বাহিন রাজবাড়ী 

Historical Tourism: বখতিয়ার খলজির লুণ্ঠনের চিহ্ন থেকে হোসেন সাহেবের কাছারি, সব থেকেও পর্যটনে নেই এই জেলা

উত্তর দিনাজপুর: বাংলার এই জেলায় তেমন উল্লেখযোগ্য কোন‌ও পর্যটন কেন্দ্র নেই, যা কিছুটা ব্যতিক্রম বৈকি। তবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র পরিকল্পনার অভাবে আজও অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে উত্তর দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির, জমিদার বাড়ি এমনকি সর্বোপরি কুলিক পক্ষী নিবাস।

উত্তর দিনাজপুর জেলায় বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থান আছে। পুরনো জমিদার বাড়িগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন আছেন। তা নিয়ে ইতিহাসের গবেষকদের পাশাপাশি সাধারণ পর্যটকদের একাংশেরও বেশ কৌতুহল আছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবের কারণে এইসব নিদর্শন সাধারণ মানুষ তথা পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা সংগ্রহালয়ে সংগৃহীত শিলালেখ, স্তম্ভ লেখ, তাম্রলেখ, প্রাচীন প্রত্নসম্পদগুলি আজও মানুষের থেকে বহু দূরে। শুধুমাত্র কুলিক পাখিরালয়ের উপর ভরসা করে দাঁড়িয়ে রয়েছে জেলার পর্যটন। তাও সেটা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিকাশ ঘটানো হয়নি বলে স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ।

আর‌ও পড়ুন: ইংরেজ আমলে ছিল রেলের সদর দফতর, আজ সেই স্টেশনে ‘ঘুঘু’ চড়ে

পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত নানাবিধ সম্ভারে ভরপুর রায়গঞ্জ সহ গোটা জেলা। এখানেই রয়েছে ইটাহার থানা এলাকার দুর্গাপুর এবং চুরামন এলাকায় রয়েছে প্রাচীন জমিদার বাড়ি। ৫০০ বছরের পুরনো শিব মন্দির। এই এলাকাগুলিতে এখনও জমিদার ভূপালচন্দ্র রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি এবং জগৎবল্লভ রায় চৌধুরীর বাড়ির ধ্বংসাবশেষ বর্তমান। এছাড়াও রায়গঞ্জ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাহিন এলাকায় অবস্থিত জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি। নাগর নদীর তীরে এই সাবেক বাড়ি আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এছাড়া এই জেলায় রয়েছে বিন্দলের ভৈরবী মন্দির, মহানন্দা ও সুই নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে রাজা রাম পালের রাজধানীর আমাতির ধ্বংসাবশেষ, কালিয়াগঞ্জে বক্তিয়ার খলজির দ্বারা লুণ্ঠিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধমঠ।

এছাড়াও জেলায় রয়েছে হোসেন শাহের কাছারি বাড়ি, পাঁচ ভাইয়া এলাকায় রংপুরের রাজা গোপাল লালের দ্বিতল কাছারি বাড়ির মতন নানান ঐতিহাসিক স্থান। এছাড়াও রয়েছে অসুরাগরের আকবরের শাসনকালের বেশ কিছু ধ্বংসাবশেষ। কিন্তু এইসব অঞ্চলের বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি আজ দেখাশোনা ও জন সচেতনতার অভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে হারিয়ে যেতে বসেছে। জেলার ভ্রমণপিপাসু মানুষদের মধ্যে অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক পর্যটনের স্থান রয়েছে যেসব এলাকায় পর্যটনের কোন‌ও সম্ভাবনাই ছিল না। তবুও শুধুমাত্র সঠিক পরিকল্পনা থাকার ফলে আজ সেই সব এলাকাগুলির দেশের পর্যটনের মানচিত্রে নিজেদের আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু উত্তর দিনাজপুর জেলায় এতকিছু ঐতিহাসিক স্থান থাকার পরেও পর্যটনের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে। সঠিক পরিকল্পনা করলে পর্যটনের হাত ধরে রাজ্যের এই অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলার আর্থিক মানচিত্রটাই বদলে যেতে বলে তাঁদের অভিমত।

আর‌ও পড়ুন: তীব্র গরমে বিধ্বস্ত ডুয়ার্সের চা শিল্প, ভবিষ্যৎ নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন

জানা যায় ২০০৪ সালে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে জেলা সংগ্রাহালয় প্রস্তুত করা হলেও পর্যটক এর অভাবে আজ সেই সংগ্রহলয়টি ধুঁকছে। জেলের মানুষই তেমনভাবে এখনও জানেন না সংগ্রাহালয়টির অস্তিত্ব সম্পর্কে। তাই জেলার ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের দাবি, অবিলম্বে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে উত্তর দিনাজপুর জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

পিয়া গুপ্তা