এ কী কাণ্ড!

Life: পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক! চেনা জায়গা হয়ে উঠল ভয়ঙ্কর, কোনও ক্রমে বাড়ি ফিরলেন ৩ বাঙালি

নদিয়া: পাহাড় চূড়ার আতঙ্ক জয় করে বাড়ি ফিরলেন নদিয়ার তিন বাসিন্দা! বগুলা থেকে তিন প্রকৃতিপ্রেমী – কালীদাস মণ্ডল (৫২), হিমাদ্রী শেখর বিশ্বাস (৪০) এবং নব্যেন্দু অধিকারী (২৯) পাহাড় ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েন। কাইয়াকাটা, কালাপোখরি, বিখেভঞ্জন, সান্দাকফু , আল এবং চান্দু গ্রাম ছাড়িয়ে পৌঁছন প্রায় দশ হাজার ফুট উচ্চতার থাকুম ভ্যালি নামের এক অফবিট ঠিকানায়। সুস্বাদু নৈশভোজে সেরে রাতে ঘুমিয়ে হঠাৎ সবার ঘুম ভাঙল বাইরে দানবের মত শো-শো হুঙ্কারে, ঝড়ের আওয়াজ। সাধারণ ঝড়বৃষ্টি ভেবে আবার সকলে ঘুমিয়ে পড়ল সকলে। কিন্তু ঝড় থামল না, বরং বাড়ল।

ভোর বেলা উঠে দরজা খুলেই দেখা গেল পরিচিত সেই মৃতপ্রায় ঘাসে ঢাকা ফাঁকা ভ্যালি এখন সাদা বরফের আস্তরণে ঢাকা, ঝড়ের হওয়ায় সেই বরফই ঘরের দরজায়ও এসে পৌঁছেছে। বাইরে গেলে ঝড়ের হওয়ায় চোখেমুখে এসে লাগছে বরফের টুকরো, যেন ১০০ সূচ মুখে এসে বিঁধছে। তখন বাইরে মাটিতে পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি বরফ জমে গেছে। খবর পাওয়া গেল যে নীচের পাহাড়ি গ্রামগুলিতেও এমনই তুষার ঝড় চলছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ।

আরও পড়ুন: ভোটের জন্য কী ই না করতে হয়! তবে, সুজাতা মণ্ডল যা করলেন, ভাবাই যায় না! দেখুন একবার…

অবশেষে নেহাৎ নিরুপায় হয়ে গাইড সহ চারজন বেরিয়ে পড়লেন তুষার ঝড় মাথায় করে স্নো হাইকিং করতে করতে অন্তত আল(Ahal) গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছনোর লক্ষ্যে। আল গ্রামটি থাকুমের মতো এতটা নির্জন নয়, ওখানে অন্য ট্যুরিস্টরা আছেন। তাই সেখানে গেলে হয়তো সহায়তা পাওয়া যাবে এই আশায় বরফের ঝড়ের মধ্যেই ওই চারজন সাত কিলোমিটার এবং ১৬০০ ফিট পাহাড় চড়ে পৌঁছালেন আল গ্রামে, উচ্চতা ১১৬০০ ফিট। তখনও ঝড় থামেনি।

আরও পড়ুন: ইডি হেফাজতেই বড় কাণ্ড ঘটালেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল! তুমুল শোরগোল, শুনলে চমকে উঠবেন!

সারারাত চলল তুষার ঝড়। ভোরবেলা উঠে দেখলেন তখনও তুষারপাত চলছে, পাহাড়ের গায়ে বরফের আচ্ছাদন আরও পুরু। বহু নীচের গ্রামগুলি পর্যন্তও এমন তুষারপাত হয়েছে অর্থাৎ গাড়িতে ফেরা অসম্ভব। এত পরিমাণে তুষার জমে গেছে পাহাড়ের গায়ে যে এই তুষার পরিষ্কার করে গাড়ি চলাচলের যোগ্য হতে সময় লাগতে পারে বেশ কিছুদিন। তাই বরফে ভেজা জমা কাপড় পরেই আবারও পেয়ে হেঁটেই পাহাড় থেকে নামতে হবে।

এই সময়ে গাইড থিন্ডুপ তামাং এর তৎপরতা এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগল ভীষণ পরিমাণে। যতগুলি পথে নীচে নামা যাবে তার মধ্যে থেকে থিন্ডুপ দাইজু নির্বাচন করলেন যে ট্রেকিং রুট ধরে গুর্দম গ্রামে নামাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আবারও শুরু হল ট্রেক! লক্ষ্য ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গুর্দুম গ্রাম। তখন ঝড় কিছুটা দমেছে, কিন্তু তুষারপাত থামেনি। পাহাড়ি রাস্তায় প্রায় হাঁটু পর্যন্ত বরফ জমে আছে।চারিদিকে গাছপালা সব সাদা! সম্পূর্ন পাহাড় উজ্জ্বল সাদা বরফে ঢাকা, আর আকাশ থেকে অনবরত তুষারপাত হয়ে সারা গা ঢেকে দিচ্ছে । ভিজে যাচ্ছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সবকিছুই। তাপমাত্রা শূন্যের নীচে। এমন পরিস্থিতিতেই ওনারা এগিয়ে চললেন।কোথাও কোথাও বরফের মধ্যেই প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে হচ্ছে। সেসব প্রতিকূলতা পার করে অবশেষে ওরা চারজন পায়ে হেঁটে পৌঁছালেন গুর্ডুম গ্রামে এবং স্বস্তির প্রশ্বাস নিলেন কারণ এখানে বরফ নেই।

তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশী, তাই ফুটে আছে লাল-গোলাপী-সাদা রডোডেনড্রন এবং চেরি ফুল। আর চিন্তার কারণ নেই, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধে জয় লাভ করেছেন এই তিন। স্বাভাবিকভাবেই পুনরায় তিনজনকে সুস্থ দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তাদের আত্মীয়-স্বজনরা। পরম যত্নে সেখানে দুদিন কাটিয়ে অবশেষে অমূল্য অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন কালীদাস, হিমাদ্রী, নব্যেন্দুরা। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এতটা পথ পাহাড় অতিক্রম করতে শরীরের কষ্ট হবেই, তবে পাহাড়ের এই দৃশ্য দেখে সকলেই মুগ্ধও হয়েছেন বারংবার। সৌভাগ্যবান না হলে পাহাড়ের এমন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে পারা যায় না এই উপলব্ধি প্রত্যেকেরই হয়েছে।

—– Mainak Debnath