হুগলি: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য ব্যাপী। আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন তারপরেই আলোর শহর চন্দননগর সেজে উঠবে তার সব থেকে বড় উৎসবে। সর্ববৃহৎ উৎসব যাকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ দেবী হৈমন্তিকা কার সর্ববৃহৎ প্রতিমা চন্দননগরের যে পূজা উদ্যোক্তারা করে আসছেন তা পরিচিত ‘রানি মা’ রূপে। চন্দননগর শিব মন্দির তেমাথা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো সবাই দেখতে ভিড় করেন রানি মায়ের অপরূপ রূপের শোভা দেখার জন্য।
বলা হয় চন্দননগরের সবথেকে বড় ঠাকুর হলেও রানিমা। উচ্চতায় প্রায় ৩৫ ফুট এই প্রতিমা। তবে ৮০ বছরের পুরাতন এই পুজো কিভাবে রানী মা নাম পেল তার পেছনেও রয়েছে এক কথিত কাহিনী। জনশ্রুতি রয়েছে, এই পুজো শুরু হয়েছিল পরাধীন ভারতের সময়কালে। অন্যদিকে সেই সময় চন্দননগরের উপনিবেশ গড়েছিল ফরাসিরা। তৎকালীন সময়ে চন্দননগরের সমস্ত প্রতিমা হতো সাদা ডাকের সাজের। কিন্তু একমাত্র তেমাথা শিব মন্দিরের পুজোয় ঠাকুরকে সাজানো হতো একেবারে রাজরানীর বেশে। সোনালী কাজের ঠাকুরের সাজের জন্য একেবারে রাজরানীর রূপে দেখতে লাগতো প্রতিমাকে। সেই থেকেই প্রচলিত হয়েছে রাণী মা নামটি। তারপর থেকেই প্রতিবছর বহু সংখ্যক মানুষের মূর্তি রাখার জন্য।
এ বিষয়ে পুজো উদ্যোক্তারা জানান, চন্দননগরের সবথেকে বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি হয় তাদের। লক্ষ্মী পুজো থেকে শুরু হয়েছে সেই প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা এত বৃহৎ আকৃতির হয় যে শুধু খড় মাটি নয় সঙ্গে লোহার স্ট্রাকচারও দিতে হয় প্রতিমা তৈরির জন্য। প্রায় ৩৫ মণ খড় ও ১০০০ কেজি, মাটি দিয়ে তৈরি হয় তাদের প্রতিমা। সুবিশাল উঁচু এই প্রতিমাকে দেখতে গেলে মাথা উঁচু করে দেখতে হয়। প্রতি বছরের মতন রীতিনীতি মেনে পুজো হয়ে আসছে শিব মন্দির তলাতে মাথার জগদ্ধাত্রী পুজো। পাশেই রয়েছে বুড়ো শিবের মন্দির, জগদ্ধাত্রী পুজোর আগে তারা শিবের আরাধনা করেন। তারপরে পুজো হয় চন্দননগরের রানি মায়ের।
হুগলি:হুগলির পৌরনিগম শহর চন্দননগর প্রস্তুতি নিচ্ছে তার মেগা ফেস্টিভালের। গঙ্গা তীরবর্তী এককালের ফরাসডাঙ্গা সেজে উঠছে দেবী হৈমন্তীকার আরাধনায়। শুধু জেলা নয় জেলার বাইরের গোটা রাজ্য ব্যাপী মানুষ তাকিয়ে রয়েছে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর দিকে। সেই মতো পুজো উদ্যোক্তারাও এই মুহূর্তে চালাচ্ছেন জোর কদমের কাজ। চন্দননগরের আলোয় শুধু জগৎ বিখ্যাত নয় জগদ্ধাত্রী পুজো নাম ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বে।
চন্দননগরের অন্যতম ঐতিহ্য হলএখানকার জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তা তৈরি হয় সমস্ত পুজো মণ্ডপের ভিতরেই। আকাশ ছোঁয়া উচু উচু প্রতিমা, সেই সমস্ত প্রতিমা তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই চলছে মণ্ডপগুলিতে। বেশিরভাগ প্রতিমার খড় বাধা থেকে শুরু করে প্রতিমার মা মাটি লাগানো সেইসব পর্যায়ের কাজ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য পুজোতে পটুয়া পাড়া থেকে ঠাকুর মণ্ডপে এলেও চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় তার ব্যতিক্রম। এখানে সমস্ত প্রতিমা তা তৈরি হয় মণ্ডপের মধ্যেই। যেখানে মৃৎশিল্পীরা নিজেদের গোলা ছেড়ে মন্ডপের মধ্যে এসে প্রতিমা তৈরি করেন।
এ বিষয়ে চন্দননগরের বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা জানান, তাদের প্রতিমা এতটাই উঁচু এবং সুবিশাল হয় যে সেখানে বাইরে থেকে ঠাকুর নিয়ে এসে মন্ডপের মধ্যে প্রবেশ করানো তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সেই কারণেই মন্ডপের ভেতরেই আগে থেকে ঠাকুর তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে এই ঠাকুর তৈরির সঙ্গে সঙ্গে এলাকাবাসীর মনেও যে পুজোর আনন্দেরআমেজ আসতে শুরু করে দেয়। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে চন্দননগর প্রস্তুতি নিচ্ছে তার মেগা ফেস্টিভ্যালের। আর মাত্র হাতে কয়েকটা দিন তারপরেই আলোর শহর চন্দননগর মেতে উঠবে দেবী হৈমন্তীকার আরাধনায়।