উত্তর দিনাজপুর: আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই জামাইষষ্ঠী। তবে এই দিন শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার আগে জামাইরা একটু হলেও বেশ চিন্তিত থাকেন। কারণ শ্বশুরবাড়িতে তো আর খালি হাতে যাওয়া যায় না। ফলে শাশুড়িকে উপহার দেওয়ার একটা বিষয় থেকেই যায়। কিন্তু কী উপহার দেবেন শত চিন্তা করেও অনেকেই সেটা বুঝে উঠতে পারেন না।
এবার জামাই ষষ্ঠীতে শাশুড়ির জন্য কী উপহার নিয়ে যাবেন তার দুর্দান্ত সমাধান এসে গিয়েছে। আজকের দিনেহাতে সময় কম। এদিকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শাশুড়িদের সাজসজ্জাতেও পরিবর্তন এসেছে। তাই এই সময় শাশুড়ির জন্য উপহার হিসেবে বেছে নিতে পারেন ইউনিক জুয়েলারি সেট। শাড়ি কিংবা সালোয়ারের সঙ্গে দিতে পারেন নতুনত্বের এই টেরাকোটার জুয়েলারি।
সময় বদলেছে। শাশুড়িরা এখন রীতিমতো আধুনিক ও স্টাইলিশ জিনিসপত্র পরেন। শুধু শাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকেন না বর্তমানের শাশুড়িরা। কেউ পরেন সালোয়ার কামিজ, তো কেউ জিন্স। তাই উপহার হিসেবে শাশুড়ির জন্য আপনাকেও এমন জুয়েলারি বা গয়না বেছে নিতে হবে যা সমস্ত পোশাকের সঙ্গে মানানসই হয়। আর এইরকম একটি জুয়েলারির সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ হাট পাড়ারর টেরাকোটা শিল্পীরা।
টেরাকোটার শিল্পীদের হাতেই তৈরি হচ্ছে আধুনিক ডিজাইনের পোড়ামাটির গয়না। এই টেরাকোটার জুয়েলারি বেশ পকেট ফ্রেন্ডলি। ৫০ টাকা থেকে এর দাম শুরু। আপনি পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ধরনের মাটির কারুকার্য করা রংবেরঙের এই জুয়েলারি। এই প্রসঙ্গে এলাকার এক টেরাকোটা শিল্পী জানান, সোনার দাম আকাশছোঁয়া। সেখানে এবারের জামাইষষ্ঠীতে শাশুড়ির উপহার হিসেবে জামাইদের কাছে মুশকিল আসান হতে পারে টেরাকোটার এই গয়না। অনেকেই এই গয়না কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
‘জামাইষষ্ঠী’ শুনলেই প্রথমে কী মাথায় আসে বলুন তো? মিষ্টির হাঁড়ি হাতে ফিনফিনে সাদা মসলিনের পাঞ্জাবি আর মালকোচা মারা ধুতিতে শ্বশুরঘর আলো করা জামাই বাবাজি। পঞ্চব্যঞ্জনে সাজনো জামাইয়ের পাত। আম-কাঁঠাল-লিচু, ইলিশের পেটি কিংবা কচি পাঠাঁর মাংস সহযোগে ভুরিভোজ ৷ কী তাই তো?তাছাড়া জামাইকে পাখা দিয়ে হাওয়া আর শান্তির জলের ছিটা দেওয়া, মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদ বলে জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো পরিয়ে দেওয়া- এসব তো আছেই।বড় কাঁসার থালার পাশে পাঁচমেশালি শুক্তো থেকে শুরু করে পরমান্ন পর্যন্ত থরে থরে বাটি সাজিয়ে, হাত পাখা হাতে শাশুড়ি আর ভোজনরত জামাইয়ের ছবি তো চিরাচরিত।শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিকে জামাই ষষ্ঠী হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটিকে অনেকে অরণ্য ষষ্ঠীও বলে থাকেন। এই বছর আগামী ১২ জুন ২০২৪ বুধবার জামাই ষষ্ঠী পালিত হবে। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে জামাই ষষ্ঠী পড়েছে ২৯ জৈষ্ঠ্য ১৪৩১।কাঁঠালপাতার উপর বিছিয়ে রাখা ৫ রকম ফল, পান সুপুরি, ধান দূর্বা, করমচা ফল, তালপাতার পাখার মতো সহজ উপকরণেই সাজানো হয় অরণ্যষষ্ঠীর ডালা৷ মা ষষ্ঠীর থানে পুজো দিয়ে আসার পর জামাইয়ের হাতে তেলহলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেন শাশুড়ি মা৷ তাঁর মঙ্গলকামনায় তেলহলুদের ফোঁটা দিয়ে তালপাতার পাখা ও ভেজা দূর্বাঘাসের বাতাস করা হয়৷জামাইয়ের মাথায় ধান দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন শাশুড়ি মা৷ পরে থাকে ভোজনের আয়োজন৷ সাধারণত মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনই করা হয়৷
বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। ছোট থেকে বড়, যেরকম উৎসবই হোক না কেন, পাত পেড়ে অতিথিকে বসিয়ে খাওয়ানোটা সবেতেই দেখা যায়। আর কয়েক মাস বাদেই তেমন এক উৎসব আসছে। এক দিনের উৎসব হলেও খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করতে অনেক বাঙালি মা-ই দু’তিনদিন ব্যয় করেন।জামাইষষ্ঠী। বাড়িতে মেয়ে আর জামাইকে আপ্যায়ণ করে মায়েরা রকমারি খাবার খাওয়ান। বহু প্রাচীনকাল থেকে এই নিয়ম রীতি পালন করা হচ্ছে। বিবাহিত মেয়েদের বাড়িতে তাঁদের স্বামীকে সম্মান জানানোর জন্য উদযাপন করা হয়।বাংলা পঞ্জিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এ বছর কত তারিখে পড়ছে জানেন? ব্যবস্থাপনা করার জন্য আগে থেকেই তারিখ জেনে নেওয়া ভাল। এটি প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয়।জামাইষষ্ঠীর দিন ষষ্ঠী দেবীর পুজো করা হয়। জামাইদের আদর-যত্ন করা হয়। মাথায় ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়। ফল-মিষ্টি খাইয়ে কিছু উপহার দেওয়া হয় মেয়ের স্বামীদের।তারপরেই শুরু হয় এলাহী খানাপিনা। বাঙালিদের তেলে-ঝোলে মাছ, মাংস, ডিম, রকমারি সব্জি, আরও কত কী খাওয়ানো হয়। জামাইদের মুখে এক গ্রাস তুলে দেন শাশুড়ি-শ্বশুররা।এবার জেনে নিন ২০২৪ সালে জামাইষষ্ঠী কত তারিখে পড়েছে? এই বছর জুন মাসের ১২ তারিখ এই দিনটি উদযাপিত হবে ঘরে ঘরে। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৪৩১ সালের জৈষ্ঠ মাসের ২৯ তারিখ।