গড়ের প্রাচীণ ভগ্নপ্রায় মন্দির

Durga Puja 2024: কমেছে আড়ম্বর, ফিকে পুরনো জৌলুস, তবু তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির পুজোয় অটুট বনেদিয়ানা

সৈকত শী, তমলুক: দেবী বর্গভীমা তমলুকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এক সময় দেবী বর্গভীমা পুজো ছাড়া তমলুকে অন্য দেবীর পুজো হত না। তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির পুজো হত তাম্রলিপ্ত রাজার গড় বহিচবেড়িয়ায়। তাম্রলিপ্ত নগরীর রাজা রাজ পরিবার ও সপারিষদ দুর্গাষষ্ঠীর দিন এই রাজ গড়ে এসে পৌঁছতেন। তারপর শুরু হত পুজো। একাদশীর দিন আবার ঘর থেকে ফিরে যেতেন তমলুক বা নগরের রাজবাড়ীতে। সেই পুজো আজও হয়ে আসছে প্রাচীন রীতিনীতি অনুসারে।

বর্তমানে তমলুক মহাকুমার নন্দকুমার থানার অন্তর্গত বহিচবেড়িয়া। বয়েজ বেরিয়া গ্রামে আজও তাম্রলিপ্ত রাজপরিবারের পুজো হয়। সময়ের কাল দন্ডি বেয়ে এই পুজো হারিয়েছে জৌলুস। কিন্তু বর্তমানেও প্রাচীন রীতিনীতি বর্তমান। প্রাচীন রীতি অনুসারে পঞ্চ ঘটে দেবী দুর্গার আরাধনা হয়। পঞ্চ ঘটে দুর্গাপুজো আর কোথাও হয় না। একসময় শুধু তাম্রলিপ্ত রাজার সৈন্য-সামন্ত হাতি ঘোড়া থাকত এই গড়ে। এই রাজ গড়ে আনুমানিক বয়স কত তা আজও নির্ণয় করা যায়নি। অনেক পরে তাম্রলিপ্ত রাজপরিবারের সদস্য এখানে বসবাস শুরু করে। সেই থেকে এখানে রাজপরিবারের বাস।

তাম্রলিপ্ত রাজার গড় বহিচবেড়িয়াতে পুরনো প্রথা অনুযায়ী দেবী দুর্গা পূজিত হয়। পঞ্চঘটে মায়ের আরাধনা হয় এখানে। মায়ের আরাধনার প্রথম ঘট স্থাপিত প্রায় এক মাস আগে চপেটি ষষ্ঠী বা লুন্ঠন ষষ্ঠীর দিন। দ্বিতীয় ঘটিও স্থাপিত হয় দুর্গা ষষ্ঠীর এক সপ্তাহ আগে কৃষ্ণা নবমীর দিন। বাকি তিনটি ঘরের মধ্যে দুটি স্থাপিত হয় ষষ্ঠীর অধিবাসের দিন। এবং বাকি ঘটটি স্থাপিত হয় মহা সপ্তমীতে। এই গড় রাজবাড়ীর প্রবীণ সদস্য শোভননারায়ণ রায় জানান, বহু প্রাচীন এই পুজো। রাজবাড়ীর এই পুজো ঘিরে সেই সময়কার মানুষের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। ষষ্ঠীর দিন কামান দাগা হত। সেই তোপ ধ্বনির আওয়াজ শুনে তমলুকের অন্যান্য বনেদি বাড়ির দেবী পুজোর ঘট স্থাপন শুরু হত।”

আরও পড়ুন : জমিদারি নেই, তবু আজও সাহিত্যিকের পৈতৃক বাড়ির পুজোয় অটুট সাবেকিয়ানা

প্রাচীন নিয়ম মেনে ষষ্ঠীর দিন দেবী প্রতিমার চক্ষুদান করা হয়। তাম্রলিপ্ত রাজার গড়ের দুর্গাপুজো তাম্রলিপ্ত বা তমলুক পরগনা সবচেয়ে প্রাচীন পুজো। পুজো ঘিরে চারদিন চলতো মহোৎসব। মায়ের ভোগের প্রসাদ বিতরণ। কালের নিয়মে মায়ের ভোগের প্রসাদ বিতরণ বন্ধ হয়েছে। একসময় পুজোয় মায়ের ভোগ রান্না হত মণ মণ চালের। কমতে কমতে বর্তমানে পুজোর চারদিন পাঁচ সের অর্থাৎ পাঁচ কেজি চালের অন্নভোগ প্রতিদিন রান্না হয়। নিয়ম মেনে সন্ধিপুজো হয়। এই প্রাচীন রাজবাড়ির পুজোতে কখনোই পশু বলি বা কুমড়ো আখ বলি কোনওটাই হয় না।

প্রাচীন এই পুজোর জৌলুস কমেছে। ভাটা পড়েছে উন্মাদনায়। পুজো বর্তমানে পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পুজোর দালানে নেই মানুষের সেই চেনা ভিড়। প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে প্রতি বছর চলে দেবী দুর্গার আরাধনা। গৌরবের ইতিহাসে জমেছে ধুলো বালি। তবুও প্রতি বছর ঢাকে কাঠি পড়ার অপেক্ষায় থাকেন রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।