Tag Archives: Shiv temple

Sawan 2024: বাঁকে ফুটে উঠছে শিল্পের কারুকাজ, দেখতে শ্রাবণ মাসে রাস্তার দুই ধারে উপচে পড়ছে ভিড়

নদিয়া: বাঁকে করে গঙ্গাজল নিয়ে গিয়ে সেটি শিবের মাথায় ঢালার প্রবণতা রয়েছে যুগ যুগান্তর ধরে। তবে বর্তমানে এই বাঁকেই ফুটে উঠেছে বিভিন্ন শিল্পকলা। যা দেখতে রাস্তার ধারে ভিড় করছেন বহু মানুষ। আজ অর্থাৎ ১২ অগস্ট এবারের শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার। স্বাভাবিকভাবেই শিব ভক্তদের কাছে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যের। এই দিনে বাঁকে করে জল নিয়ে গিয়ে শিবের মাথায় ঢাললেন লক্ষাধিক ভক্ত।

শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বলে বিবেচিত হয় শিবভক্তদের কাছে। শ্রাবণ মাসের প্রথম ও শেষ সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য নবদ্বীপের গঙ্গার ঘাটে ভিড় করেন লক্ষাধিক মানুষ।

আর‌ও পড়ুন: শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার সময় পিষে দিল বেপরোয়া লরি! ঘটনাস্থলেই শেষ দু’জন

কেউ গাড়িতে, কেউ মোটরবাইকে কেউবা পায়ে হেঁটে কাঁধে করে বাঁক নিয়ে গিয়ে ৩৫ কিলোমিটার দূরে শিবনিবাস মন্দিরে জল ঢালতে যান। মোটা বাঁশ দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ বস্তু, যার দুই দিকে দড়ি দিয়ে ঝোলালো থাকে মাটির অথবা প্লাস্টিকের ঘট, সেটিকে বলা হয় বাঁক। সেই বাঁকে ঝোলানো ঘটে করেই জল বয়ে নিয়ে যান ভক্তরা। তবে এখন আর সাধারণ বাঁশের বাঁক দেখা যায় না। বরং শিবভক্তরা নিয়ে আসেন বিভিন্ন কারুকার্য করা রংবেরঙের বাঁক।

কোনও বাঁক থাকে বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো, কোনও বাঁকে থাকে শিবলিঙ্গ, শিবের ত্রিশূল, সাং কিংবা কোনও বাঁকে দেখা যায় মা কালীর মূর্তি। বর্তমানে এই কারুকার্য করা বাঁকের প্রতিযোগিতা লেগে যায় ভক্তদের মধ্যে। লক্ষাধিক মানুষের হাতে এই বাঁকে করে জল বয়ে নিয়ে যাওয়া দেখতে রাস্তার ধারে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে বহু সাধারণ মানুষ।

এইসকল বাঁকগুলি সাধারণ বাঁকের তুলনায় যথেষ্ট ভারি হয়। এবং সেগুলি নিয়ে যাওয়াও যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য। সেই কারণেই পথ চলতি সেই সমস্ত ভক্তদের সেবা করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারাও রাস্তার ধারে তৎপর থাকেন। কেউ বাঁশের চাতাল করে রাখেন সেই বাঁকগুলি রাখার জন্য, কেউবা ভক্তদের বিশ্রামের জন্যে দেন জল ও আহার। কেউবা তাঁদের পা ধুয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন।

মৈনাক দেবনাথ

Sawan 2024: শ্রাবণের শেষ সোমবারে উপচে পড়া ভিড় ৩০০ বছরের পাতলেশ্বর মন্দিরে

মুর্শিদাবাদ: শ্রাবণ মাসকে হিন্দু ধর্মে অতি পবিত্র একটি মাস বলে গণ্য করা হয়। এটি দেবাদী দেব মহাদেবের মাস বলে পরিচিত। শ্রাবণ মাসে শিব ভক্তরা বিভিন্ন শৈব ক্ষেত্রে গিয়ে শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালেন। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলোতে শিব ভক্তদের বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন শিব মন্দিরে। এই সোমবার অর্থাৎ ১২ অগস্ট হল এবারের শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার। স্বাভাবিকভাবেই এই দিন বিভিন্ন শৈবক্ষেত্র এবং শিব মন্দিরে সকাল থেকেই উপচে পড়ছে ভক্তদের ভিড়।

শ্রাবণ মাসের চতুর্থ সোমবার উপলক্ষে এদিন ভক্তদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেল বহরমপুরের পাতালেশ্বর শিব মন্দিরে। এক সময়ে কাশিমবাজার বন্দরকে কেন্দ্র করে এই এলাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নগরীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু অষ্টাদশ শতকে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভাগীরথী ‘কাটিগঙ্গা’-তে পরিণত হলে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে ক্রমশই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে কাশিমবাজার। কিন্তু প্রতি বছরের এই সময়টা একেবারে বদলে যায় শহরের ছবিটা। আর তার কারণ পাতালেশ্বর মন্দির।

আর‌ও পড়ুন: আর স্কুলে পৌঁছনো হল না, সরকারি বাসের ধাক্কায় রাস্তাতেই মৃত্যু শিক্ষকের

মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে কাশিমবাজার এক সুপ্রসিদ্ধ নাম। একসময় ফরাসি, ডাচ, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সকলেই এখানে বাণিজ্য কুঠি গড়ে তুলেছিল। হুগলি, পদ্মা ও জলঙ্গির মাঝখানে অবস্থিত ত্রিভুজাকার শহরটিকে অনেকে কাশিমবাজার বলে বর্ণনা করেছেন। এই কাশিমবাজার প্রাচীনকাল থেকেই ইতিহাসের অনেক সাক্ষ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। শোনা যায়, ১৭ দশকে ভাগিরথী নদী তার গতিপথ কিছুটা পরিবর্তনে করে কাশিমবাজারের পাশে দিয়ে ফরাসডাঙা পর্যন্ত গড়ে তুলেছিল কাটিগঙ্গা। আজ থেকে আনুমানিক ৩০০ বছর আগে কাটিগঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছিল এই পাতালেশ্বর শিব মন্দির। হিন্দু পুরাণ অনুসারে এখানকার শিবলিঙ্গকে বলা হয় স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ।

২০০৬ সালে পাতলেশ্বর মন্দিরের উন্নতির জন্য কমিটি তৈরি করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এই অঞ্চলের অধিবাসীরা ও ব্যবসায়ীরা মন্দিরটির উন্নতিকল্পে চার লক্ষ টাকা দান করেন। পরবর্তীকালে মন্দিরটিকে একটু বৃহৎ আকার দেওয়া হয়। শ্রাবণের শেষ সোমবার এই মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালতে বরাবরই ভিড় জমান ভক্তরা। এবারেও তার অন্যথা হল না।

কৌশিক অধিকারী

Shiva Temple in Sawan: সংস্কারের পর প্রাচীন এই শিবমন্দিরে পুণ্য শ্রাবণে উপচে পড়ছে ভক্তদের ভিড়

সার্থক পণ্ডিত, তুফানগঞ্জ: বানেশ্বর কিংবা জল্পেশের শিব মন্দিরের নাম তো অনেক শুনেছেন। এই দুই মন্দির দীর্ঘ সময়ের পুরনো। তবে কোচবিহারে আরও বেশ কিছু পুরনো মন্দির রয়েছে। যেখানে গেলে যে কোনও পর্যটক কিংবা পুণ্যার্থীর মন ভরে উঠবে এটুকু নিশ্চিত। এমনই এক মন্দির হল তুফানগঞ্জ মহকুমা এলাকার অন্তর্গত ষান্তেশ্বর শিব মন্দির। এই শিব মন্দির দীর্ঘ রাজ আমলে স্থাপন করা হয়েছিল। তারপর মন্দির চত্বরের ও বেশ কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে।

মন্দিরের এক ভক্ত ধর্মনারায়ণ বর্মা জানান, “রাজ আমলের এই মন্দির স্থাপন করা হয়। তবে কোনও কারণে মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে রাজাদের পরবর্তী সময়ে এই মন্দিরকে ধীরে ধীরে সংস্কার করা হয়। তবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বহু মানুষ এই মন্দিরের সম্পর্কে সঠিক জানতেন না। তবে এই মন্দিরের সম্পর্কে জানান পর বহু মানুষ এই মন্দিরে আসেন। এখানে ভগবান শিব রয়েছেন। ফলে গোটা শ্রাবণ মাসে জুড়ে প্রচুর ভক্তদের সমাগম ঘটে এই মন্দিরে। ফলে এই মন্দির ধীরে ধীরে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।”

আরও পড়ুন : ভ্যাপসা গরমের সঙ্গী অসহ্য ঘাম, যে কোনও মুহূর্তে গৌড়বঙ্গের এই জেলায় ধেয়ে আসবে বজ্রবিদ্যু‍‍ৎ-সহ বৃষ্টি

মন্দিরের আরও দুই ভক্ত জয়কৃষ্ণ বর্মন ও সরলা বর্মন জানান, “একটা সময় এমন ছিল যখন খুব বেশি ভক্ত আসতেন না। সেখানে বিপুল পরিমাণে মানুষ এখন ভিড় জমান মন্দিরে। প্রাচীন এই মন্দিরকে সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থায় রয়েছে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডে। শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার করে এখানে বড় করে যজ্ঞেরও আয়োজন করা হয়। এছাড়াও রান্না করা হয় প্রচুর ভোগের খিচুড়ি। দূর দুরান্তের ভক্তরা এখানে আসেন শিবের মাথায় জল ঢালতে ও মন্দির দর্শন করতে।”

বানেশ্বর ও জল্পেশ মন্দির ছাড়াও এই ষান্তেশ্বর শিব মন্দিরেও বহু মানুষের ভিড় চোখে পড়ছে শ্রাবণ মাসে। আগামিদিনে এই মন্দিরে ভিড় আরও অনেকটাই বেড়ে উঠবে বলে আশা। এবং মন্দির সংস্কার করে আরও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখা হোক, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

Sawan 2024: শুশুনিয়ার ঝর্ণার জল নিয়ে পথ পাড়ি, শিবলিঙ্গে জল ঢালতে ব্যাপক উন্মাদনা

বাঁকুড়া: শ্রাবণ মাস দেবাদিদেব মহাদেবের মাস। সকাল থেকেই বিভিন্ন শিব মন্দিরে উপচে পড়ে ভক্তদের ভিড়। শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবার সেই ছবি ধরা পড়ল বাঁকুড়াত‌ওে। শুধুমাত্র শিবের প্রতি বিশ্বাস আর ভক্তির জোরে শিশু থেকে বৃদ্ধ এমনকি কিশোর-কিশোরী থেকে প্রৌঢ়া, প্রত্যেককেই দেখা গেল শুশুনিয়া পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে জল নিয়ে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে বাবা ভোলেনাথের মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালতে।

লম্বা পথ বাঁকে জল নিয়ে হাঁটতে তাঁদের কোনও কষ্ট হয়নি। এর কারণ হিসেবে পুণ্যার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁদের মনে থাকা আধ্যাত্মিক চেতনা এই পথ পাড়ি দিতে শারীরিক ও মানসিক জোর যুগিয়েছে। ভোরে বাবার আশীর্বাদ পাওয়ার ইচ্ছে নিয়েই মন্দিরে পৌঁছে যান ভক্তেরা। দিনভর চলে মহাদেবকে স্নান করানো এবং পুজো পাঠ। বাঁকুড়ার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র শুশুনিয়া পাহাড়। পিছনে সুবিশাল পাহাড়। পাহাড়ের কোলে দেখা যাচ্ছে কালো মেঘ। আর এই পাহাড়ের জলকে কেন্দ্র করেই মানুষের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস।

আর‌ও পড়ুন: অনলাইন পোর্টাল হয়েও হাল ফিরল না, পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে জেলার কলেজগুলো

শুশুনিয়ার পবিত্র ঝর্ণার জল বাঁকে করে বহন করে নিয়ে যান ভক্তরা। এরপর মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গের মাথায় সেই জল ঢালেন। সোমবার দেখা গেল পাহাড়ের কোলে গেরুয়া বসন পরিহিত সঙ্গবদ্ধ মানুষের লম্বা লাইন। রাস্তার এক ধার দিয়ে হাঁটছেন পূর্ণ্যার্থীরা, অপর ধার দিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য যানবাহন। এত ভিড়ের মধ্যেও যেন শুশুনিয়ার সৌন্দর্য ঢেকে রাখা যাচ্ছে না।

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী

Sawan 2024: শ্রাবণের তৃতীয় সোমবার তোর্ষা কালীবাড়িতে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়

শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবারে ভক্তদের ভিড় তোর্ষা কালীবাড়িতে
শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবারে ভক্তদের ভিড় তোর্ষা কালীবাড়িতে
শুধু জেলার নয়, দূরদুরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা পুজো দিতে আসেন এই মন্দিরে
শুধু জেলার নয়, দূরদুরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা পুজো দিতে আসেন এই মন্দিরে
ভক্ত মহলে তোর্ষা কালীবাড়ির একটি আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে
ভক্ত মহলে তোর্ষা কালীবাড়ির একটি আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে
শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার মন্দিরে যজ্ঞের আয়োজন হয়, ভক্তরা এই যজ্ঞে আহুতি দেন
শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার মন্দিরে যজ্ঞের আয়োজন হয়, ভক্তরা এই যজ্ঞে আহুতি দেন
ভক্তরা তোর্ষা নদী থেকে জল তুলে শিবলিঙ্গের অভিষেক করেন
ভক্তরা তোর্ষা নদী থেকে জল তুলে শিবলিঙ্গের অভিষেক করেন

Sawan 2024: ভারতের একমাত্র পঞ্চমুখী শিব মন্দির এইখানে অবস্থিত, শ্রাবণ মাসে ছুটে আসেন ভক্তরা

মুর্শিদাবাদ: শৈব সম্প্রদায়ের কাছে এই শ্রাবণ মাস মহাদেবের মাস। অতি পুণ্যের মাস শ্রাবণ। সেই মাসের তৃতীয় সোমবারে ভক্তদের সমাগমে ভরে উঠেছে মুর্শিদাবাদের বাঘডাঙা পঞ্চমুখী শিব মন্দির। ভারতবর্ষের একমাত্র পঞ্চমুখী শিব মন্দির হিসেবে এটি বিখ্যাত।

মনস্কামনা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা পায়ে হেঁটে শিবের মাথায় জল ঢালার উদ্দেশ্যে এই পঞ্চমুখী শিব মন্দিরে এসেছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার স্থানীয় ইতিহাসে অতি পরিচিত বাঘডাঙা হল একটি প্রাচীন জায়গা, যা আজও জীর্ণতার চাদর জড়িয়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। এই এলাকার পঞ্চমুখী শিবমন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যে কালীশ্বর শিব মন্দির প্রধান। এছাড়া আরও ১৩ টি শিবমন্দির রয়েছে। আঠারো শতকের শেষদিকে বাঘডাঙার রাজা কালীশঙ্কর রায় এই মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠা করেন। মূল দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে প্রশস্ত অঙ্গনে রয়েছেন কালীশ্বর শিব। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় ১৮ ফুট।

আর‌ও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরই দুর্গাপুর ব্যারেজ দেখতে ছুটলেন জেলাশাসক ও এসপি

৯ টি চূড়াবিশিষ্ট মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তি ও ফুলকারি নকশা আছে। কালীশ্বর শিব এখানে পঞ্চমুখের এবং প্রায় চার ফুট উচ্চতার। এই প্রাঙ্গণের মধ্যে উত্তরে পাঁচটি শিবমন্দির আছে, যার দুটি আটচালা ও বাকিগুলি চারচালা। দক্ষিণে আট’টি শিবমন্দির আছে, যার দুটি আটচালা ও বাকিগুলি চারচালা স্থাপত্য রীতির। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে একটু উত্তরে গেলেই বাঘডাঙা রাজের বিশাল ঠাকুরবাড়িতেও অনেকগুলি মন্দির রয়েছে।

ঠাকুরবাড়ির মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করলেই পড়ে প্রাচীর ঘেরা প্রশস্ত অঙ্গন। একটি বড় দালান মন্দিরে দেবী সিংহবাহিনী নিত্য পুজো পান। মূল বেদীর উপর দেবী মহিষমর্দিনী রয়েছেন। দুর্গা পুজোয় এখানে বড় উত্‍সব হয়। এর পশ্চিমদিকে রয়েছে লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির। আঠারো শতকে সূর্যমানের পুত্রবধূ পার্বতীদেবী এই মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

একসময় এখানে অনেক মন্দির ছিল ও কাঁসর-ঘণ্টাধ্বনিতে মুখরিত থাকত চারপাশ। কিন্তু আজ উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় সব ধ্বংসপ্রাপ্ত। রাজবাড়িতে ছিল রাধাকৃষ্ণ মন্দির, কাছেই ছিল একবাংলা সূর্যেশ্বর মন্দির সহ কত ছোটবড় মন্দির। এখন সবই প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। চারিপাশ ভোরে উঠেছে জঙ্গলে। এখানে নরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়দের পূজিত প্রায় ৩০০ বছরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটি মূল মন্দির নষ্ট হওয়ার কারণে একটি দালান মন্দিরে পূজিত হচ্ছে। কাছেই বিরাট দিঘি রয়েছে, নাম সদর পুকুর। বর্তমানে বাঁধানো ঘাট, বসার জায়গা করে দিঘির সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে।

কৌশিক অধিকারী

Sawan 2024: বিষ্ণুপুরে না হয়েও এই মন্দিরে দেখা যায় টেরাকোটা শিল্প! শ্রাবণ মাস এলেই উপচে পড়ে ভিড়

কোচবিহার: জেলা শহরের আরেকটি বেশ পুরনো মন্দির হল ধলুয়াবাড়ির শিব মন্দির। এই মন্দির কোচবিহারের রাজার আমলে স্থাপন করা হয়েছিল। এখানে পুজো করা হয় শিবলিঙ্গ এবং নারায়ণ। এই মন্দির প্রাচীন স্থাপত্য নির্মাণ শৈলীতে তৈরি করা। এই মন্দিরের গায়ে বিষ্ণুপুর ঘরানার টেরাকোটার শিল্প দেখতে পাওয়া যায়। এখানে প্রবেশের গেটের সামনে রয়েছে দুটি নন্দীর মূর্তি, যা মহাদেবের বাহন রূপে পরিচিত। আর ঠিক মন্দিরের পাশেই রয়েছে প্রাচীন কালের একটি পাতকুয়ো। যদিও বর্তমানে এই কুয়োকে সংস্কার করে সুন্দর করা হয়েছে।

কোচবিহারের এই প্রাচীন মন্দিরের পুজো কমিটির সম্পাদক শ্যামল দাস জানান, বছরের অন্যান্য সময়ে এই মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনা কম থাকলেও শ্রাবণ মাসে ভক্তদের সংখ্যা বেড়ে যায়। এই সময় সকাল থেকে মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনা শুরু হয়। দূর দূরান্ত থেকেও বহু পর্যটক আসেন এই মন্দির দর্শনে। মূল মন্দিরের পাশেই দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা রয়েছে। পুজো দিয়ে দর্শনার্থীদের বসার জন্য বিশ্রাম ঘরও বানানো হয়েছে মন্দির চত্বরে। এই মন্দিরের পরিবেশ যেকোন‌ও পর্যটকের মনকে খুব সহজেই আকর্ষণ করে। তাই প্রতিদিন বহু মানুষ এই মন্দিরে ভিড় জমান পুজোর সময়।

আর‌ও পড়ুন: বাইকে তারাপীঠে এসেছিল বিহারের পাঁচ বন্ধু, ফেরার পথে সব শেষ!

মন্দিরের এক ভক্ত স্বপ্না দাস জানান, শ্রাবণ মাসে এই মন্দিরে ভক্তদের সংখ্যা লক্ষাধিক হয়ে যায়। সকাল থেকে বহু মানুষ আসেন এই মন্দিরে পুজো দিতে। স্থানীয় বাসিন্দা সুচিস্মিতা দত্ত শর্মা জানান, এই মন্দির জেলার পর্যটনে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। জেলার বুকে আর কোনোও মন্দিরে এই ধরনের টেরাকোটা শিল্প দেখতে পাওয়া যায় না। তাই তো এই মন্দিরের আকর্ষণে দূর দূরান্তের বহু পর্যটক ছুটে আসেন। তবে এই মন্দিরের সংস্কারের দরকার। দ্রুত সেই সমস্ত কাজ করা হলে মন্দিরটি আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।

বর্তমান সময়ে জেলার এই বিশেষ মন্দিরকে ঘিরে বাইরের পর্যটকদের আকর্ষণ চোখে পড়ার মত। সারা বছর পর্যটকেরা কমবেশি আসতেই থাকেন এই মন্দির দর্শনে। তবে শ্রাবণ মাসে এই সংখ্যাটা বেড়ে যায় অনেকটাই। রাজ আমলের সুপ্রাচীন এই মন্দির জেলার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে।

সার্থক পণ্ডিত

Sawan 2024: খরার মধ্যে শিব লিঙ্গের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতেই নেমে এসেছিল বৃষ্টি! সেই মন্দিরে জল ঢালার লম্বা লাইন

নদিয়া: শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবারে কাকভোর থেকেই শিব ভক্তদের লম্বা লাইন দেখা গেল নদিয়ার জলেশ্বর শিব মন্দিরে। শান্তিপুরে অবস্থিত এই বিখ্যাত মন্দিরটি বাংলার অন্যতম প্রাচীন শৈবতীর্থটি। এখানে রয়েছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ। মাটিয়ারির রুদ্ধেশ্বর ও রাঘবেশ্বর মন্দিরের সঙ্গেও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। তবে, উচ্চতায় কিছুটা কম।

প্রায় ৩৫০ বছর আগে প্রচন্ড খরায় ভক্তবৃন্দের মনস্কামনা পূর্ণ করে অঝোর ধারায় ঝরেছিল বৃষ্টি। সেই থেকেই এর নাম জলেশ্বর। এখানে মহা শিবরাত্রি তিথিতে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যায়। শান্তিপুরের জলেশ্বর তিলিপাড়ার শিব মন্দির নদিয়ার রাজা রুদ্র রায়ের কনিষ্ঠপুত্র রাম কৃষ্ণের জননী প্রায় আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত করেন বলে মনে করা হয়। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটি কালো পাথরের। উচ্চতা প্রায় তিন ফুট। চড়ক, নীল উৎসব, শিবরাত্রি ইত্যাদি তিথিগুলিতে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় এই জলেশ্বর মন্দিরে।

আর‌ও পড়ুন: মানুষের কল্যাণে তৈরি হচ্ছে বোমা! ব্যাপারটা কী?

মন্দিরটির গায়ে বহু পুরনো পোড়ামাটির মূর্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারে সজ্জিত প্রাচীন মূর্তি আছে। তাঁদের বিষয়বস্তু পৌরাণিক। কৃষ্ণ লীলা, ভীস্মের শরশয্যা, হর-গৌরী যুদ্ধ ইত্যাদি কাহিনী সেখানে ফুটে উঠেছে।

কথিত আছে, একবার কৃষিপ্রধান নদিয়ায় বৃ্ষ্টির চরম আকাল দেখা দিয়েথিল। সেই সময় প্রখ্যাত সাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এই শিবমন্দিরে ছুটে আসেন। তিনি বৃষ্টিপাতের কামনায় এই মন্দিরে শিবের মাথায় প্রচুর গঙ্গাজল ঢালেন। তারপরই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এর পর‌ই এই শিবমন্দিরের নাম বদলে জলেশ্বর শিবমন্দির নামে ডাকতে শুরু করেন স্থানীয়রা। আজও এই নামেই পরিচিত শান্তিপুরের শিবমন্দিরটি।

মিউনিসিপ্যাল কমিশনার এবং ইংরেজ আমলের ম্যাজিস্ট্রেট কালীচরণ চট্টোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষরা এই মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। কালীচরণ চট্টোপাধ্যায় নিজে একবার এই মন্দিরের সংস্কার করান। তাঁর মেয়ে মোহিতকুমারীর সময়কালে এই মন্দির সংলগ্ন নাটমন্দিরটি তৈরি হয়। দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই মন্দিরে। কথিত আছে, এখানে আসার সকল ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন জলেশ্বর শিব।

শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার উপলক্ষে চোখে পড়ার মত ভিড় ছিল সেবায়েতদের। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে জল ঢালা এবং পুজো-অর্চনা। শ্রাবণ মাসের চারটি সোমবারের মধ্যে প্রথম এবং শেষ এই দুটি সোমবারে অত্যাধিক ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

মৈনাক দেবনাথ

Sawan 2024: শ্রাবণের প্রথম সোমবারেই শিবভক্তদের ভিড় বানেশ্বরে, সেজে উঠেছে গোটা মন্দির

কোচবিহার: জেলার ঐতিহ্যবাহী মন্দির হল বানেশ্বর শিব মন্দির। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে আজও রহস্য আছে। সারা বছর এই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ে। তবে শ্রাবণ মাস উপলক্ষে ভক্তদের ভিড় কিছুটা হলেও বেড়ে যায় এই মন্দিরে। ইতিমধ্যেই বহু ভক্ত শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। সেই উপলক্ষে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বাণেশ্বর শিব মন্দির।

এই দিন, অর্থাৎ ২২ জুলাই এবারের শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার। এই পবিত্র দিন উপলক্ষে বানেশ্বর শিব মন্দিরে ধীরে ধীরে ভক্তদের ভিড় বাড়ছে। তপন কুমার নন্দী নামে এক প্রবীণ শিব ভক্ত জানান, এই মন্দিরে সারা বছরই ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। তবে শ্রাবণ মাস উপলক্ষে এই ভিড় অনেকটাই বেড়ে যায়। এই সময় মন্দিরকে বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। পুলিশি পাহারা কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দেওয়া হয় ভক্তদের সুরক্ষার্থে। এই সময় দূর-দূরান্তের ভক্তরা পায়ে হেঁটে বানেশ্বর শিব মন্দিরে আসেন। গোটা শ্রাবণ মাস জুড়ে এই একই ছবি চোখে পড়ে।

আর‌ও পড়ুন: শিব ভক্তিতে হাতে তৈরি জিনিসের প্রদর্শনী! শ্রাবণ মাসে আরাধনার আরেক পথ

বানেশ্বর শিব মন্দির কবে স্থাপন করা হয়েছিল তা আজও রহস্য হয়ে থেকে গিয়েছে। দীর্ঘ সময় পরেও এই মন্দিরের জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি ভক্তদের মধ্যে। শ্রাবণ মাসে ভক্তরা বানেশ্বর শিব মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য পায়ে হেঁটে এসে উপস্থিত হন। এই সময় রীতিমত মেলার মত পরিস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়।

সার্থক পণ্ডিত

Nil Shasthi: নীলের ব্রত পালনে মন্দিরে মন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড়

পূর্ব মেদিনীপুর: বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। চৈত্র মাসে শিবের গাজন ও চড়ক পুজোর মাধ্যমে শেষ হয় বাংলা বছর। গাজন ও চড়ক পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নীল পুজো। প্রচলিত বিশ্বাস, নীল পুজোর দিন মহাদেবকে তুষ্ট করলেই পূর্ণ হয় মনস্কামনা। ফলে এই নীল পুজোর দিন পূর্ণ্যার্থীদের শিব মন্দিরে মন্দিরে ভিড় করতে দেখা যায়। নীল পুজোর আগে ভক্তরা মন্দিরে মন্দিরে মানতের পুজো দেন, শিবের মাথায় জল ঢেলে ভঙ্গ করেন ব্রত।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অন্তর্গত মিরিকপুর গ্রামের প্রাচীন চন্দ্রেশ্বর মন্দিরে নীল পুজো উপলক্ষে এদিন পূর্ণার্থীদের ভিড় নজরে এল। গ্রামবাংলার অন্যতম প্রাচীন ও লোকসংস্কৃতির ধারক ও বাহক গাজন উৎসব। গ্রাম বাংলার শিব মন্দিরে মন্দিরে চৈত্র মাসে এই গাজন উৎসব পালিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিন চড়ক পুজোর মাধ্যমে শেষ হয় গাজন উৎসব। এই গাজন উৎসবের মূল হল নীল পুজো। নীল পুজো অর্থাৎ হর পার্বতীর মিলন উৎসব। নীল পুজো উপলক্ষে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য নদী থেকে জল তুলে বিভিন্ন শিব মন্দিরে এসে শিবলিঙ্গে জল ঢালেন পুণ্যার্থীরা।

আর‌ও পড়ুন: চৈত্র শেষে গাজন উৎসব গোটা জেলায়

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বেশ কিছু প্রাচীন শিব মন্দির রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর চৈত্র মাসে গাজন উৎসব ও নেই পুজো হয়ে থাকে। তমলুক ব্লকের মিরিকপুর গ্রামের চন্দ্রেশ্বর জিউ শিব মন্দিরে গাজন উৎসব উপলক্ষে নীলর দিন সন্ন্যাসী সহ পুণ্যার্থীর জল, দুধ ঢালার ভিড় দেখা যায়। বহু পুণ্যার্থী জল ও দুধ দিয়ে পুজো দিতে আসেন আসেন প্রায় ২০০ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রেশ্বর জীউ শিব মন্দিরে।

তমলুকের রূপনারায়ণ নদী থেকে জল তুলে পায়ে হেঁটে মন্দিরে আসেন পূর্ণার্থীরা। কথিত আছে এই মন্দিরে দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে পুণ্যার্থীরা যা মানত করেন সেই মনস্কামনা পূরণ হয়। ফলে প্রতিবছর মন্দিরে পুণ্যার্থীর ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

সৈকত শী