বনোয়ারীলাল চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমান: একই উঠোনে একসঙ্গে সাতটি দুর্গা প্রতিমা পূজিত হয় পূর্ব বর্ধমানের এই গ্রামে। পুজো দেখতে ছুটে আসেন দুর দূরান্তের বহু মানুষ। নিজস্ব নিয়ম রীতি মেনে এভাবেই কয়েকশ বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে এই গ্রামে।দুর্গাপুজো বাঙালির কাছে এক অন্য আবেগ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা প্রাচীন ইতিহাস জড়ানো পুজোগুলি। আধুনিকতার জৌলুসের যুগেও যেগুলি নিজেদের মতো করে উজ্জ্বল। তেমনই একটি পুজো হলপূর্ব বর্ধমানের খাটুন্দী গ্রামের সাত দুর্গার পুজো। পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্গত কেতুগ্রাম লাগোয়া একটি গ্রাম হল খাটুন্দী।
যেখানে একটি নয়। একই চত্বরে পুজো করা হয় সাতটি দুর্গা প্রতিমা। সেই সঙ্গে পুজো করা হয় কুলদেবতা কৃষ্ণ রায়ের। নিজেদের পরিবারের এই ভিন্ন ধরনের পুজো প্রসঙ্গে পরিবারের সদস্য তুহিনশুভ্র মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার পশ্চিমবঙ্গ তথা বাইরে এই ধরনের পুজো সহজে দেখা যায় না। একমাত্র এই গ্রামেই আমাদের এই পুজো হয়। ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো এখানে আসল পুজো।” ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্য সজল জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ রামগোপাল ভট্টাচার্য আগে বর্তমান কেতুগ্রাম থানার অন্তর্গত কুলাই গ্রামে বসবাস করতেন।
অভিযোগ, পরবর্তীতে কুলাই গ্রামের জমিদারদের অত্যাচারে , রাতের অন্ধকারে এসে খাটুন্দি গ্রামে কৃষ্ণরায় এবং দুর্গা একসঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যে সময় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন নাকি এই জায়গা ছিল শ্মশান। পরে রামগোপাল ভট্টাচার্যের অবর্তমানে তাঁর বংশধররা পুজো শুরু করেন। ধীরে ধীরে পারিবারিক মনোমালিন্যের জেরে সকল বংশধর অর্থাৎ ভাইয়েরা ঠিক করেন তাঁরাও দুর্গা প্রতিমা আনবেন। বাড়তে থাকে দুর্গাপ্রতিমার সংখ্যা। এইভাবে প্রায় বহু বছর ধরে এখনও পর্যন্ত মোট সাতটি দুর্গাপুজো হয়ে আসছে এক উঠোনের মধ্যেই।
আরও পড়ুন : আদিগন্ত নিবিড় কাশবনে এ সব কী হচ্ছে! জানলে চমকে যাবেন
আজও এই ভট্টাচার্য বাড়িতে পুজোর সময় আগে কৃষ্ণরায়কে ভোগ দেওয়া হয়। তারপর ভোগ দেওয়া হয় দেবী দুর্গাকে। পুজো হয় আগে কৃষ্ণরায়ের তারপর দেবী দুর্গার। এবছরও দুর্গাপুজোর আগে সাতটি মন্দিরেই চলছে প্রতিমা সাজিয়ে তোলার কাজ। শুরু হয়ে গিয়েছে প্যান্ডেল তৈরির প্রস্তুতি। পরিবারের সদস্যরাও বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। সবমিলিয়ে পুজোর চারদিন জমে উঠবে পূর্ব বর্ধমানের খাটুন্দির এক উঠানে সাত দুর্গার পুজো।