Sawan 2024: ভারতের একমাত্র পঞ্চমুখী শিব মন্দির এইখানে অবস্থিত, শ্রাবণ মাসে ছুটে আসেন ভক্তরা

মুর্শিদাবাদ: শৈব সম্প্রদায়ের কাছে এই শ্রাবণ মাস মহাদেবের মাস। অতি পুণ্যের মাস শ্রাবণ। সেই মাসের তৃতীয় সোমবারে ভক্তদের সমাগমে ভরে উঠেছে মুর্শিদাবাদের বাঘডাঙা পঞ্চমুখী শিব মন্দির। ভারতবর্ষের একমাত্র পঞ্চমুখী শিব মন্দির হিসেবে এটি বিখ্যাত।

মনস্কামনা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা পায়ে হেঁটে শিবের মাথায় জল ঢালার উদ্দেশ্যে এই পঞ্চমুখী শিব মন্দিরে এসেছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার স্থানীয় ইতিহাসে অতি পরিচিত বাঘডাঙা হল একটি প্রাচীন জায়গা, যা আজও জীর্ণতার চাদর জড়িয়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। এই এলাকার পঞ্চমুখী শিবমন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যে কালীশ্বর শিব মন্দির প্রধান। এছাড়া আরও ১৩ টি শিবমন্দির রয়েছে। আঠারো শতকের শেষদিকে বাঘডাঙার রাজা কালীশঙ্কর রায় এই মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠা করেন। মূল দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে প্রশস্ত অঙ্গনে রয়েছেন কালীশ্বর শিব। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় ১৮ ফুট।

আর‌ও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরই দুর্গাপুর ব্যারেজ দেখতে ছুটলেন জেলাশাসক ও এসপি

৯ টি চূড়াবিশিষ্ট মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তি ও ফুলকারি নকশা আছে। কালীশ্বর শিব এখানে পঞ্চমুখের এবং প্রায় চার ফুট উচ্চতার। এই প্রাঙ্গণের মধ্যে উত্তরে পাঁচটি শিবমন্দির আছে, যার দুটি আটচালা ও বাকিগুলি চারচালা। দক্ষিণে আট’টি শিবমন্দির আছে, যার দুটি আটচালা ও বাকিগুলি চারচালা স্থাপত্য রীতির। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে একটু উত্তরে গেলেই বাঘডাঙা রাজের বিশাল ঠাকুরবাড়িতেও অনেকগুলি মন্দির রয়েছে।

ঠাকুরবাড়ির মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করলেই পড়ে প্রাচীর ঘেরা প্রশস্ত অঙ্গন। একটি বড় দালান মন্দিরে দেবী সিংহবাহিনী নিত্য পুজো পান। মূল বেদীর উপর দেবী মহিষমর্দিনী রয়েছেন। দুর্গা পুজোয় এখানে বড় উত্‍সব হয়। এর পশ্চিমদিকে রয়েছে লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির। আঠারো শতকে সূর্যমানের পুত্রবধূ পার্বতীদেবী এই মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

একসময় এখানে অনেক মন্দির ছিল ও কাঁসর-ঘণ্টাধ্বনিতে মুখরিত থাকত চারপাশ। কিন্তু আজ উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় সব ধ্বংসপ্রাপ্ত। রাজবাড়িতে ছিল রাধাকৃষ্ণ মন্দির, কাছেই ছিল একবাংলা সূর্যেশ্বর মন্দির সহ কত ছোটবড় মন্দির। এখন সবই প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। চারিপাশ ভোরে উঠেছে জঙ্গলে। এখানে নরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়দের পূজিত প্রায় ৩০০ বছরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটি মূল মন্দির নষ্ট হওয়ার কারণে একটি দালান মন্দিরে পূজিত হচ্ছে। কাছেই বিরাট দিঘি রয়েছে, নাম সদর পুকুর। বর্তমানে বাঁধানো ঘাট, বসার জায়গা করে দিঘির সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে।

কৌশিক অধিকারী