ওষুধ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মাইক্রো আর্ট

Bengal Micro Artist: ফেলে দেওয়া প্যারাসিটামল দিয়ে অবিশ্বাস্য কাজ করলেন বীরভূমের যুবক, আন্তর্জাতিক পুরস্কার এল ঝুলিতে

বীরভূম: নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তারিখ পেরিয়ে যাচ্ছে বলে ফেলে দেন সকলেই। জানেন কি এই ওষুধ দিয়েই তৈরি হচ্ছে দারুণ জিনিস তৈরি করছেন এই বাংলারই যুবক। দেখলে রীতিমত চমকে উঠবেন।

ফেলে দেওয়া প্যারাসিটামল অথবা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে বীরভূমের রামপুরহাটের প্রসেনজিৎ মণ্ডল তৈরি করছেন মাইক্রো আর্ট। এমনকি তিনি মাইক্রো আর্ট শিল্পী হিসাবে ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে’ নাম তুলেছেন। নিষ্ঠা, ধৈর্য ও কঠোর প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে কখনও মেয়াদ উত্তীর্ণ ট্যাবলেট খোদাই করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দশভূজা দুর্গা মা দুর্গা, গণেশের মূর্তি, কখনও আবার একটি চালের ওপর টাইটানিক জাহাজ।

বিস্ময়কর মাইক্রো আর্টে একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড। গত ২২ মে ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এর ‘বেস্ট মাইক্রো স্কাল্পচার আর্টিস্ট’-এর খেতাব জিতে নিলেন শিল্পী। আর্ট কলেজের ডিগ্রি ছাড়াই একের পর এক রেকর্ড। তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত সৃষ্টি দর্শকদের নজর কাড়ে। ঝুলিতে এসেছে একাধিক পুরস্কার ও সম্মান। বীরভূমের রামপুরহাট থানার প্রত্যন্ত বাধাগ্রামের সেই শিল্পী প্রসেনজিৎ মণ্ডলের তৈরি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শিল্প কর্ম। ২০২৩ সালে সারা ভারত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানঅধিকার করে মাত্র ১.৪সেন্টিমিটারের মেয়াদ পেরানো প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সূক্ষভাবে খোদাই করে মহিষাসুরমর্দিনী দূর্গা তৈরি করেছিলেন ৩২ বছরের প্রসেনজিৎ।

২০২৩ সালে ম্যাজিক বুক অফ রেকর্ডস, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস, ২০২৪ সালে লন্ডন বুক অফ রেকর্ডসে নাম তোলেন। ২০২৩ সালে অগস্ট মাসে হরিয়ানার একটি সংস্থা অনলাইনের মাধ্যমে সারা ভারত মাইক্রো আর্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রসেনজিৎ ট্যাবলেটের উপর মহিষাসুরমর্দিনীর শিল্পকর্ম ওই প্রতিযোগিতায় পাঠান। ওই প্রতিযোগিতার ফলাফলে দেশের ২০ রাজ্যের প্রতিযোগীদের হারিয়ে প্রথম হয়েছেন প্রসেনজিৎ।

আরও পড়ুন: স্নানের সময়ে শরীরের এই ৫ অংশ না ধুলেই বিপদ…! দুর্গন্ধ পিছু ছাড়বে না, বাড়বে রোগের আশঙ্কা

ফুচকা বিক্রেতার ছেলে প্রসেনজিৎ প্রথাগত শিল্পকর্ম শিক্ষা পাননি। তাঁর শিল্পকর্মের হাতেখড়ি মাধ্যমিক স্তরে স্থানীয় জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলে। পরবর্তীতে স্নাতক স্তরে অনুত্তীর্ণ প্রসেনজিৎ কাঁথি চলে যান। ডেকরেটার্সের কাজ করতেন সেখানে।

সেখানে গিয়ে ২০১১ সাল থেকে মণ্ডপ শিল্পী মুকুল দলুইয়ের কাছে কাজ শিখে ২০১৪ সালে রামপুরহাটে নিজের গ্রামে ফিরে এসে নিজেই বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে থিমের কাজ শুরু করেন। রামপুরহাট ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে চন্দ্রযান থ্রি থিমের পুজো মণ্ডপ তৈরি করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গত বছর দুর্গাপুজোর এই চন্দ্রযান থ্রি প্যান্ডেল বিভিন্ন জায়গায় খ্যাতি অর্জন করেছে।

বর্তমানে প্রসেনজিৎ রামপুরহাট, বীরভূম জেলা এবং জেলার বাইরে নানা মণ্ডপে শিল্পকর্ম বিভিন্ন ভাবে ফুটিয়ে তুলছেন। তাঁর সুক্ষ শিল্পকর্ম ইতিমধ্যে ছ’টি পুরস্কার পেয়েছে। অনলাইনে মাইক্রো আর্টে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের বেস্ট মাইক্রো স্কাল্পচার আর্টিস্ট খেতাব জিতে প্রসেনজিতের মুকুটে নতুন পালক। গুজরাত থেকে এই সম্মান পান তিনি।তাঁর এই সাফল্যে খুশি তার পরিবারের লোকজন, আত্মীয়স্বজন এবং এলাকার বাসিন্দারা।

সৌভিক রায়