সৌভিক রায়, বীরভূম: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লাল মাটি শহর বোলপুর শান্তিনিকেতন।তবে এই বোলপুর শান্তিনিকেতন তো অনেকবার গিয়েছেন।এবার বোলপুর শান্তিনিকেতন গেলে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে পৌঁছে যাবেন আপনি সুরুল জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়ি হবে আপনার ভ্রমণের সেরা ডেস্টিনেশন।এই জমিদার বাড়ি যাওয়ার আগে জানুন এর ইতিহাস।প্রসঙ্গত অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি।বর্ধমানের ছোট নীলপুরের ঘোষবাড়ির ছেলে ভরতচন্দ্র তাঁর স্ত্রী বিমলাদেবীকে নিয়ে চলে আসেন সুরুলে। সন্তানলাভের আশায় গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে আশ্রয় নেন দু’জনে। সুরুল ছিল বৈষ্ণব ধর্মগুরু বাসুদেবের শ্রীপাট। গুরুদেবের নির্দেশেই ভরতচন্দ্র থেকে যান সুরুলে। আর বর্ধমানে ফিরে যাননি।
এরপরেই তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি ও তাঁর ছেলেরা সেই সময়ে ফরাসি ও ইংরেজ কুঠিয়ালদের সঙ্গে ব্যবসা করে পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি করেন। তাঁর আমলেই নির্মিত হয় পঞ্চরত্ন মন্দির। পরবর্তীকালে অবশ্য সম্পত্তি ও প্রতিপত্তির দৌড়ে তাঁকে টেক্কা দিয়েছিলেন নাতি শ্রীনিবাস। পাঁচ খিলানের একটি ঠাকুরদালান নির্মাণ করিয়েছিলেন তিনি। সে যুগে খরচ পড়েছিল আনুমানিক প্রায় আঠারো হাজার টাকা!
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, সুরুলের স্থানীয় বাণিজ্যকুঠিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেসিডেন্ট জন চিপ সাহেবের সঙ্গে ব্যবসা করে সম্পদ বৃদ্ধি করেছিল সরকার পরিবার। জাহাজের পাল তৈরি হত যে কাপড় দিয়ে, সেই কাপড়, নীল, চিনির ব্যবসা ছিল তাঁদের। কৃষ্ণহরির মৃত্যুর পরে তাঁর তিন ছেলে যাদবেন্দ্র, মাধবেন্দ্র ও কালীচরণের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা এতটাই তুঙ্গে ওঠে যে, জমিদারি ভাগ হয়ে গিয়েছিল। যাদবেন্দ্র ও কালীচরণ একসঙ্গে থাকেন আদি বাড়িতে। লোকমুখে তাঁরা ‘বড় তরফ’। পাশেই বাড়ি করে আলাদা হয়ে যান মাধবেন্দ্র। তিনি ‘ছোট তরফ’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
তবে এবার বোলপুর শান্তিনিকেতন এলে অবশ্যই ঘুরে আসুন এই জমিদার বাড়ি থেকে। প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে নিজস্বী তোলার এক ভালো জায়গা এই জমিদার বাড়ি।