বাবার কোলে বিষ্ণু বসাক 

Madhyamik Result 2024: বাবার কোলে চড়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে যেত বিষ্ণু, মাধ্যমিকে তাক লাগানো সাফল্য, ফলাফল জানলে চমকে যাবেন

পূর্ব বর্ধমান: মনের জোরে পরীক্ষার ভয় আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করেছিল আগেই। আর এবার মাধ্যমিকে সফল পূর্ব বর্ধমানের বিশেষ ভাবে সক্ষম সেই পরীক্ষার্থী। ইতিমধ্যেই রাজ্যে প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক ২০২৪-এর ফলাফল। নিজেদের মেধার জোরে, মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অনেকেই। যে তালিকায় রয়েছে পূর্ব বর্ধমান একাধিক পরীক্ষার্থীও। তবে পূর্ব বর্ধমান থেকেই সামনে এল আরও এক সফলতার গল্প। বাবার কোলে চড়ে পৌঁছেছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্রে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে, মনের জোরে মাধ্যমিকে সফল বিষ্ণু বসাক।

পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাট শিমলা গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণু বসাক। এই বিষ্ণু বসাক বাবার কোলে চেপে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেছিল। সে পরীক্ষাও দিয়েছিল নিজের হাতে লিখেই। তবে বিষ্ণু কী উত্তীর্ণ হবে ? এই প্রশ্ন ছিল অনেকের মনেই। তাই ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর বিষ্ণুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় বিষ্ণু ভালভাবে পাস করেছে।

আরও পড়ুন-      শৈশবে চরম কষ্ট, বাবা দেননি মেয়ের মর্যাদা, পড়াশোনা ছেড়ে চলচ্চিত্রে এসেই বলিউডের এভারগ্রীন তিনি, বলুন তো মায়ের কোলে ‘এই’ শিশুটি কে?

বিষ্ণুর বাবা মা জানিয়েছেন, বিষ্ণু হাঁটতে কিংবা দাঁড়াতে পারে না। ছোট থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী তার। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় তাকে কোলে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা। আর ফল প্রকাশের পর সেই ছেলের সাফল্যে স্বভাবতই খুশি বিষ্ণুর মা বাবা। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফলাফল। ৪২২ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে বিষ্ণু বসাক। বিষ্ণু নসরতপুর পারুল ডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। শারীরিক অবস্থার কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারত না সে। বাড়িতে বসেই পড়াশোনা করত বিষ্ণু। এই প্রসঙ্গে বিষ্ণুর বাবা বলেন, “কোলে করে টোটোতে বসিয়ে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতাম , আবার আমিই নিয়ে আসতাম। ও সবসময় বাড়িতেই বসে থাকত আর বই নিয়েই থাকত। একটা ঘরের মধ্যে বন্দী জীবন কাটিয়ে ও যে এত ভাল রেজাল্ট করেছে আমি অনেক খুশি হয়েছি।”

আরও পড়ুন-   সদ্যোজাত শিশুর কি AC-তে ঘুমানো উচিত? ৯০% বাবা-মায়েরা এই ভুলটাই করে, এখনই সতর্ক না হলে ঘনঘন অসুস্থ হবে আপনার সন্তান

ঘরবন্দী অবস্থার মধ্যেও মনের জোরকে হাতিয়ার করে মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে বিষ্ণু। তার মায়ের কথায়, ছেলে সারাদিন ঘরেই থাকত। নিজের মত করেই পড়াশোনা করত। এই প্রসঙ্গে তার মা আরও জানান, “ও পাস করবে সেটা জানতাম তবে এত ভাল ফলাফল করবে সেটা আশা করিনি। আমাদের খুবই ভাল লাগছে ও যতটা পড়তে চায় আমরা পড়ানোর চেষ্টা করব।”

জানা গিয়েছে, মোট তিনজন গৃহশিক্ষক ছিল বিষ্ণুর। সারাদিন ঘরে বই নিয়েই থাকত সে। অবসরে টিভির পর্দায় চোখ রাখত কখনও কখনও। নিজের মনের জোরে ছেলে এত ভাল ফল করায় কার্যত আপ্লুত তার মা বাবা। বিষ্ণুর বাবা তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত।তার মাও বাড়ির কাজ সামলে হাত লাগান সেই কাজে। আগামী দিনেও বিষ্ণু তার পড়াশোনা চালিয়ে যাবে বলেই জানিয়েছে তার বাবা।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী