ডায়মন্ড হারবার

Lok Sabha Election 2024: নজরে ডায়মন্ড হারবার! জেনে নিন হাইভোল্টেজ এই লোকসভা কেন্দ্রের খুঁটিনাটি

নবাব মল্লিক, ডায়মন্ড হারবার: হুগলি নদীর তীরে ডায়মন্ড হারবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম প্রসিদ্ধ একটি স্থান। এই লোকসভা কেন্দ্রটি রাজ্যের হাইভোল্টেজ লোকসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম একটি কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকেই লড়াই করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। সেজন্য এই লোকসভা নির্বাচনে স্বাভাবিকভাবেই সবার নজর থাকবে ডায়মন্ড হারবারের উপর।

ডায়মন্ড হারবার ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। এই অঞ্চলের আদি নাম ছিল চিংড়িখালি। কালের বিবর্তনে চিংড়িখালি একদা হাজিপুর নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এর পিছনে রয়েছে ছোট একটি ইতিহাস, একসময় এখান থেকেই জাহজে চেপে হজে যেতেন হজযাত্রীরা।

পরে আবার সেই হাজিপুর ইংরেজ আমলে পরিণত হয় ডায়মন্ড হারবারে। এই ডায়মন্ড হারবারের উপর মোগল থেকে শুরু করে পর্তুগিজ শাসনের ইতিহাস রয়েছে৷ সঙ্গে রয়েছে ব্রিটিশরাজের ছোঁয়াও। এই ডায়মন্ড হারবারে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কিছু দিন কাটিয়ে যান। এখানে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী-সহ আরও অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী।

তবে ডায়মন্ড হারবার এখন অতীতের ছায়া মুছে নিজেকে যথেষ্ট আধুনিক করেছে। ডায়মন্ড হারবারেই তৈরি হয়েছে মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। ডায়মন্ড হারবারেই তৈরি হয়েছে ফুটবল ক্লাব, প্রতিবছর এখানে ধুমধাম করে আয়োজিত হয় এমপি কাপ, এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ফলতা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, রয়েছে আধুনিক জলপ্রকল্প। যে কোনও আধুনিক নগরীর মত সমস্ত কিছুর সুবিধা পাওয়া যায় এখানে।

আরও পড়ুন : কেরলের দোরগোড়ায় দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু! কলকাতা-সহ বঙ্গে বর্ষা কবে? আজ থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজ্যের কোথায় বৃষ্টির পূর্বাভাস, জানুন

এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, বজবজ ও মেটিয়াবুরুজ। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে মোট ১২ জন‌ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তার মধ্যে অন্যতম প্রার্থীগুলি হল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়, বিজেপির অভিজিৎ দাস(ববি), সিপিআইএম-এর প্রতীকুর রহমান ও আইএসএফ-এর মজনু লস্কর।
২০১৯ -এর লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেবার তিনি পেয়েছিলেন ৭,৯১,১২৭ টি ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপির নীলাঞ্জন রায়৷ তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৪,৭০,৫৩৩ টি ভোট।
২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়৷ সেবার পেয়েছিলেন ৫,০৮, ৪৮১ টি ভোট। তখন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিআইএম-এর ডা: আবুল হাসনাত৷ তিনি পেয়েছিলেন ৪,৩৭,১৮৭ টি ভোট।

রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছে। ১৯৫২ সালে প্রথম এই কেন্দ্রে নির্বাচিত হন বাম প্রার্থী কমল বসু। ১৯৫৭ সালে কংগ্রেসের পূর্ণেন্দু শেখর নস্কর, ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন কংগ্রেসের সুধাংশুভূষণ দাস।
১৯৬৭ থেকে ২০০৯  পর্যন্ত এই কেন্দ্র একটানা বামেদের দখলে ছিল। ১৯৬৭ সাল এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সিপিআইএম-এর জ্যোতির্ময় বসু। ১৯৯৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন সিপিএমের শমীক লাহিড়ি। ২০০৯ অবধি একটানা তিনি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ছিলেন শমীক।

২০০৯-এ ডায়মন্ড হারবারে প্রথম তৃণমূলের সাংসদ নির্বাচিত হন সোমেন মিত্র। এরপর ২০১৪ ও ২০১৯ সালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি লড়ছেন তৃতীয়বার। এ বছর এই কেন্দ্রের ভোটার রয়েছেন ১৮,৮০,৭৭৯ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৯,৫৪,৬৪৭ মহিলা ভোটার ৯,২৬,০৬১ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৭১ জন।

এদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও বয়স্কদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়া হয়েছে এমন ভোটারের সংখ্যা ৪৩১৬ জন। এই লোকসভা কেন্দ্রে ১৯৫৯ টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ১১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।

আগামী ১ জুন শেষদফায় এই কেন্দ্রে নির্বাচন। এই নির্বাচনে পাখির চোখ হিসেবে ডায়মন্ড হারবারের উপর অবশ্যই সকলের নজর থাকবে‌। এই ডায়মন্ড হারবার অনেক ইতিহাস ও ওঠাপড়ার সাক্ষী। আগামিদিনে এই কেন্দ্র থেকে কী ইতিহাস রচিত হবে, সেদিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন সকলে।