল্পীদের এই প্রয়াসের ফলে যদি একটি রুগ্ন শিল্প সবল হয়-সেই আশাতেই রয়েছেন তাঁরা। তবে এর ফলে বাড়তি অর্থ না পাওয়া গেলেও পুজো উদ্যোক্তারা যে খুশি, তা ব্যক্ত করেছেন মৃৎশিল্পীরা।