জলেশ্বর মন্দিরে জল ঢালতে ভক্তদের ভিড়

Sawan 2024: খরার মধ্যে শিব লিঙ্গের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতেই নেমে এসেছিল বৃষ্টি! সেই মন্দিরে জল ঢালার লম্বা লাইন

নদিয়া: শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবারে কাকভোর থেকেই শিব ভক্তদের লম্বা লাইন দেখা গেল নদিয়ার জলেশ্বর শিব মন্দিরে। শান্তিপুরে অবস্থিত এই বিখ্যাত মন্দিরটি বাংলার অন্যতম প্রাচীন শৈবতীর্থটি। এখানে রয়েছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ। মাটিয়ারির রুদ্ধেশ্বর ও রাঘবেশ্বর মন্দিরের সঙ্গেও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। তবে, উচ্চতায় কিছুটা কম।

প্রায় ৩৫০ বছর আগে প্রচন্ড খরায় ভক্তবৃন্দের মনস্কামনা পূর্ণ করে অঝোর ধারায় ঝরেছিল বৃষ্টি। সেই থেকেই এর নাম জলেশ্বর। এখানে মহা শিবরাত্রি তিথিতে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যায়। শান্তিপুরের জলেশ্বর তিলিপাড়ার শিব মন্দির নদিয়ার রাজা রুদ্র রায়ের কনিষ্ঠপুত্র রাম কৃষ্ণের জননী প্রায় আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত করেন বলে মনে করা হয়। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটি কালো পাথরের। উচ্চতা প্রায় তিন ফুট। চড়ক, নীল উৎসব, শিবরাত্রি ইত্যাদি তিথিগুলিতে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় এই জলেশ্বর মন্দিরে।

আর‌ও পড়ুন: মানুষের কল্যাণে তৈরি হচ্ছে বোমা! ব্যাপারটা কী?

মন্দিরটির গায়ে বহু পুরনো পোড়ামাটির মূর্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারে সজ্জিত প্রাচীন মূর্তি আছে। তাঁদের বিষয়বস্তু পৌরাণিক। কৃষ্ণ লীলা, ভীস্মের শরশয্যা, হর-গৌরী যুদ্ধ ইত্যাদি কাহিনী সেখানে ফুটে উঠেছে।

কথিত আছে, একবার কৃষিপ্রধান নদিয়ায় বৃ্ষ্টির চরম আকাল দেখা দিয়েথিল। সেই সময় প্রখ্যাত সাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এই শিবমন্দিরে ছুটে আসেন। তিনি বৃষ্টিপাতের কামনায় এই মন্দিরে শিবের মাথায় প্রচুর গঙ্গাজল ঢালেন। তারপরই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এর পর‌ই এই শিবমন্দিরের নাম বদলে জলেশ্বর শিবমন্দির নামে ডাকতে শুরু করেন স্থানীয়রা। আজও এই নামেই পরিচিত শান্তিপুরের শিবমন্দিরটি।

মিউনিসিপ্যাল কমিশনার এবং ইংরেজ আমলের ম্যাজিস্ট্রেট কালীচরণ চট্টোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষরা এই মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। কালীচরণ চট্টোপাধ্যায় নিজে একবার এই মন্দিরের সংস্কার করান। তাঁর মেয়ে মোহিতকুমারীর সময়কালে এই মন্দির সংলগ্ন নাটমন্দিরটি তৈরি হয়। দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই মন্দিরে। কথিত আছে, এখানে আসার সকল ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন জলেশ্বর শিব।

শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার উপলক্ষে চোখে পড়ার মত ভিড় ছিল সেবায়েতদের। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে জল ঢালা এবং পুজো-অর্চনা। শ্রাবণ মাসের চারটি সোমবারের মধ্যে প্রথম এবং শেষ এই দুটি সোমবারে অত্যাধিক ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

মৈনাক দেবনাথ