আন্তর্জাতিক স্তরে যোগাসনে তিনটি পৃথক বিভাগে সোনা

Inspiration: এক চিলতে ভাড়ার ঘরে সোনার আলো! আন্তর্জাতিক ‌যোগাসনে তিনটে সোনা হাওড়ার সুস্মিতার

রাকেশ মাইতি, হাওড়া: মরুদেশে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়ল বঙ্গতনয়া সুস্মিতার দৌলতে! দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান যোগাসন স্পোর্টস কাপ-এ পেলেন সাফল্য। ট্যাডিশনাল রিদমিক এবং আর্টিস্টিক-সহ তিনটি পৃথক বিভাগে সোনা জয় করে ঘরে ফিরলেন হাওড়ার মেয়ে সুস্মিতা দেবনাথ (রাই)। এর আগে রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে পুরস্কার তো ছিলই। এবার আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পেয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন সুস্মিতা। খুশি তাঁর পরিবারের আত্মীয়স্বজন গ্রাম ও দেশের মানুষ।

এই সফলতার পিছনে রয়েছে হার না মানা লড়াই ও কঠোর অনুশীলন। মাত্র দেড় বছর বয়সে খেলার ছলে মায়ের কাছেই যোগ অভ্যাস। শৈশব থেকে দশ বছর বয়স পর্যন্ত কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই জেলাস্তরে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। তারপর নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যাওয়া, মিলেছে একের পর এক সাফল্য। অভাব অনটন অর্থনৈতিক সমস্যা তাঁর নিত্যসঙ্গী। অভাবী পরিবার এক চিলতে ভাড়া ঘরে থেকেই লড়াই শুরু হয়েছিল। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত নিজস্ব বাড়ি তো দূর কথা, ঠিক মতো অনুশীলনের জায়গা পর্যন্ত ছিল না।

‘খেলো ইন্ডিয়া’ পদক জয়ের পর আন্তর্জাতিক স্তরে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে প্রায় অনিশ্চিত ছিল। আত্মীয় পরিজন এবং ঋণ নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। বহু কষ্টে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁর সাফল্যলাভ দারুণ আনন্দের। আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান সুস্মিতা।

আরও পড়ুন : বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় মুচমুচে মোমোতে কামড়? হতে পারে চরম সর্বনাশ! বর্ষায় মোমো কতটা ক্ষতিকর, জানুন

তাঁর মা মামণি দেবনাথ সন্তানদের মানুষ করতে সংসার হাল ধরতে বেছে নিয়েছিলেন কুরিয়ার সার্ভিসের চাকরি। যে কারণে স্বামী, কন্যাসন্তান নিয়ে ছাড়তে হয়েছিল ঘর। তারপরেও থেমে যাননি। এগিয়ে গিয়েছেন লেখাপড়া শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে। মায়ের লড়াই থেকে শিক্ষা নিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে গিয়েছেন সুস্মিতা। নানা প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল পেরিয়ে এই সফলতায় পেয়েছেন বাঁধনহারা আনন্দ।

যোগাসন সামনে রেখেই ভবিষ্য‍ৎ গড়তে চান সুস্মিতা। পরিবারকে সাহায্য করতে যোগাসন প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে।এ  প্রসঙ্গে সোনার মেয়ে সুস্মিতা জানান, তিনি ভীষণ আনন্দিত। এই সাফল্যের পিছনে প্রাক্তন এবং বর্তমান প্রশিক্ষকের অবদান তো রয়েইছে। একই সঙ্গে পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের অবদানও আছে। তবে প্রতিযোগিতা বা লড়াইয়ের মঞ্চে মাকে দেখেই শিক্ষা নেওয়া।

এই আনন্দঘন মুহূর্তের মাঝেই চিন্তা বাড়াচ্ছে পরিস্থিতি। এ বার শ্রীলঙ্কায় আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতা কীভাবে অংশগ্রহণ করবে, জানেন না। পরিবারের সামর্থ্য নেই খরচ করে পাঠানোর। এই অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা আশায় তাকিয়ে আছেন।

এ প্রসঙ্গে সুস্মিতার মা মামণি দেবনাথ জানান, ‘‘আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে পক্ষে অত্যন্ত কঠিন এই স্বপ্নপূরণ। ছেলে-মেয়েদের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তাদের স্বপ্ন পূরণ করা শক্ত। সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে চলেছি৷ কত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব, জানি না। প্রতিভা থাকা সত্বেও হয়তো মাঝ পথেই বহু প্রতিভা থমকে পড়ে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে।’’