কৃষ্ণনগর: সামনেই দুর্গাপুজো, আর দুর্গাপুজো মানে বাঙালির আনন্দের উৎসব। দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির আবেগ, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে আগের বছরের তুলনায় এই বছরে দু’টি মাত্র অর্ডার পেয়েছেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর ঘূর্ণী তরুণ সংঘ সংলগ্ন বক্সীপাড়ার বাসিন্দা পেশায় পটচিত্র শিল্পী রেবা পাল, আর সেই অর্ডার পেয়ে দু’টি পটচিত্র ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত তিনি। আজ ৫০ বছর ধরে শিল্পী রেবা পাল এই পটচিত্রের সঙ্গেই যুক্ত। প্রায় বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই, তাও নিজের মনের অপরিসীম ক্ষমতা, দক্ষতা ও অদম্য নিজের ইচ্ছেশক্তি দিয়ে সূক্ষ নিপুণতার সঙ্গে নিজের হাতে রঙ ও তুলি দিয়ে নিজের একমনে এঁকে চলেছেন পটচিত্র।
এক চিলতে তৈরি ভাঙা বসত ঘরে বসবাস করেন শিল্পী রেবা পাল। কিন্তু, একসময় স্বামীর হাত ধরেই পটচিত্র আঁকা শেখা শিল্পী রেবা পালের, হঠাৎই একদিন স্বামী মারা যাওয়ায় গোটা সংসারের ভার ও দায়িত্ব এসে পড়ে শিল্পী রেবা পালের ওপরে, তারপর থেকেই সংসার চালানোর ক্ষেত্রে নিজের হাতে রং ও তুলি নিয়ে আঁকতে শুরু করে পটচিত্র, স্বামীর শিল্পকলা বাঁচিয়ে রাখতেই এই অসীম ভাবনা শিল্পী রেবা পালের।
প্রতিবছর দুর্গাপুজা আসতেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং জেলার বাইরে থেকেও কাজের বরাত আসে শিল্পী রেবা পালের। কিন্তু প্রতিবছরের তুলনায় এই বছরে অনেকটাই কাজের বরাত কম তাই মন খারাপ শিল্পীর। যত দিন এগিয়েছে তত শিল্পী রেবা পালের হাতের কাজের প্রশংসা, ততটাই ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা -সহ রাজ্য বিভিন্ন জেলায়, জেলায়। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে, চোখের দৃষ্টি কমে এসেছে অনেকটাই, তবুও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি।
তার নিপুণ ও দক্ষতার কাজের জন্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তার সুনাম ও ভালবাসা কুড়িয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রাইজ ও শংসাপত্র তিনি পেয়েছেন। প্রতিবছর দুর্গাপুজো এলেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুজো কমিটির দায়িত্বে থাকা উদ্যেক্তারা ছুটে আসেন শিল্পী রেবা পালের হাতের তৈরি পটচিত্রের জন্যে। এই বয়সে এসেও শিল্পী রেবা পালের যে অসীম লড়াই সেই লড়াই কিন্তু থামেনি। এখনও পর্যন্ত লড়াই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে। তিনি জানান, যতদিন বাঁচবেন ততদিন তার স্বামীর শেখানো শিল্পকলাকে নিজের হাতে ফুটিয়ে তুলবেন এবং মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবেন তিনি।
Mainak Debnath