নয়াদিল্লি: চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফা ভোটগ্রহণ পর্বে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশে ভোট পড়ল ৩৯.৯২ শতাংশ৷ তার মধ্যে ভোট দানের নিরিখে এখনও পর্যন্ত শীর্ষস্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ৷ দুপুর ১টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ভোট পড়েছে ৪৯.২৭ শতাংশ৷
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে ভোটগ্রহণ হচ্ছে ৪টি কেন্দ্রে৷ এর মধ্যে মালদহ উত্তরে ভোট পড়েছে ৪৭.৮৯ শতাংশ, মালদহ দক্ষিণে ৪৮.৬৫ শতাংশ, জঙ্গিপুরে ৪৯.৯১ শতাংশ এবং মুর্শিদাবাদে ৫০.৫৮ শতাংশ৷ ভগবানগোলার বিধানসভা উপনির্বাচনে এখনও পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৪৬.৪০ শতাংশ৷
দেশের পরিসংখ্যানের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গকে ভোটদানের নিরিখে প্রায় টেক্কা দিচ্ছে গোয়া৷ গোয়ায় দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৪৯.০৪ শতাংশ৷ এছাড়া, ছত্তিশগড়, অসম, মধ্যপ্রদেশেও ভোট পড়ছে ভালই৷
LIVE : লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ তৃতীয় দফা ভোটগ্রহণ
ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটছে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে৷ ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। সাধারণ ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিতে প্রকাশ্য রাস্তায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ফাটায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক আতঙ্ক ও চাঞ্চল্য ছড়ায় উত্তর মালদহের রতুয়া-১নং ব্লকের চাঁদমণি-২নং অঞ্চলের বাটনা এলাকায়।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের থানারপাড়া থানা এলাকার শুভরাজপুরে তৃণমূলের নেতারা ভয় দেখিয়ে ভোট দান করতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয় বলে দাবি ভোটারদের। মারধর করে এলাকার লোকজনকে ভোটে বাধাদানের অভিযোগ।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই তৃতীয় দফায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৪৪ নম্বর বুথে গিয়ে তৃণমূল ব্লক সভাপতির সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ। অভিযোগ উঠেছে, রঘুনাথগঞ্জ ব্লক সভাপতি গৌতম ঘোষের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এবং পরে তার উপর চড়াও হয়ে এলোপাথাড়িভাবে মারধর করার অভিযোগে ওঠে। সেই কারণেই রঘুনাথগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ।
আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্রকে উৎসবের মতো পালন করুন,’ সাত সকালে অমিত শাহকে সঙ্গে নিয়েই গান্ধিনগরে ভোট দিলেন মোদি
বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষের অভিযোগের ATR বা অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট তলব করল কমিশন। আজ বিকেলের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে জেলা নির্বাচনী আধিকারিককে। ঘটনার তদন্ত করতে যাবে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হবে অভিযোগের সত্যতা।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কমিশনের কাছে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ১৭৪টি অভিযোগ৷ যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে সিপিএমের তরফে৷ সিপিএমের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে মোট ১৩৪টি৷
এর আগে রানিনগরের ৩৬ নম্বর বুথের সিপিএমের এজেন্ট সম্পর্কিত অভিযোগ নিয়ে কমিশনের যায় রিপোর্ট। মকপোলিং-এর সময় দুজন এজেন্ট ঢুকতে চান। সেক্টর অফিসার একজনকে রেখে বাকি একজনকে বের করে দেন। নিয়ম অনুযায়ী বুথের মধ্যে একজনকেই রাখতে দেওয়া হয়। আপাতত, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ বলে জানিয়েছে কমিশন।
রানিনগরের মরিচায় বোম ফাটানোর অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকায় ছড়ায় উত্তেজনা। পরিস্থিতি সামলাতে এলাকায় পৌঁছয় কুইক রেসপন্স টিম৷
জঙ্গিপুর লোকসভাকেন্দ্রেও ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির প্রার্থীর সঙ্গে বাক বিতন্ডা জড়িয়ে পড়েন রঘুনাথগঞ্জের তৃণমূল ব্লক সভাপতি গৌতম ঘোষ। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মীরগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৪ নম্বর বুথে বিজেপির প্রার্থী সঙ্গে ব্লক তৃণমূল সভাপতি গৌতম ঘোষের বাক বিতন্ডা তৈরি হয়।
মুর্শিদাবাদ লোকসভার অন্তর্গত আমডহরা এলাকায় তৃণমূল দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের। আহত অবস্থায় তাঁরা চিকিৎসাধীন লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে। জানা গিয়েছে, এসরাফিল সেখ মঙ্গলবার সকাল সকাল ভোট দিতে যাচ্ছিলেন আর সেই সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তিরের বর্গা ও বাঁশ দিয়ে মারধর করে বিরোধী দলের সমর্থকদের।
এই কারণেই এসরাফিল শেখ আক্রান্ত হন, হাত ভেঙে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এদিন সকাল পৌনে আটটা নাগাদ গান্ধিনগরের একটি স্কুলে ভোটদান করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও৷ ওই কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ এদিন মোদির ভোটদানের সময় উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহও৷ তিনিও সকাল সকাল সপরিবারে ভোট দেন ওই একই বুথে৷
লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে যে রাজ্যগুলিতে ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে অসম (৪টি আসন), বিহার (৫টি আসন), ছত্তিশগড় (৭টি আসন), গোয়া (২টি আসন), গুজরাত (২৬টি আসন), কর্ণাটক (১৪টি আসন), মধ্যপ্রদেশ (৮টি আসন), মহারাষ্ট্র (১১টি আসন), উত্তরপ্রদেশ (১০টি আসন), পশ্চিমবঙ্গ (৪টি আসন), জম্মু ও কাশ্মীর (১টি আসন), দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ (২টি আসন)।