Tag Archives: Cottage Industry

Cottage Industry: কয়েক দশকের কুটির শিল্প, ঘরে ঘরে এটা বানিয়েই অন্নসংস্থান করে এই গ্রাম

বনোয়ারীলাল চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমান: বেশ কয়েক দশক ধরে মূর্তি তৈরি পেশা, বর্ধমান শহরের মিরছোবা পালপাড়ার বেশ কয়েকটি পরিবারের। পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের এই শিল্পীরা মূলত মূর্তি তৈরি করেই তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করেন। মূর্তি তৈরি তাঁদের রুজি রুটির একমাত্র উপায়। বর্ধমান শহরের মিরছোবা পাল পাড়া এলাকায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বেশ কয়েকটি বাড়িতে চলছে মূর্তি তৈরির কাজ। এছাড়াও বাড়ির বাইরে মূর্তি সাজিয়ে রাখার দৃশ্যও চোখে পড়বে। লক্ষ্মী, গণেশ, বিশ্বকর্মা, কালী-সহ আরও বিভিন্ন ধরনের মূর্তি তৈরি করে থাকেন এখানকার শিল্পীরা। শিল্পীদের কথায় বছরের প্রায় সবসময়ই বর্ধমানের এই এলাকায় মূর্তি তৈরির কাজ হয়।

এই প্রসঙ্গে শিল্পী গৌতম পাল বলেন, ‘‘বাবা – দাদুর আমল থেকে এই কাজ হয়ে আসছে। আমাদের এখন মাটি আসছে ক্যানিং থেকে। তার পর সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে আমরা মূর্তি তৈরি করে রং করে সেগুলো বিক্রি করি। এটাই আমাদের উপার্জনের একমাত্র রাস্তা। বিভিন্ন ধরনের মূর্তি আমাদের এখানে তৈরি হয়।” সাধারণত বিভিন্ন পুজো, মেলায় ছোট ছোট ঠাকুরের মূর্তি বিক্রি হতে দেখা যায়। ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য ছোট্ট ঠাকুরের মূর্তির ভাল চাহিদা রয়েছে। আর সেই ছোট ঠাকুরের মূর্তিই তৈরি হয় বর্ধমানের এই এলাকায়। ছাঁচে তৈরি করা এই মূর্তি শিল্পীদের হাতের কারুকার্যে এক নতুন রূপে সেজে ওঠে। তারপর সেই মূর্তি প্যাকিং হয়ে বিক্রির জন্য বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি দেয়।

আরও পড়ুন : ট্রেন লেট হলেও চিন্তা নেই! নামমাত্র খরচে বাসেই আসুন বেলদা থেকে কলকাতা

বর্ধমান, আরামবাগ, দুর্গাপুর, তারকেশ্বর, ইলামবাজার, আসানসোল-সহ আরও বিভিন্ন জায়গায় এই মূর্তি পাঠানো হয়। তবে শুধু পুরুষরা নয়, মিরছোবা পাল পাড়ার মহিলারাও এই মূর্তি তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সংসার সামলানোর পরেও গৃহবধূরা মূর্তি তৈরির কাজ করেন। এই প্রসঙ্গে এক মহিলা শিল্পী তারারানি পাল জানিয়েছেন, “স্বামীদের সাহায্যের জন্য আমরাও এই কাজ করি। ৭০/৮০ বছর ধরে আমাদের এখানে মূর্তি তৈরির কাজ হয়ে আসছে। সংসারের কাজ সামলে তারপর আমরা কাজ করি। মূর্তি তৈরি, রং করা বিভিন্ন কাজ আমাদের করতে হয়। সারাবছর কমবেশি এই কাজ হয়।”

শিল্পীদের কথায় এই কাজ তাঁরা তাদের বাবা , দাদুদের কাছে শিখেছেন। এখন প্রায় শতাব্দী প্রাচীন এই শিল্প। আধুনিকতার যুগে আজও নিজের জায়গা ধরে রেখেছে, বর্ধমান শহরের মিরছোবা পাল পাড়া এলাকার শিল্পীদের তৈরি ছোট মাটির মূর্তি। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০/৯০০ টাকা দামের মূর্তিও পাওয়া যায় বর্ধমানের এই জায়গায়।

Lok Sabha Election 2024: দিন চলে যায়, ১০০ বছরের পুরনো শিল্পের শিল্পীদের কথা ভাবে না কেউ

পূর্ব বর্ধমান: শিল্পীদের কী কোনও মর্যাদা নেই ?\ আক্ষেপের সঙ্গে এমনই প্রশ্ন করলেন তাঁরা। প্রায় ১০০ বছরের পুরানো শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এই গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু শিল্প ১০০ বছরের পুরানো হলেও আজও সেই অর্থে মেলেনি প্রশাসনিক সহায়তা, এমনটাই অভিযোগ। কাটোয়া-১ ব্লকের পণ্ডিত পাড়ায় রয়েছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন শিল্পী, যারা দীর্ঘদিন ধরে কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

এই গ্রামের পণ্ডিত পাড়ার পুরুষ এবং মহিলা সকলেই কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মূলত পণ্ডিত পাড়ার স্থানীয়রা বাঁশ এবং কঞ্চির সাহায্যে তৈরি করেন বড় মাপের ঝুড়ি, ছোট্ট ঝাঁঝুড়ি, কুলো প্রভৃতি জিনিসপত্র। এছাড়াও তাঁরা তালপাতার আসন, ছাতা প্রভৃতি জিনিসও প্রস্তুত করে থাকেন। তবে প্রায় ১০০ বছর এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আজ অব্দি কোনও প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা মেলেনি।

আর‌ও পড়ুন: ভোটের রেশ কাটতে না কাটতেই বাইসনের আতঙ্ক, গুঁতোয় জখম একের পর এক গ্রামবাসী

সামনেই লোকসভা ভোট , সকলের মত এই শিল্পীরাও ভোট দেবেন। তবে ভোটের আগে কী চাইছেন তাঁরা? এই প্রসঙ্গে ওই কুটির শিল্পীরা জানান, যখন ভোট আসে অনেকে বলেন তোমাদের সাহায্য করব। কিন্তু কী সাহায্য করবেন শুধুমাত্র তাঁরাই জানেন। আজ পর্যন্ত কোনও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়নি। এই তীব্র গরমেও তাঁদের জিনিস বিক্রি করতে বাইরে বেরোতে হয়। বিক্রি না হলে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। বর্ষাকাল এলেই চরম সমস্যায় পড়তে হয়। এর জন্য শিল্পীরা ওয়ার্কিং শেডের আবেদনও জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। কিন্তু তার কোন‌ও সুরাহা হয়নি।

এই প্রসঙ্গে কাটোয়া-১ ব্লকের বিডিও ইন্দ্রজিৎ মারিক জানান , খুব দ্রুত এই শিল্পীদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করা হবে।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী